কনকনে শীত আরও তিন–চার দিন
হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা। দেশের অনেক অঞ্চলে দেখাও মেলেনি সূর্যের। রাজধানীসহ দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। আরও তিন-চার দিন দেশে এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল রোববার জানিয়েছে, আজ সোমবার সকালে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও তা দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২৫ ডিসেম্বর এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ঘন কুয়াশার মধ্যে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়।
শীতত কাহিল হছি। পেটের তাগিদে ঠান্ডাত রাস্তাত বাইর হইছি। রাস্তাত মানুষ নাই। গ্যামজ্যামের শহর ফাঁকা।হাসান আলী, রিকশাচালক, রংপুর
সারা দেশে আজ দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা উল্লেখ করেছে, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দিনে দেশের তাপমাত্রা বেশ কমে গেছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও কমে গেছে। তাপমাত্রার (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন) পার্থক্য কমে গেলে শীতের অনুভূতি বেশি হয়। দেশের অনেক জায়গায় সূর্যের দেখা না পাওয়া যাওয়ায় ভূমি উত্তপ্ত হতে পারেনি। ভূমি যদি গরম না হয়, তাহলে শীতের অনুভূতি বাড়ে। মূলত এসব কারণে দেশে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে।
গতকাল দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে, ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে, ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত কয়েক দিনে দেশের তাপমাত্রা বেশ কমে গেছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্যও কমে গেছে। তাপমাত্রার (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন) পার্থক্য কমে গেলে শীতের অনুভূতি বেশি হয়।আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা
আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, দেশে এখন কোনো শৈত্যপ্রবাহ বইছে না। তবে শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হলে শীতের অনুভূতি যেমন থাকে, তেমন শীত অনুভূত হচ্ছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়া এবং সূর্যের দেখা না পাওয়া যাওয়ায় এমন অনুভূত হচ্ছে।
শাহানাজ সুলতানা আরও বলেন, এখন যে অবস্থা চলছে, তা আরও তিন-চার দিন থাকতে পারে। ১ ও ২ জানুয়ারি তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে। ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে পারে।
গতকাল দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে, ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শাহানাজ সুলতানা আরও বলেন, এখন যে অবস্থা চলছে, তা আরও তিন-চার দিন থাকতে পারে। ১ ও ২ জানুয়ারি তাপমাত্রা একটু বাড়তে পারে। ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে পারে।
তীব্র শীতে ভোগান্তি
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। নিকলী সদরের কৃষক মো. ঈমাম হোসেন (৬৫) প্রথম আলোকে বলেন, তীব্র শীতের কারণে তাঁরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
রাজশাহীতে গতকাল সারা দিন সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশার সঙ্গে ছিল হিমেল বাতাস। রাজশাহী নগরের আমজাদের মোড় এলাকায় রাস্তার পাশে মানুষজনকে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিতে দেখা যায়। নগরের মোহনপুর এলাকার শ্রমজীবী বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শীতের কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে কষ্ট বাড়ছে। কাজকর্মও কমে গেছে। গতকাল দুই দিন পর তিনি কাজ পেয়েছেন। তীব্র শীতে তাঁর সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।
ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ রংপুরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। গতকাল সকালে রংপুর নগরের জাহাজ কোম্পানি, শাপলা চত্বর, পার্কের মোড় ও মেডিকেল মোড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় লোকজন কম। রিকশাচালক হাসান আলী বলেন, ‘শীতত কাহিল হছি। পেটের তাগিদে ঠান্ডাত রাস্তাত বাইর হইছি। রাস্তাত মানুষ নাই। গ্যামজ্যামের শহর ফাঁকা।’
শীতের তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ধারণক্ষমতার বাইরে একটি বেডে চার শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগ অর্থাৎ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছে।
নওগাঁয়ও গতকাল দিনভর ভারী কুয়াশায় সূর্যের দেখা মেলেনি। বৃষ্টির মতো ঝরেছে শিশিরও। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের অধিকাংশ সময় সড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।