রাজশাহীর পদ্মায় ধুম কাছিম

ধুম কাছিম অনেক বড় আকৃতির হয়। ১০ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এগুলো মূলত নিশাচর।

রাজশাহীর পদ্মার ১০ নম্বর চরে ২৭ অক্টোবর দেখা মেলে ধুম কাছিমের
ছবি: হাসনাত রণী

বড় নদীর তলদেশে বাস। মরা প্রাণী খেয়ে নদীর পানি পরিষ্কার করে। তাই জেলেদের জালে ধরা না পড়লে প্রকৃতিতে এর দেখা মেলা ভার। এই প্রাণীর নাম ‘ধুম কাছিম’। ২৭ অক্টোবর এই ধুম কাছিমের দেখা মিলেছে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে। একমুহূর্তের জন্য সেটির দেখা পেয়েছেন রাজশাহীর তিনজন পাখিপ্রেমী। তাঁরা সেটিকে ক্যামেরাবন্দীও করেছেন। সরীসৃপ নিয়ে কাজ করায় অভিজ্ঞ আদনান আজাদ আসিফ ছবি দেখে সেটির পরিচয় নিশ্চিত করেন।

সাধারণত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে শীতকালীন পাখি দেখার মৌসুম শুরু হয়, চলে সেই এপ্রিল-মে পর্যন্ত। তবে অক্টোবরের শুরু থেকেই উত্তরের পাখিরা দক্ষিণে পরিযায়ন শুরু করে, মাঝপথে রাজশাহীর পদ্মায় একটু যাত্রাবিরতি দেয়। আর পাখিপ্রেমীরাও এই সময়ের অপেক্ষায় থাকেন।

একটু চোখের দেখা কিংবা ছবিতে ধরে রাখার প্রয়াসে ছুটির দিনের অলসতা বিসর্জন দিয়ে পাখির দর্শন পেতে বিস্তীর্ণ পদ্মার এমাথা–ওমাথা ঘুরে খুঁজে ফেরেন। এ বছর বর্ষা বিদায় নিয়েছে একটু দেরিতে, এ কারণে পদ্মায় এখনো অনেক পানি। বড় চরগুলো কেবল জাগছে। আর কিছুটা পানি নামলেই ছোট চরগুলোও মাথা তুলবে আর সেই বালুচরে বসার জায়গা পাবে পাখিরা।

২০ অক্টোবর পদ্মায় নামেন পাখি ও বন্য প্রাণী আলোকচিত্রী হাসনাত রণী। সঙ্গে ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পাখিবিশেষজ্ঞ সালেহ রেজা ও দন্ত চিকিৎসক নূর-এ-সাউদ। তাঁরা বেশ কিছু বাবু বাটান ও উদয়ি বাবু বাটানের দেখা পান। দেখা মেলে অতি বিরল কালা-পেট পানচিলের। আবারও বিরল পাখি দেখতে পাবেন, এই আশায় তাঁরা ২৭ অক্টোবর পদ্মা নদীতে যান।

রাজশাহী নগরের মির্জাপুর বালুমহালের উল্টো দিকে পদ্মার ১০ নম্বর চরের সামনের চওড়া নদীতে তখন তাঁদের নৌকা। হাসনাত রণীর চোখে পড়ল একঝাঁক জল-কইতর। অভ্যাসবশত ছবি তুলছেন। এই জল-কইতর যেখানে বসে আছে, তার কিছুটা পেছনে তাদের চোখ যায়। দেখেন, একটা কানিবক মতো কিছু। দু–চারটে শট নিয়ে রাখেন। এরপর আবার সেই জল-কইতরের ছবি নিতে নৌকা একটু এগোতে বলেন; কিন্তু মাঝি বলে দিলেন—চরায় ঠেকে গেছে, নৌকা আর এগোবে না। কী আর করা! এ সময় সালেহ রেজা বেশ জোরে বলে ওঠেন, ‘আরে এটা তো কাছিম মনে হচ্ছে!’

তারপর তিনজনই পরিষ্কার দেখতে পান কাছিমটাকে। বেশ দূরে হলেও টেলিলেন্সের কারণে ছবি নিতেও সক্ষম হন তাঁরা। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছবি পাঠানো হয় আদনান আজাদের কাছে। তিনি ছবি দেখে নিশ্চিত করেন, এটা ধুম কাছিম। ইংরেজিতে এটির নাম ইন্ডিয়ান পিকক সফট–শেল টার্টল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nilssonia hurum. যদিও মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের কারণে এই কাছিম দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারপরও আইইউসিএনের রেড ডেটা বুক অনুযায়ী ওরা এদেশে সচরাচর দৃশ্যমান ও স্বল্প ঝুঁকিসম্পন্ন। কারণ, এরা দেশব্যাপী বিস্তৃত। বাংলাদেশ ছাড়া মিয়ানমার ও ভারতে দেখা যায়।

ধুম কাছিম অনেক বড় আকৃতির হয়। ১০ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এগুলো মূলত নিশাচর। ছোট মাছ, শামুক, গুগলি, শেওলা এই কাছিমের খাবার। এগুলো সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। যদিও এখনো এদেশে এরা সংখ্যায় প্রচুর, কিন্তু পানির নিচে থাকায় ও নিশাচর হওয়ায় প্রকৃতিতে সচরাচর তেমন একটা চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে জেলেদের জালে আটকা পড়লে দেখা যায়।

কিছুদিন গাইবান্ধায় একটি ধরা পড়েছিল। পরে বন বিভাগ সেটি উদ্ধার করে। সরীসৃপ নিয়ে কাজ করায় অভিজ্ঞ আদনান আজাদ মুঠোফোনে বলেন, রাজশাহীতে যে কাছিমটি দেখা গেছে, ছবি দেখে তিনিই তার পরিচয় ধুম কাছিম বলে নিশ্চিত করেছেন।