দূষণ শুষে নেওয়া পদ্মফুল কেন হারিয়ে যাচ্ছে

  • পদ্ম বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের তুলনায় অনেক বেশি সক্ষম। এ ছাড়া এটি সিসা, তামা, ফ্লোরাইড, কিংবা নাইট্রেটের মতো ভারী ধাতু শোধন করারও ক্ষমতা রাখে।

  • খাবার, ওষুধ এবং কসমেটিক–সামগ্রী হিসেবে পদ্মের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পদ্মবীজ, ফুলের নির্যাস, কন্দ ও পাতার সম্মিলিত বৈশ্বিক বাজার এখন ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

  • প্রকৃতি ও অর্থনীতির জন্য মূল্যবান হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে মাছ চাষের সুবিধার্থে এবং জলাভূমি সংকুচিত হওয়ায় পদ্মের প্রতিবেশ বা আবাসস্থল দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে একটি জলাশয়ে ফুটেছে পদ্মছবি: বিপিআরডি

পদ্ম জলাভূমিতে শোভা ছড়ায়, এর ফুল মধু বিকোয়, কিছু খাদ্যমূল্যও আছে। তবে বিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিদ ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুগুণে সমৃদ্ধ পদ্ম বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদের একটি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের তুলনায় পদ্ম অনেক বেশি সক্ষম।

শুধু কার্বন শোষণ নয়, সিসা, তামা, ফ্লোরাইড কিংবা নাইট্রেটের মতো ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতাও রাখে পদ্ম। পানির মান কতটা ভালো হতে পারে, তার নির্ণায়ক পদ্ম। বৈশ্বিক নানা গবেষণায় দেখা গেছে, যে জলাশয়ে পদ্মের উপস্থিতি থাকে, সেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ভালো থাকে। খাবার, ওষুধ ও কসমেটিক–সামগ্রী হিসেবে পদ্মের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পদ্মের বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

কার্বনসহ ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতা রাখে পদ্ম। পানির মান নির্ণায়ক পদ্ম। এর বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় প্রেমিকা বরুনার জন্য ‘বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে’ ১০৮টা নীলপদ্ম আনার কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি আমরাও পদ্ম আর পদ্মবিলের খোঁজে বেরিয়েছিলাম। মাঝশরতের সকাল পেরিয়ে দুপুর। টাঙ্গাইলের নানা স্থানে পদ্মবিলের খ্যাতি আছে। একসময় কালিহাতীর বিলগুলোয় ‘পদ্ম’ ফুটত। আমাদের উদ্দেশ্য, পদ্মশোভিত বিল দেখা। তপ্ত রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়ালাম পাইকড়া বিল, চারাণ বিল, নকীল বিল, কুমার বিল, সিংগুলি বিলসহ আরও কত বিল। কোথাও পদ্মফুলের দেখা পাওয়া গেল না। কচুরিপানায় ভরা বিলগুলোর একটির নাম সাতবিল। একটি ছোট নৌকার মাঝি মজনু শাহ বলেন, এ বিলে আগে পদ্ম থাকলেও এখন নেই।

ঘুরতে ঘুরতে জানতে পারলাম, কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউনিয়নের ধানগড়া গ্রামের নান্দাই বিলে পদ্মফুল থাকতে পারে। কচুরিপানা আর হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ ভেদ করে মাঝ বিলে গিয়ে দেখলাম, পদ্মপাতা ভাসছে। কিন্তু ফুল খুব কম। নৌকাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিলে মাছে ছাষ অয়। আগে তো ম্যালা জায়গায় পদ্ম হইত। এহন এহানেই টিক্যা আছে। মাছের চাষ করতে গিয়্যা পদ্ম উডাইয়া ফেলে।’

আন্ধাশুরা বিলে ফুটে আছে পদ্ম। একসময় এ বিলে অনেক পদ্ম ফুটত। এখন তা কমে গেছে
ছবি: বিপিআরডি

পদ্ম ঘিরে শৈশবের স্মৃতির ভান্ডার খুলে ষাটোর্ধ্ব আজিজুল জানান পদ্মপাতার ভর্তা খাওয়ার কথা। এ ছাড়া পদ্মের চাক বা বীজ ছিল শিশুকালের মজার খাবার। কেউ কেউ পদ্ম মধু বিক্রি করতেন। বিলজুড়ে ফুটে থাকা রঙিন পদ্মের ছবিও তাঁর চোখে ভাসে। কিন্তু বিলের সে সুদিন নেই। অনেক খুঁজে পাওয়া যায় চার-পাঁচটি পদ্ম।

পরিবেশ, অর্থনীতির এই প্রাচীন বন্ধুর সংরক্ষণ ও এর ব্যবহার যখন বিশ্বজুড়ে বাড়ছে, তখন বাংলাদেশে নষ্ট হচ্ছে এর প্রতিবেশ বা আবাসস্থল। বিশ্বের নানা দেশে পদ্মের প্রসারে নতুন নতুন গবেষণা হলেও বাংলাদেশে তা একেবারেই নগণ্য। অথচ তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই সময়ে পদ্ম হতে পারত বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি অস্ত্র—এমনটাই মনে করেন খ্যাতনামা উদ্ভিদবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাখহরি সরকার।

পদ্মের পরিবেশগত গুরুত্ব

ভারী ধাতুসহ বিভিন্ন দূষণের হুমকির মুখে আছে জলজ পরিবেশ। শিল্পকারখানা, মনুষ্য বর্জ্যসহ নানা উৎসের মাধ্যমে এসব ধাতু জলজ পরিবেশে প্রবেশ করে। ফলে হ্রদ, পুকুর, খাল, বিল, নদীসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীবন ও বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে এসব ভারী ধাতুর দূষণ দূর করা অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে পদ্ম। জলজ প্রতিবেশের ওপর পদ্মের ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোনো গবেষণা না থাকলেও বিশ্বের নানা দেশে গবেষণা রয়েছে।

পানি শোধন প্রক্রিয়ায় পদ্মের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা হয়েছে ভারতের রাজস্থানের জয়পুরে। নগরের গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্যের কারণে পানিতে সৃষ্ট ভৌত রাসায়নিক দূষক এবং ভারী ধাতব পদার্থ কমাতে সাহায্য করে পদ্ম। পরিবেশবান্ধব এই প্রক্রিয়া পুকুর থেকে নাইট্রোজেন কমায় এবং নাইট্রোজেন ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জয়পুরের চাঁদলাই হ্রদ ও বরখেদা পুকুরে এই পরীক্ষা করা হয়। ‘রোল অব লোটাস ইন ফাইটোরিমেডিয়েশন অব হেভি মেটাল অ্যান্ড ওয়াটার কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি গত বছর (২০২৪) রেডভেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।

২০২২ ও ২০২৩ সালের তিনটি ভিন্ন ঋতুতে গবেষণায় নির্বাচিত পুকুর ও হ্রদের বর্জ্য পানি ব্যবহার করে পদ্মের মাধ্যমে ফাইটোরিমিডিয়েশন (উদ্ভিদের মাধ্যমে দূষক দূর করা) পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পদ্মের কারণে দূষিত পদার্থের মধ্যে টিএসএস (পানিতে অদ্রবনীয় কঠিন পদার্থ) ৫০ শতাংশ এবং রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (সিওডি) ৩৯ শতাংশ কমে যায়। পানির মান কতটুকু জলজ প্রতিবেশের জন্য সহনীয়, তার নির্ণায়ক হলো দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও)। যেকোনো পানিতে যদি ৫ মিলিমিটার ডিও না থাকে, তবে তা জলজ প্রাণীর জন্য সহনীয় নয়।

আন্ধাশুরা বিলের দক্ষিণ অংশের কিনারের দিকে ডিঙিনৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে পদ্ম ফুল তুলছিলেন বিল সংলগ্ন হোসেনপুর গ্রামের শ্যামল
ছবি: প্রথম আলো

এই গবেষণায় দেখা গেছে, পদ্ম থাকলে ডিও ৩৯ শতাংশ বেড়ে যায়। দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ কমে যায় ৩০ শতাংশ। পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি রোধ করে পদ্ম। এর মধ্যে সিসা কমায় ৩৩ শতাংশ, তামা ৩০ শতাংশ, ফ্লোরাইড ২২ শতাংশ এবং নাইট্রেট ২২ শতাংশ। পদ্মের কাণ্ড ও শিকড়ে এনজাইম ও মাইক্রোব থাকায় ভারী ধাতব পদার্থ জমা হয়, যা পানির তাপমাত্রা ও পানির মানকে (পিএইচ) প্রভাবিত করে। পদ্মের বিশাল শিকড় ও পাতা পানির ভৌত রাসায়নিক দূষক কমাতে পারে।

এক হেক্টর এলাকায় পদ্ম থাকলে সেখানে প্রতিবছর ২ দশমিক ৩ মেট্রিক টন কার্বন শোষণ হতে পারে। এ হার যেকোনো জলজ উদ্ভিদের তুলনায় বেশি বলা যায়। এই গবেষণা আমাদের এক নতুন দিকের অনুসন্ধান দেয়। আমাদের জলাভূমিতে এর বিস্তার ঘটানো গেলে প্রকৃতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনতে পারে
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞ এ কে এম সাইফুল ইসলাম

কার্বন নিঃসরণ ও বায়ুমণ্ডলে এর ব্যাপক উপস্থিতি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের পদ্ম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে চীন। দেশটির ইয়াংসিকিয়াং নদীতে পদ্মের মিথেন উৎপাদন নিয়ে এক গবেষণায় পদ্মের কার্বণ শোষণের ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘ইফেক্টস অব লোটাস অন দ্য মিথেন ইমিশন ইন লিটোরাল জোনস অব সাবট্রপিক্যাল লেক, চায়না’ শীর্ষক গবেষণাটি অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানে বলা হয়, পদ্ম সম্ভাব্য নিট কার্বন সিংক হিসেবে কাজ করতে পারে।

এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানিসম্পদ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞ এ কে এম সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক হেক্টর এলাকায় পদ্ম থাকলে সেখানে প্রতিবছর ২ দশমিক ৩ মেট্রিক টন কার্বন শোষণ হতে পারে। এ হার যেকোনো জলজ উদ্ভিদের তুলনায় বেশি বলা যায়। এই গবেষণা আমাদের এক নতুন দিকের অনুসন্ধান দেয়। আমাদের জলাভূমিতে এর বিস্তার ঘটানো গেলে প্রকৃতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনতে পারে।’

বাংলাদেশে পদ্মের হালচাল

বাংলাদেশের খাল-বিল-হাওর পদ্মের জন্মস্থান। কিন্তু প্রকৃতির জন্য মূল্যবান এই উদ্ভিদ দিন দিন হারাচ্ছে এর আবাসস্থল। সংকুচিত হয়ে পড়ছে জলাভূমি। সাসটেইনেবল ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সাময়িকীতে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘ডেল্টাইক ফ্লাডপ্লেইনস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড ইকোসিস্টেম ম্যানেজমেন্ট ইন গ্যাঞ্জেস-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা রিভার্স ডেলটা ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বাংলাদেশের জলাভূমির ক্ষতির একটি চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অঞ্চলে শুধু নদীর প্লাবনভূমিতে প্রায় ২১ লাখ হেক্টর জলাভূমি হারিয়ে গেছে। এর কারণ মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জল নিষ্কাশন ও সেচ উন্নয়ন।

বাংলাদেশে পদ্ম নিয়ে গবেষণা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম দ্য লোটাস: অ্যান ইনক্রিডেবল ওয়েলথ অব ওয়েটল্যান্ডস অব বাংলাদেশ নামের বইটি। ইউনেসকোর সহযোগিতায় গবেষণাটি করেছেন বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিপিআরডি) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের চেয়ারম্যান সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দিন। তিনি এই গবেষণায় পদ্মের ইতিহাস, এর বিজ্ঞানভিত্তিক নানা তথ্য, পদ্মের উপজাতের ব্যবহার, এর বৈশ্বিক ব্যবসাসহ নানা দিক তুলে ধরেছেন। গবেষণার কাজে দেশের ২০টি পদ্মবিলে অনুসন্ধান চালানো হয়।

সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দিন বলেন, ‘প্রকৃতির এক অনন্য উপহার পদ্ম বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জলাভূমির দখল নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। তারা পদ্মের বসত নষ্ট করে মাছের চাষের নামে প্রতিবেশ নষ্ট করছে। এর ফলে শুধু পদ্ম নষ্ট হচ্ছে না, এসব জলাভূমিনির্ভর মানুষও হারাচ্ছেন পেশা।’

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় আন্ধাশুরা বিল পদ্মের এক বড় আবাসস্থল ছিল। বিলের আয়তন ৭৫০ বিঘা। সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগে মান্দা উপজেলা প্রশাসন ৭৫০ বিঘা আয়তনের বিলটি মাছ চাষের জন্য রাজশাহীর তানোর উপজেলার চৌবাড়িয়া এলাকার এক ব্যক্তিকে লিজ দেন। লিজ নেওয়ার পরপরই ওই মাছচাষি বিলের সব পদ্ম, সিঙ্গার, নিকারসহ বিভিন্ন জলজ গাছ মেশিন দিয়ে গোড়া থেকে তুলে ফেলেন। তবে বিলের উত্তর দিকে চৌবাড়িয়া হাটের অংশে এখনো কিছু পদ্মগাছ রয়েছে। সেসব গাছে এবার ফুল ফুটেছে। প্রকৃতপ্রেমী অনেকেই পদ্মফুল ফোটার এই দৃশ্য দেখতে ছুটে আসছেন।

বাঁকাপুর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বাঁকাপুর, খাগড়া, দুর্গাপুর, চাকদহ, হোসেনপুর গ্রামের লোকজন আন্ধাশুরা বিলের ওপর জীবন নির্বাহন করতাম। একসময় এই বিলে জন্মানো ফল সিঙ্গার, নিকার, পদ্ম, কষ্টি এবং মাছ ধরে সংসার চলত। আমাদের গরিবের প্যাটে লাথি ম্যারা এই বিল লিছ (লিজ) দিছে। এখন এরা আমাদের আর বিলে নামতে দেয় না।’

প্রকৃতির এক অনন্য উপহার পদ্ম বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জলাভূমির দখল নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। তারা পদ্মের বসত নষ্ট করে মাছের চাষের নামে প্রতিবেশ নষ্ট করছে। এর ফলে শুধু পদ্ম নষ্ট হচ্ছে না, এসব জলাভূমিনির্ভর মানুষও হারাচ্ছেন পেশা।
বিপিআরডি চেয়ারম্যান সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দিন

আন্ধাশুরা বিলের দক্ষিণ অংশের কিনারের দিকে ডিঙিনৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে পদ্মফুল তুলছিলেন বিলসংলগ্ন হোসেনপুর গ্রামের শ্যামল। তিনি বলেন, ‘আগে পুরা বিলত এই সময়ে পদ্ম ফুল ফুটে থাকত। পাখিও আসত ম্যালা। খুবই সুন্দর লাগত। মানুষজন আসত ঘুরতে। কিন্তু দুই বছর ধরে বিলত আর পদ্ম, সিঙ্গার, পাখি কিছু নাই।’

আন্ধাশুরা বিলের মতো পদ্ম, শাপলাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ বিলীনের পথে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার জবই বিল ও হাসাইগাড়ী বিলের। এবার জবই বিলের পশ্চিমাংশে ডুমরোর বিল এবং হাসাইগাড়ী বিলের উত্তরাংশে কিছু পদ্ম ও শাপলা ফুল ফুটেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এক দশক আগেও এসব বিলের পুরো অংশে পদ্ম ও শাপলাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ জন্মাত। কিন্তু মাছ চাষের সুবিধার্থে বিলগুলো থেকে পদ্ম, শাপলাসহ জলজ গাছগুলো তুলে ফেলা হচ্ছে।

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে সম্ভাব্য নতুন প্রজাতির হলুদাভ-সাদা পদ্ম
ছবি: বিপিআরডি

মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বিল-ঝিল, দিঘি-ডোবায় মাঝেমধ্যে পদ্মফুলের দেখা মিললেও সবচেয়ে বেশি পদ্মফুল দেখা যায় জেলার হাইল হাওরের বাইক্কা বিল এলাকায়। এখানে একসঙ্গে অনেক জায়গাজুড়ে পদ্মফুল ফোটে। সব বছরই হাইল হাওরের দিকে কমবেশি কিছু না কিছু পদ্মফুল ফুটতে দেখা যায়। তবে এ বছর বাইক্কা বিলে পদ্মফুল ফোটেনি। বাইক্কা বিলের পূর্ব দিকে একটি বিলে কিছু ফুল ফুটেছে।

হাওরপাড়ের কম পানির দিকেই এই ফুল ফোটে বেশি। হাওরপাড়ে প্রচুরসংখ্যক মৎস্য খামার গড়ে ওঠায় পদ্মফুল ফোটার স্থান ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পরিবেশকর্মী ও হাওরপারের মানুষ মিন্নত আলী বললেন, আগে হাওরের বিভিন্ন দিকে প্রচুর খোলা জায়গা ছিল। হাওরের উঁচু স্থানের দিকে পদ্মফুল ফোটে। এখন অনেক মৎস্য খামার হয়েছে। হাওরের উঁচু দিকের খোলা জায়গার আয়তন কমে গেছে। আগে যে রকম পদ্মফুল ফুটতে দেখা গেছে, এখন তার চেয়ে অনেক কমে গেছে।

পদ্মগাছের প্রায় সব অংশই খাওয়ার যোগ্য। কচি পাতা, ডাঁটা ও ফুল কাঁচা অথবা রান্না করে খাওয়া যায়। কন্দ থেকে তৈরি হয় নানা রকম খাবার। চীন ও জাপানে পদ্মবীজ ও কন্দ খুব জনপ্রিয়—কখনো কাঁচা, কখনো ভেজে বা রান্না করে খাওয়া হয়। এমনকি পদ্মবীজ ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ও ডেজার্টেও ব্যবহৃত হয়। চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও ভারতে পদ্মের বড় বাজার আছে।

পদ্মের খাদ্যমূল আর বিশাল বাজার

পদ্ম নিয়ে আলোচনায় এর সৌন্দর্যের দিকটিই প্রথমে আসে। তবে পদ্ম শুধু আমাদের সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়, এটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন উদ্ভিদও। চীনে তিন হাজার বছরেরও আগে থেকে পদ্মের চাষ হচ্ছে, আর এর বীজ ও কন্দ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এশিয়ার দেশগুলোয় পদ্মকে ঘিরে রয়েছে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব।

কিন্তু সৌন্দর্যের বাইরেও পদ্মের রয়েছে বহু ব্যবহার। এটি পানিকে প্রাকৃতিকভাবে পরিশোধন করে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং পদ্ম থেকে তৈরি হয় বিশেষ মানের কাপড়—লোটাস সিল্ক। ফুলের সৌরভ থেকে উৎকৃষ্ট মানের মধু ও সুগন্ধি পাওয়া যায়, যা ধর্মীয় ও চিকিৎসাকাজে ব্যবহৃত হয়।

পদ্মগাছের প্রায় সব অংশই খাওয়ার যোগ্য। কচি পাতা, ডাঁটা ও ফুল কাঁচা অথবা রান্না করে খাওয়া যায়। কন্দ থেকে তৈরি হয় নানা রকম খাবার। চীন ও জাপানে পদ্মবীজ ও কন্দ খুব জনপ্রিয়—কখনো কাঁচা, কখনো ভেজে বা রান্না করে খাওয়া হয়। এমনকি পদ্মবীজ ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ও ডেজার্টেও ব্যবহৃত হয়। চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও ভারতে পদ্মের বড় বাজার আছে।

খাদ্যের গঠনসংক্রান্ত উপাত্ত প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইউএসডিএ নিউট্রিয়েন্ট ডেটাবেজ অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম পদ্মের কন্দে ক্যালসিয়াম আছে ২৬ মিলিগ্রাম, লৌহ আছে শূন্য দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম আছে ২২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম আছে ৩৬৩ মিলিগ্রাম ও প্রোটিন আছে ১ দশমিক ৫৮ গ্রাম।

পদ্মের বীজ কাঁচা খাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম পদ্মে এনার্জি আছে ৫০৬ কিলোজুল, প্রোটিন আছে ৮ দশমিক ১ গ্রাম, ফসফরাস আছে ২২০ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া এটা ভিটামিন বি১ ও বি২–এর আধার।

পদ্মের বৈশ্বিক বাজার

ভারতের মহারাষ্ট্রভিত্তিক ওয়াইজগাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মবীজ, পদ্মফুলের নির্যাস, পদ্মকন্দ, পদ্মপাতা ও পদ্মগুঁড়ার সম্মিলিত বৈশ্বিক বাজার ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার। খাদ্য ও পানীয়, ওষুধশিল্প, প্রসাধনী, নিউট্রাসিউটিক্যালস (স্বাস্থ্যবর্ধক সম্পূরক খাদ্য) হিসেবে পদ্মের ব্যবহার হচ্ছে।

আন্ধাশুরা বিলের পানিতে ফুটেছে পদ্ম
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের জলাভূমিতে দিন দিন পদ্ম কমলেও এখনো তা সংরক্ষণ করলে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার বাজার আছে বলে মনে করেন সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ জন্য জলাভূমির মালিকানা সেখানকার সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’

জার্নাল অব মেডিসিনাল প্ল্যান্ট স্টাডিজ সাময়িকীতে ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘এথনো মিডিসিনাল ইউজেস অ্যান্ড ফার্মাকোলজিক্যাল অ্যাকটিভিটিজ অব লোটাস’ শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, পদ্মের পাতা, ফুল, শুকনো ফুল, কন্দ ও বীজ অন্তত ৪৮ ধরনের অসুখের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর, কুষ্ঠ, হাইপারটেনশনের মতো রোগও রয়েছে।

বাংলাদেশে কিছু উদ্যোগ

পদ্মফুল টেক্সটাইলশিল্পে অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১৯১০ সালের দিক থেকে পদ্মডাঁটা থেকে আঁশ সংগ্রহের প্রচলন শুরু হয়। ধারণা করা হয়, প্রথম কম্বোডিয়া বা মিয়ানমারে পদ্ম আঁশের ব্যবহার শুরু হয় এবং সেখান থেকেই টেক্সটাইলশিল্পে পদ্ম আঁশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

পদ্মের ডাঁটায় থাকে অসংখ্য ছোট ছোট কূপ। সেখানে থাকে আঠার মতো পদার্থ। এই আঠা বাতাসের সংস্পর্শে এসে জমাট বেঁধে যায়। সেটি নৈপুণ্যের সঙ্গে পাকিয়ে সুতা তৈরি করা হয়। সেই সুতায় তৈরি সিল্ককে বলে লোটাস সিল্ক। সারা বিশ্বে এই লোটাস সিল্ক অনেক দামি কাপড়। এক কেজি পদ্মরেশম সুতার দাম ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ ডলার (৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা)। আর প্রতি গজ কাপড়ের দাম পড়ে ২৫ থেকে ১ হাজার ডলার পর্যন্ত। পদ্মফুলের ডাঁটা থেকে তৈরি সুতায় বাংলাদেশেই বানানো হয়েছে বিশেষ একটি স্কার্ফ, যা পদ্মরেশম বা লোটাস সিল্ক নামে পরিচিত। স্কার্ফটি তৈরির জন্য ‘পদ্মফুলের বৈচিত্র্য, ব্যবহার উপযোগিতা ও সংরক্ষণ’ নামে একটি প্রকল্প নেয় গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বিপিআরডি। এর পরামর্শক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাখহরি সরকার।

‘লোটাস ইফেক্ট’

জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ভিলহেম বার্থলট পদ্ম নিয়ে চমকপ্রদ গবেষণা করেছেন। তিনি এবং তাঁর এক সহযোগী ১৯৯৭ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘পবিত্র পদ্মের শুদ্ধতা বা জৈবিক পাতায় দূষণ থেকে মুক্তি।’ এ প্রবন্ধে তাঁরা পদ্মের জলবিমুখী ও নিজের পরিষ্কার হওয়ার ক্ষমতা ব্যাখ্যা করেন। পাতার পিঠে ন্যানো ও মাইক্রোমেট্রিক মোমের গঠনকে সুপারহাইড্রোফোবিসিটি বা নিজের পরিষ্কার হওয়ার ক্ষমতার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে গবেষণায়। এটি পরে ‘লোটাস ইফেক্ট’ নামে পরিচিতি পায়। এই গবেষণা পরে পদ্মপাতার অনন্য গঠন ও স্বপরিষ্কার বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করেছে দীর্ঘস্থায়ী, ময়লা প্রতিরোধী রং, ছাদের টালি ইত্যাদি তৈরি করার ক্ষেত্রে।

বার্থলট এবং তাঁর দল ১৯৯৯ সালে বাজারে প্রথম লোটুসান নামের একধরনের রং উদ্ভাবন করেন। এই রং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে পরিষ্কার রাখতে পারে। এই উদ্ভাবন তাঁকে জার্মান এনভায়রনমেন্টাল অ্যাওয়ার্ড এবং ফিলিপ মরিস রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড এনে দেয়।

এই প্রতিবেদক ই–মেইলে অধ্যাপক ভিলহেম বার্থলটের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পদ্ম একটি অত্যন্ত দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদ এবং এর মধ্যে অনন্য বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা আছে। সব সবুজ উদ্ভিদই ‘তাপমাত্রা কমাতে’ সাহায্য করে। কিন্তু পদ্মের মতো দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদ সবচেয়ে কার্যকর।

হাঁসাইগাড়ী বিলে সিঙ্গার তুলছেন বাবা-ছেলে
ছবি: ওমর ফারুক

পদ্মের আবাস সংরক্ষণ চাই

বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতেও এর উপস্থিতি বহু যুগের। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মৌর্য শাসনামলে বর্তমান মহাস্থানগড়ের পুণ্ড্র নগরের অস্তিত্ব ছিল। সে সময়ের পাওয়া মাটির ফলকে পদ্মের উপস্থিতি পাওয়া যায়। খ্রিষ্টীয় ৭৭০ থেকে ৮৩০ সাল পর্যন্ত পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার টিকে ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ নাহিদ সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়পুরের সম্পূর্ণ বিহার থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের পুণ্ড্রনগর, সেখানকার বাসুবিহার কিংবা কুমিল্লার ময়নামতির প্রাচীন নিদর্শন—সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রতিটিতেই পদ্মের নিদর্শন মিলেছে। পদ্ম এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের সঙ্গে হাজার বছর ধরে জড়িয়ে আছে। এই নিদর্শনগুলো সেই প্রমাণই বহন করে।

পদ্মের অস্তিত্ব এখন অনেকটাই হুমকির মুখে বলে মনে করেন পদ্ম–গবেষক সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এখন প্রাকৃতিক জলাশয়ে সংরক্ষণের পাশাপাশি অনেক দেশে শহরাঞ্চলে এমনকি বাড়িঘরে পদ্মের চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশে পদ্মের চাষের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। চাষের বিষয়টি জনপ্রিয় করার আগে প্রকৃতিতে এখন যতটুকু আছে, তা রক্ষা করা বেশি দরকার।’

একনজরে পদ্ম

পদ্মফুল আংশিক জলমগ্ন উদ্ভিদ। পদ্মগাছ সাধারণত প্রায় দেড় মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়; প্রস্থও তা–ই। এর শিকড় পানির নিচের কাদায় মাটির সঙ্গে আটকে থাকে। বড় আকারের পাতাগুলো (কখনো ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া) পানির ওপর ভেসে থাকে বা অনেক সময় পানির ওপরে দাঁড়িয়ে থাকে। পদ্মফুলও অনেক বড় হয় (প্রায় ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত) এবং ফোটে পাতার ওপরে ওঠা লম্বা ডাঁটার ওপর।

পদ্মগাছ বংশবিস্তার করে বীজ ও কন্দ ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে। বীজ সাধারণত ১ সেন্টিমিটার চওড়া এবং সোয়া সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এগুলো একটি শক্ত খোসার ভেতর থাকে, যা দেখতে অনেকটা ঝরনার মাথার মতো। পদ্মের কন্দ মোটা ও শক্ত, যা পানির তলায় বা ধীরগতির স্রোতে জন্মায়। প্রতিটি গিঁট থেকে একটি করে পাতা বের হয়।

পাতার ডাঁটা ও কন্দের ভেতরে বাতাস চলাচলের জন্য বিশেষ নালি থাকে। পাতার মাধ্যমে প্রবেশ করা বাতাস কন্দে পৌঁছে যায় এবং অন্য একটি পথে আবার বাইরের পরিবেশে বেরিয়ে যায়।

পদ্মগাছের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন ফুল নিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে)। পদ্মবীজ অনেক বছর টিকে থাকতে পারে। পদ্মপাতাগুলো নিজে নিজে পরিষ্কার হয়ে যায়। একটি পদ্মগাছ সাধারণত এক বছরেরও কম সময়ে জীবনচক্র সম্পন্ন করে। চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এটি কুঁড়ি ফোটা, পাতা গজানো, ফুল ও ফল ধরা, কন্দ তৈরি, পরিপক্বতা ও বিশ্রামের পর্যায়ে যায়।

পদ্ম ভোর পাঁচটার দিকে ফোটে। রাতেই এটি ফুটতে শুরু করে। তবে সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে এর পাপড়িগুলো খুলে একেবারে গামলার আকার নেয়। সাদা, গোলাপি ও হলুদ—এই তিন ধরনের পদ্মই বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

এর মধ্যে হলুদাভ-সাদা পদ্ম বিশেষ বৈশিষ্ট্যে আলাদা। যুক্তরাজ্যের কিউ গার্ডেনস এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি হার্বারিয়াম প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এটিকে সম্ভাব্য নতুন প্রজাতির পদ্ম হিসেবে মত দিয়েছে।

(তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, আকমল হোসেন, মৌলভীবাজার; কামনাশীষ শেখর, টাঙ্গাইল এবং ওমর ফারুক, নওগাঁ)