জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার এশীয় দেশগুলোকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে

রেকর্ড সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণের পেছনে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন খাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারকে চিহ্নিত করেছেনফাইল ছবি এএফপি

এশিয়ায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল, পাওয়ার প্ল্যান্ট ও পাইপলাইন সম্প্রসারণের জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রকল্প চলছে। এগুলো এই অঞ্চলে জলবায়ু ও জ্বালানি সংকট সমাধানের পরিবর্তে সমস্যা তৈরি করবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলোই এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে এই জনপদকে অপূরণীয় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক প্রচারের উদ্বোধন উপলক্ষে মানববন্ধনে আসা বক্তারা এসব কথা বলেন। এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ‘ডোন্ট গ্যাস এশিয়া’ শিরোনামের প্রচারে অংশ নিয়েছে। ঢাকায় এই কর্মসূচি যৌথভাবে আয়োজন করে ইকুয়িটি বিডি, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, বেলা, ব্রতী, ক্লিন, ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিক, গ্লোবাল ল’থিংকারস সোসাইটি, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন।

জীবাশ্ম জ্বালানির ভয়াবহ সম্প্রসারণ রুখতে ঢাকার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার একযোগে জাপানের টোকিও, ফিলিপাইনের ম্যানিলা ও মান্ডালুইয়ং, দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চেওন, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই, ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, নেপালের কাঠমান্ডু এবং পাকিস্তানের লাহোর ও করাচি প্রভৃতি শহরে এই প্রচারকাজ শুরু হয়েছে। পুরো এশিয়াতে এই কর্মসূচির আয়োজন ও সমন্বয় করেছে এশিয়া এনার্জি নেটওয়ার্ক এবং এশিয়ান পিপল’স মুভমেন্ট ফর ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি)।

ঢাকায় মানববন্ধনে এপিএমডিডির সমন্বয়কারী ও এশিয়ান এনার্জি নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, ‘এশিয়ায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং পাইপলাইন সম্প্রসারণের জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রকল্প চলছে। এগুলো এই অঞ্চলে জলবায়ু ও জ্বালানি সংকট সমাধানের পরিবর্তে আরও সমস্যা তৈরি করবে। কারণ গ্যাস কয়লার মতোই ক্ষতিকর। তাই সরকার, ব্যাংক ও করপোরেশনগুলোকে বলতে চাই, গ্যাস ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণ বন্ধ করুন। দ্রুত শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করুন।’

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, উন্নত দেশগুলো ইতিমধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। তারা বিভিন্ন বছরকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারণ করেছে। সেই নির্ধারিত সময়ের পর তারা আর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করবে না। কিন্তু এই উন্নত দেশগুলোই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নয়নের নামে জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে এই জনপদের মানুষকে এক অপূরণীয় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রচার কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ। তিনি বলেন, মানবাধিকারের জায়গাটা তিলে তিলে হারিয়ে যাচ্ছে। এই বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ খাদ্য, জলসহ প্রতিদিনের বসবাসের প্রতিটি ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে ফেলছে। উপকূলজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাখ লাখ ঘর-বাড়ি ছাড়া। এই জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে জীবাশ্ম জ্বালানি।

যত দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপরে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে, তত দ্রুত ধ্বংসের হাত থেকে এই দেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন শারমিন মুরশিদ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এ এস এম বদরুল আলম, ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রতিনিধি বারীশ হাসান চৌধুরী, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, গ্লোবাল ল’ থিংকারস সোসাইটির সভাপতি রাওমান স্মিতা, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়কারী এস হেড অপু প্রমুখ।