ঘূর্ণিঝড় রিমাল: দ্রুত নোনাপানি নিষ্কাশনে ব্যবস্থা নিতে হবে

ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর করণীয় বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। আজ শনিবার ডিআরইউর সাগর-রুনি মিলনায়তনেছবি সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আছে। দেখা যাচ্ছে, মানুষের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, সুন্দরবনের বন ও জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার অনেক স্থানে নোনাপানি এখনো নেমে যায়নি। ফলে সুপেয় পানির অভাব ও গবাদিপশুর জীবননাশের ঝুঁকি রয়েছে। জলাশয় থেকে দ্রুত নোনাপানি বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আজ শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল-পরবর্তী খাদ্যনিরাপত্তা: আশু করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ বিশেষজ্ঞার এই পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা। আলোচনা করেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, বাপার সহসভাপতি মুহিদুল হক খান, পরিবেশবিশেষজ্ঞ আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার ও যুগ্ম সম্পাদক নুর আলম শেখ।

গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, এবারের ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধের ক্ষতি এক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের তিন জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধসংলগ্ন নিচু এলাকা উপচে লোকালয়ে নোনা পানি প্রবেশ করায় মিঠাপানির আধারগুলো নষ্ট হয়েছে। আসন্ন আমন মৌসুম ধরতে হলে মাঠ ও জলাশয় থেকে দ্রুত নোনাপানি বের করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাম্প করে এই পানি বের করার ব্যবস্থা করা যায়। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের সাইক্লোন এবং ২০০৭ সালের সিডরের পর এটা করা হয়েছিল। এরপরই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাঁধগুলো মেরামত করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের মালিকানায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে বর্তমান নীতিকৌশল পরিবর্তন করে এটা করতে হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চরফ্যাশন মডেল নিয়েই এগোতে হবে।

রফিকুল আলম বলেন, দেশে ঘূর্ণিঝড়-সাইক্লোন নিয়ে সংকেত সহজ করা হলে এ ধরনের দুর্যোগের আঘাতে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। তিনি হুঁশিয়ারি সংকেত, বিপৎসংকেত ও মহাবিপদ সংকেত—এই তিন ধরনের সংকেত রাখার দাবি করেন।

উপকূলের স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কোনো বাঁধ করা হয় না উল্লেখ করে  মুহিদুল হক খান বলেন, এই বাঁধগুলো একটুতেই ভেঙে উপকূলবাসীর চরম ক্ষতি করে। দেশের সর্বত্রই অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়। এসব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। দ্রুত নোনাপানি বের করে ফসল রক্ষা ও খালের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, সাইক্লোন চলে যাওয়ার পর সরকার সেই ক্ষয়ক্ষতির ঠিকমতো কোনো হিসাবও রাখে না। তিনি উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত সাইলোব্যবস্থা চালু করার দাবি করেন।

গত ৩৫ (১৯৮৫-২০২৪) বছরের ঘূর্ণিঝড়গুলোর তথ্য বিশ্লেষণের কথা উল্লেখ করে আমিনুর রসুল বলেন, দেখা গেছে, সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। এত বছরেও সরকার এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা করতে পারেনি। এর পেছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে।

নূর আলম শেখ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় সুন্দরবন বুক পেতে যদি আমাদের রক্ষা না করত, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হতো। সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে; সুন্দরবনকে রক্ষা করবে কে? সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের নামে লুটপাট করা হয়েছে। বন্য প্রাণীদের রক্ষায় উপযুক্ত টিলা বা কিল্লা করা হয়নি। বন্য প্রাণীর মিঠাপানির পুকুর খনন ও পুকুরের পাড় উঁচু করে করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।’

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আইলার চেয়েও রিমালের ক্ষয়ক্ষতি অতি ভয়াবহ। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের দেশপ্রেম ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। বিদেশিদের পরামর্শ বিদেশি প্রজাতির গাছ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে উপকূলবাসী চরম সর্বনাশের শিকার হয়েছেন।