এমন মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টি কেন, থাকবে কয় দিন
কড়া তাপে পুড়ছিল দেশ। শহর, নগর—সবখানে নাভিশ্বাস। বৈশাখের রুদ্র রূপ এমনই। অনাবৃষ্টি আর শুষ্ক আবহাওয়ায় ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছিল। এমন সময় বৃষ্টি এল। মানুষের প্রাণ জুড়াল। এমন ঝড় আর বৃষ্টি শুরু হয়েছে গেল বৃহস্পতিবার। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পাঁচ বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হবে।
আর এই মেঘলা আকাশ আর ঝড়বৃষ্টিতে দেশের তাপমাত্রা অনেকটা কমেছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় আজ রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে এক দিনে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের ৪৪টি স্টেশন থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়ার অবস্থা তুলে ধরে। আজ সন্ধ্যা ছয়টায় আবহাওয়া অফিস আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। সেখানেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমার এই চিত্র উঠে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। আজ দেওয়া বার্তায় দেখা যায়, রাজারহাটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের ২৪ ঘণ্টায় ওই এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সার্বিকভাবে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমেছে আজ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় খুলনার মোংলা ও যশোরে, ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সন্দ্বীপে, ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টি কেন
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তায় বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, পশ্চিমের বায়ু আগে প্রাধান্যশীল ছিল। এরপর আর্দ্রতাযুক্ত পুবালি বায়ু এর সঙ্গে মিশে মেঘ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর আর্দ্রতা বহন করে আনা এ বায়ু ঝরিয়েছে বৃষ্টি। এর জন্যই আকাশ মেঘলা। আর এতে কমেছে তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
এমন অবস্থা আর কয় দিন থাকবে
এই যে ঝড়বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ, এটা কিন্তু জনজীবনে বেশ স্বস্তি এনেছে। প্রচণ্ড গরমের পর বড়ই কাঙ্ক্ষিত ছিল এ আবহাওয়া। কিন্তু আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি খুব বেশি দিন থাকবে না।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, কাল সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হবে। তাপমাত্রা কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকবে। আর বুধবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে।
এ বছর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদীতে এ তাপমাত্রা উঠেছিল ১৭ এপ্রিল। চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও রাজশাহীতে তাপমাত্রা একাধিক দিন ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ছিল।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আগামী দিনে তাপমাত্রা বাড়লেও আগের অবস্থায় যাবে না।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, এখন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। এতে তাপমাত্রা বাড়লেও আগের অবস্থায় যাওয়ার সম্ভাবনা কম। দিনের তাপমাত্রা আগের মতো বাড়বে না। রাতের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকবে। গরমের অনুভূতি বেশি থাকবে। তবে তাপমাত্রা অতটা উঠবে না।