গাজীপুরের লাবুন্ধা নদী: দখল ও দূষণকারীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ হাইকোর্টের

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

গাজীপুর জেলা দিয়ে প্রবাহিত লাবুন্ধা (লবলাং) নদী দখল ও দূষণে জড়িত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে নদীসংলগ্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) কার্যকর আছে কি না, তা সার্বক্ষণিক তদারকি ও পর্যবেক্ষণ এবং নদীর পানির গুণগত মান নিয়মিত পরীক্ষা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। লাবুন্ধা বা লবলাং নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রিটটি করে।  

বেলা জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়ন থেকে লাবুন্ধা নদী (লবলাং নামেও পরিচিত) জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে তুরাগ নদে গিয়ে মিলেছে। দেশের অন্য নদীগুলোর মতো ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদও বর্তমানে দখল-দূষণে অস্তিত্বসংকটে। এই নদটি দখল ও ভরাট করে শতাধিক কলকারখানা গড়ে উঠেছে।

দখল ও দূষণ থেকে নদটি রক্ষায় গত ৮ জুন রিটটি করে বেলা। রিটে বলা হয়, নদটি বর্তমানে আশপাশের কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য পদার্থসহ দূষিত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ও প্লাস্টিক বর্জ্যসহ পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শামীমা নাসরিন ও এস হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

দখল ও দূষণ থেকে লাবুন্ধা নদী রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনবহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। নদীটি পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুযায়ী প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা ও এ অনুসারে ব্যবস্থাপনার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না—এ বিষয়েও রুল হয়েছে। এ ছাড়া সিএস জরিপ বা মূল প্রবাহ অনুযায়ী নদীটির সীমানা নির্ধারণ করে সীমানা পিলার স্থাপন, নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদার উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নদীটি রক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।

আইনজীবী এস হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশসচিব, পানিসচিব, ভূমিসচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও ১০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।