নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কত দিন লাগবে: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

বরিশালের বানরিপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর (কৃষ্ণকাঠি) সীমানা জরিপ ও নদীর জায়গায় থাকা দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পাঁচ বছর আগে দেওয়া রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, ‘রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কত দিন লাগবে? ১০০ বছর হলেও হয়তো হবে না।’ বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ মন্তব্য করেন।

সন্ধ্যা নদী ভরাট করে আবাসন প্রকল্প তৈরি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করে। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন। নির্দেশনার মধ্যে সিএস ও আরএস রেকর্ড অনুসারে একই বছরের ৩১ মের মধ্যে নদীর সীমানা জরিপ করতে ও জরিপ অনুসারে নদীর জায়গায় থাকা স্থাপনা চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ করতে বলা হয়।

আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসককে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়ার আরজি নিয়ে এইচআরপিবি গত ফেব্রুয়ারিতে সম্পূরক একটি আবেদন করে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিয়া আক্তার।

‘সচিব থেকে যা দেখছে, তা–ই শিখবে’

শুনানিতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিয়া আক্তার বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। জরিপ কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছেন, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে কমপ্লায়েন্স (প্রতিবেদন) দেওয়ার কথা।’ তখন জুলফিয়া আক্তার বলেন, কমপ্লায়েন্স দেওয়া হয়েছে।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকেরা টালবাহানা করে থাকেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘সচিব থেকে যা দেখছে, তা–ই শিখবে। সচিব তো কেয়ার করেন না। কয়েক হাজার (আদালত অবমাননার) মামলা পড়ে আছে।’

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে জুডিশিয়ারির কার্যক্রম ধসে পড়বে। আইনজীবীরা রায় ও আদেশ পান, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই, যা হতাশাজনক। রায়ের নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন তিনি।

এ সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩১ মের মধ্যে জরিপ কাজ করতে বলা হয়েছে। বাস্তবায়ন করেছেন?’ তখন জুলফিয়া আক্তার বলেন, সময় নিতে বলেছেন, করে ফেলবেন—জেলা প্রশাসকের (বরিশালের ডিসি) সঙ্গে কথা হয়েছে।

আদালত বলেন, কত দিনের মধ্যে করবেন? ২০১৮ সালের ১৪ মার্চের রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে কত দিন লাগবে? এ সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিয়া আক্তার বলেন, ‘শেষবারের মতো সময় দিন, ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলি।’

তখন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সাতটি তারিখে উনি (সহকারী অ্যাটর্নি জেলারেল) পাঁচবার কথা বলেছেন। কীভাবে দেরি করা যায়, সেভাবে কাজ করছে। তাঁর (মনজিল) উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি পরিস্থিতি বোঝেন ও জানেন। আমরাও জানি। তারা চেষ্টা করে।’

আদালত বলেন, সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে তালিকা (দখলদার) দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ সময় কী নিয়ে রিট করা হয়েছিল, তা তুলে ধরেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

শুনানির এই পর্যায়ে সময়ের আরজি জানান সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিয়া আক্তার। তখন আদালত বলেন, কত দিনের মধ্যে পারবেন, তা জানাবেন।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যোগাযোগ করছি।’ একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘আমেরিকা নিচ্ছে না, আটকে দিচ্ছে। দেশ এটিই—এটার মধ্যে থাকতে হবে। সব লুট করে নিয়ে যাবেন, সব আটকে রেখে দেবে। ভালো করে বুঝিয়ে বলেন, দেশের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য। সময় দিচ্ছি, না পারলে আপনার ডিসি সাহেব এসে আদালতে বলবেন।’ পরে আদালত ১৮ জুন পরবর্তী তারিখ রাখেন।