সাভারের ডিসি নার্সারিতে আগস্টে ফোটা ম্যান্ডেভিলা ফুল
ছবি: লেখক

ঢাকায় বৃক্ষমেলায় এ ফুলকে দেখে তার তত্ত্বতালাশে আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু কিছুতেই এর কূলকিনারা করতে পারছিলাম না। ফুলটা নতুন মনে হলো, তাই এই ফুল আর কোথাও আছে কি না, খোঁজার চেষ্টা করলাম। খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, তিন-চার বছর আগেই এই নতুন ফুল এ দেশে ঢুকেছে।

কেউ কেউ চাষ করছেন, চারা তৈরি করে আবার বিক্রিও শুরু করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্ভিদসম্পদের তালিকায় এ ফুলের কোনো নাম নেই। তার মানে, এ ফুল সম্প্রতি এ দেশের উদ্ভিদজগতে প্রবেশ করেছে।

নতুন এ ফুলের নাম ম্যান্ডেভিলা। ম্যান্ডেভিলা এ ফুলের জেনেরিক নাম, ইংরেজি নাম শাইনিং ম্যান্ডেভিলা। যাঁরা এ ফুলের গাছ লাগিয়েছেন, তাঁরা একে ম্যান্ডেভিলা নামেই ডাকেন।

জনৈক ব্রিটিশ কূটনীতিক ও বাগানকারী হেনরি ম্যান্ডেভিলির (১৭৭৩-১৮৬১) নামানুসারে এ ফুলের নাম রাখা হয়েছে ম্যান্ডেভিলা। এ ফুলের কোনো বাংলা নাম পাওয়া যায়নি। প্রায় তিন বছর আগে এ ফুলের দেখা পেয়েছিলাম রাজশাহী উপশহরে কৃষিবিদ মো. শাহীন সালেহউদ্দিনের ছাদবাগানে।

বৃক্ষমেলায় দেখেছিলাম সাদা ম্যান্ডেভিলা। তাঁর ওখানে পেলাম গোলাপি ম্যান্ডেভিলা। তিনি জানান, বৃক্ষমেলা থেকে তিনি ম্যান্ডেভিলার চারা কিনে এনে লাগিয়েছিলেন, সে গাছে ফুলও ফুটেছিল। কিন্তু এ দেশের অত্যধিক গরমের কারণে শেষ পর্যন্ত গাছটাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেননি। এরপর দেশের বেশ কয়েকটি নার্সারিতে এ গাছের দেখা পাই। সাভারের ডিসি নার্সারিতে এই আগস্টে সাদা ও গোলাপি ম্যান্ডেভিলাগাছে ফুল ফুটেছে।

শাহীন বলেন, শীতকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় কিছু না কিছু ফুল ফোটে। বেশি ফুল ফোটে শীত শেষে, বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিলে। পুরো গ্রীষ্মকালে ফুল থাকে। বর্ষায় কম ফোটে।

বর্ষা শেষে শরৎ-হেমন্তে আবার বেশি ফোটে। তবে গাছটা এ দেশের আবহাওয়ায় একটু কাতর বলেই মনে হয়েছে তাঁর কাছে। তিন বছরেও গাছটা যেমন খুব বেশি বাড়েনি, তেমনি এর চারা তৈরিও খুব সহজ নয়। খুব শীত বা খুব গরম—কোনোটাই গাছ সইতে পারে না।

ম্যান্ডেভিলা ফুলের আহামরি রূপ যে আছে, তা নয়। লতানো গাছে যখন অনেক ফুল ফোটে, তখন গাছ আলো হয়ে ওঠে, বাগানে আলাদা সৌন্দর্য আনে। ম্যান্ডেভিলা ফুলের আছে অনেক রং ও আকার।

সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত ম্যান্ডেভিলার মোট ১৭৪টি প্রজাতির গাছ রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে গোলাপি ম্যান্ডেভিলার উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Mandevilla splendens, পরিবার অ্যাপোসাইনেসি। এটি একটি চিরসবুজ লতানো স্বভাবের গাছ। বাইতে দিলে গাছ প্রায় তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

পাতা উপবৃত্তাকার ও চকচকে সবুজ। ফুল মাইকের চোঙের মতো, সৌরভ নেই, পাঁচটি পাপড়ির রং গোলাপি বা সাদা, কেন্দ্রভাগ গাঢ় লালচে বা হলদে। গোলাপি ও সাদা ম্যান্ডেভিলা ছাড়াও লাল রঙের একটি ম্যান্ডেভিলার খোঁজ এ দেশে পাওয়া গেছে। বছর চারেক আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাজশাহীর জনৈক ব্যক্তি তা এনেছিলেন বলে শাহীন জানান। ম্যান্ডেভিলা ফুলের জন্মভূমি ব্রাজিল। সেখান থেকে নানা দেশ ঘুরে সম্প্রতি এ দেশে এসেছে।

মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদপ্রকৃতিবিষয়ক লেখক