‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২২’ অর্জন, দূষণমুক্ত বাংলাদেশের প্রত্যাশায় কনকর্ড গ্রুপ

পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২’ উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২২’ অর্জন করায় কনকর্ড গ্রুপকে অভিনন্দন

জেনে অবাক হবেন, ঢাকার বায়ুদূষণ না থাকলে আপনার গড় আয়ুর চেয়ে প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতেন!

চমকপ্রদ এ বিষয় আবিষ্কার করেছে শিকাগোর ইউনিভার্সিটি অব অ্যানার্জি পলিসি ইনস্টিটিউিটের ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারা এ গবেষণামূলক তথ্য প্রকাশ করেছে।

গবেষকদের মতে, পরিবেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হয় বায়ুদূষণের মাধ্যমে। আর আমরা জানি, বিশ্বে বায়ুদূষণে রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা। শুধু ঢাকাই নয়, লাইফ ইনডেক্সের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটিতেই বায়ুদূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বেশি।

বায়ুতে সাধারণত ২১ শতাংশ অক্সিজেন, ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, দশমিক ৩১ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং নির্দিষ্ট অনুপাতে ওজোন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি থাকে। যদি কোনো কারণে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে অন্যান্য গ্যাসের ঘনত্ব বেড়ে যায় কিংবা বালুকণার হার বেড়ে যায়, তখন সেটি দূষিত হয়ে যায়। মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে মানুষ প্রতিনিয়ত অ্যাজমা (হাঁপানি), ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) ও ফুসফুসের ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস গাড়ি, শিল্পাঞ্চল, ইটভাটা ও নাগরিক বর্জ্য। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকাশিত মার্চ ২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণের ৫৮ শতাংশের উৎসই হলো ইটভাটা। সারা দেশে গত পাঁচ বছরে ইটভাটার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। দেশজুড়ে ইটভাটা তো ছড়িয়ে আছেই। শুধু ঢাকা জেলাতেই ইটভাটা আছে ৪৮৭টি। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, পরিবেশ বাঁচাতে নজর দিতে হবে নির্মাণসামগ্রী তৈরির এ উৎসের দিকে।

‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২২’ অর্জন করায় কনকর্ড গ্রুপকে অভিনন্দন

পরিবেশদূষণমুক্ত এই নির্মাণসামগ্রী তৈরিতে সচেতনভাবে কাজ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কনকর্ড গ্রুপ। ভবন নির্মাণে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী নির্মাণসামগ্রী তৈরিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। কনকর্ডই প্রথম ভবন নির্মাণে ইটের পরিবর্তে হলো ব্লকের ব্যবহার শুরু করে। বালু, সিমেন্ট ও নুড়ি পাথর দিয়ে এই হলো ব্লক তৈরি করা হয়। এটি তৈরি করতে খরচও হয় কম এবং এর ব্যবহারে নির্মাণ ব্যয় প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। কারণ, একটি ব্লক পাঁচটি পোড়া ইটের সমান।

১৯৯০-এর দশকে দেশে ব্লকের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেছিল হাউস অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই)। আর ১৯৯৮ সালে কনকর্ড গ্রুপ বাণিজ্যিকভাবে এই ব্লকের উৎপাদন শুরু করে। তারা নিজস্ব সব ভবন নির্মাণেই এই ব্লক ব্যবহার করছে। বর্তমানে কনকর্ড তিনটি কারখানায় হলো ব্লক তৈরি করছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তাদের কাছ থেকে হলো ব্লক ক্রয় করছে। বর্তমানে কনকর্ড ছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে ব্লক তৈরি করছে। সচেতনতা বাড়ছে সরকারি পর্যায়েও। ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে সরকারি নির্মাণে পোড়া ইটের পরিবর্তে শতভাগ হলো ব্লক বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী তৈরির অগ্রদূত কনকর্ডের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৩ সালে। স্বাধীনতার কিছু পরে জোর দেওয়া হয় পুনর্বাসনের কাজে। এস এম কামালউদ্দিন কনকর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। কনকর্ডের প্রথম কাজ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি সেতু পুনর্নির্মাণ। সেই থেকে কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের যাত্রা শুরু। বর্তমানে দেশের অন্যতম বড় নির্মাণপ্রতিষ্ঠান এটি।

ঢাকা শহরের সুউচ্চ ও সুন্দর ভবন বা স্থাপনা, যেমন মতিঝিলের ২০ তলা শিল্পব্যাংক ভবন, ২২ তলা জীবন বীমা ভবন, জনতা ব্যাংকের ২৪ তলা প্রধান কার্যালয় আশি ও নব্বইয়ের দশকের মধ্যে নির্মাণ করেছিল কনকর্ড। বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কার্যালয় ভবন, তিতাস গ্যাসের প্রধান কার্যালয়, টিঅ্যান্ডটি ভবন, বিমানবন্দরে ভিআইপি টার্মিনাল—এ রকম অসংখ্য ভবন ও স্থাপনা কনকর্ডের তৈরি। ১৯৯৮ সালের পর প্রায় ২০০টি প্রকল্প করেছে কনকর্ড। লেক সিটি কনকর্ড, ওয়েস্টিন হোটেল, ফ্যান্টাসি কিংডম, ফয়’স লেক এবং হাতিয়ার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আবাসন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে কনকর্ডের হলো ব্লক।

দূষণ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখার জন্য ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২২’ উপলক্ষে কনকর্ড অর্জন করেছে জাতীয় পরিবেশ পদক। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর হাত থেকে জাতীয় পরিবেশ পদক গ্রহণ করেন কনকর্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার কামাল। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জাতীয় পরিবেশ পদক বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একটি পুরস্কার। পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০০৯ সাল থেকে এ পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। পুরস্কারটি ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনটি, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তিনটিসহ মোট ছয় শাখায় প্রদান করা হয়।