সরেজমিন উড়িরচর
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে উদ্বাস্তু জনপদ
ভূমি-বাণিজ্যের কারণে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বরাদ্দযোগ্য জমি প্রভাবশালী ও বিত্তশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
অসহায় উদ্বাস্তুদের নিপীড়ন এবং ভূমি–বাণিজ্যের জন্য রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা জলদস্যুদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। ভোটের রাজনীতিতেও এই শিকড়বিহীন মানুষদের ব্যবহার করা হয়েছে।
২২ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাস্তু নিরাপত্তা এখানকার মানুষের জন্য কখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা প্রাচীন সন্দ্বীপের প্রান্তিক ইউনিয়ন উড়িরচর। মেঘনার মোহনায় অবস্থিত উড়িরচর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে আগত যেকোনো ভ্রমণকারীর মন ভরে উঠবে মোটা চালের ভাত, টাটকা মাছ আর সবুজ ফসলের সমারোহে। এখানকার বাসিন্দাদের আন্তরিক আতিথেয়তাও মুগ্ধ করার মতো।
কিন্তু এই শান্ত দ্বীপের আড়ালে লুকিয়ে আছে নানা বঞ্চনা, যা বাইরের চোখে সহজে ধরা পড়ে না। বৈরী প্রকৃতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, প্রভাবশালীদের সঙ্গে জলদস্যুদের আঁতাত, ভূমি-বাণিজ্য এবং একতরফা সীমা নির্ধারণের বেড়াজালে আটকে আছে উড়িরচরের মানুষ।
অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাস্তুচ্যুত মানুষের অন্যতম বৃহৎ আশ্রয়স্থল উড়িরচর। ভূমি–বাণিজ্যের ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বরাদ্দযোগ্য জমি অস্থানীয় বিত্তশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ।
অন্যদিকে একতরফা সীমানা নির্ধারণ উড়িরচরের আদি বাসিন্দাদের মধ্যে পরিচয় হারানোর শঙ্কা এবং তীব্র সামাজিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে চোখে পড়ে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার সীমানা নির্ধারণকারী স্তম্ভ।
এ পরিস্থিতিটা স্থানীয় মানুষের ভাষায়, ‘এক জমিতে দুই কৃষকের চাষ, মাঝখানটায় শস্যের সর্বনাশ’।
১৯৭৮ সালের দিকে সন্দ্বীপ থেকে ২৫টি ভূমিহারা পরিবার প্রথম উড়িরচরে বসতি স্থাপন করে। এরপরের দুই-তিন বছরে শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিতে শুরু করে। ১৯৮৫ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলেও সন্দ্বীপের ভূমিহীন মানুষ দ্রুত ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ২০১০ সালের দিকে মেঘনা অববাহিকার ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন ছোট-বড় দ্বীপের ভিটেহারা মানুষ এসে এখানে নতুন করে জীবন শুরু করেন। বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার পরিবার এই দ্বীপে বসবাস করছে, যাদের আগের ঠিকানা সমুদ্রের বুকে বিলীন হয়ে গেছে।
প্রায় ৫০ বছর হয়ে গেলেও উড়িরচরের এই ভূমিহীন মানুষেরা এখনো তাঁদের ভূমির অধিকার পাননি। উল্টো তাঁরা এখন ভূমি হারানোর ঝুঁকিতে। সরকারের চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম (সিডিএসপি) উদ্বাস্তুদের ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানে কাজ করেছে। ফলে দেরিতে হলেও ভূমির মালিকানা নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন উড়িরচরের বাসিন্দারা। কিন্তু প্রকল্পটি চরবাসীর জন্য আশীর্বাদ না হয়ে বরং নিপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।
উড়িরচরে পা রাখতেই দেখা হলো ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো লক্ষ্মীপুরের রামগতির শহীদুল ইসলামের (৬৫) সঙ্গে। ভিটেমাটি হারিয়ে উড়িরচরে এসেছিলেন নতুন জীবনের আশায়। গ্রামীণ ব্যাংক ও সাগরিকা থেকে ঋণ নিয়ে একটি মুদিদোকান চালালেও থাকার মতো ঘর নেই। স্ত্রী থাকেন অন্যের আশ্রয়ে। ঋণের বোঝা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত শহীদুল।
নিত্যসঙ্গী বৈরী প্রকৃতি
সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে মালবোঝাই নৌকার ছাদে চেপে উড়িরচরের উদ্দেশে যাত্রা করতেই দেখা মেলে ভাঙা পায়ে প্লাস্টার নিয়ে নৌকায় ওঠা সালাউদ্দিনের (৩২) সঙ্গে। ঢাকায় পিকআপ ভ্যান দুর্ঘটনায় আহত সালাউদ্দিন আড়াই মাস পর ফিরছেন নিজের বাড়ি উড়িরচরে। এত সময় চট্টগ্রামে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি উড়িরচরের দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কথা বলেন। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল নৌকাই এখানকার প্রধান বাহন। বিকল্প হিসেবে স্পিডবোট থাকলেও তা ব্যয়বহুল।
উড়িরচরে পা রাখতেই দেখা হলো ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি হারানো লক্ষ্মীপুরের রামগতির শহীদুল ইসলামের (৬৫) সঙ্গে। ভিটেমাটি হারিয়ে উড়িরচরে এসেছিলেন নতুন জীবনের আশায়। গ্রামীণ ব্যাংক ও সাগরিকা থেকে ঋণ নিয়ে একটি মুদিদোকান চালালেও থাকার মতো ঘর নেই। স্ত্রী থাকেন অন্যের আশ্রয়ে। ঋণের বোঝা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না পাওয়ার হতাশায় নিমজ্জিত শহীদুল। তার ওপর ভূমি–বাণিজ্যের শিকার হয়ে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের নানা আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
এই হতাশা শহীদুলের একার নয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ভিটেমাটি হারানো অসংখ্য মানুষের একই পরিণতি।
গুগল ম্যাপ দিয়ে তৈরি বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের একটি ভিডিও চিত্রে ১৯৮৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণের ভাঙনে উড়িরচর দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে ভেঙে যাওয়া এলাকায় জাহাইজ্জার চর (স্বর্ণদ্বীপ) ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। উপকূলে পলিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ভূমি জেগে ওঠার প্রবণতা বাড়লেও লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং স্রোতের অস্বাভাবিক গতি এসব নতুন ভূমিকেও দ্রুত বিলীন করে দিচ্ছে। ফলে জলবায়ু উদ্বাস্তুরা এক চর থেকে অন্য চরে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।
বাস্তুচ্যুতির এই চক্র উড়িরচরের বাসিন্দাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে যেটুকু উড়িরচর টিকে আছে, সেখানকার ৮০ ভাগ পরিবারই দক্ষিণ দিকের প্রবল ভাঙনের শিকার হয়ে ক্রমেই উত্তরে সরে এসে বসতি গড়েছে। উত্তরের প্রান্তভাগে বসবাস করা মানুষেরা ১৫ বছর আগেও অন্য কোনো দ্বীপ বা চরে ছিলেন। গাছপালাহীন এই প্রান্তে তারা মাত্র এক দশক আগে বসতি স্থাপন করতে শুরু করেছেন।
উড়িরচরে গত ৫০ বছরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। জলদস্যুদের আশ্রয়স্থল হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে এই চর, যেখানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা ভূমিহীন উদ্বাস্তুদের ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে।
রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের এক আখ্যান
একসময় এই দ্বীপ ছিল উপকূলীয় জলদস্যুদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। সরকার বা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ এখানে ছিল খুবই সামান্য। ২০১৪ সালে র্যাব-পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে শীর্ষ জলদস্যু জাসেদ ওরফে জাসুর পতন ঘটলেও চরবাসীর মুক্তি মেলেনি। উড়িরচরের খবর গণমাধ্যমে খুব কমই উঠে আসে। গত ২৪ মার্চ দুটি দস্যু বাহিনীর সংঘর্ষে তিনজনের প্রাণহানি ঘটলেও তা জাতীয় গণমাধ্যমে স্থান পায়নি।
উড়িরচরে বসতি স্থাপনের অর্ধশতাব্দীতে প্রায় ৩০ জন শীর্ষ জলদস্যুর উত্থান ঘটেছে। তারা উড়িরচরকে নিজেদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহার করেছে। নিপীড়নের শিকার বানিয়েছে ভিটেমাটি হারানো অসহায় উদ্বাস্তুদের। আশ্রয়ের জন্য এই জলদস্যুরা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। এমনকি ভোটের রাজনীতিতেও শিকড়বিহীন এই মানুষদের ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বসতি স্থাপনের প্রায় ৫০ বছর পর এই দ্বীপ ইউনিয়ন এখন পরিচয়–সংকটে ভুগছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ইউনিয়নটিতে ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাও নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। ২২ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন নেই এখানে। নেই কোনো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবন। পরিষদের সব কার্যক্রম চলে দোকানপাটে। ইউনিয়নের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ব্যবহার হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে। একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিও চলছে মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে।
তবে বসবাসের ধরন যা–ই হোক, উড়িরচরের শতভাগ মানুষ যে জলবায়ু উদ্বাস্তু (স্থানীয়ভাবে বলা হয় দইরগা ভাঙা), তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এই দ্বীপটিকে প্রভাবশালী মহলের এক নিভৃত উপনিবেশে পরিণত করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর স্থানীয় বাসিন্দা নুর নবী প্রথম আলোকে বলেন, এই দ্বীপের নিরীহ বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরে দুই জেলার প্রভাবশালীদের দ্বারা নানাভাবে নিষ্পেষিত। শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকে শুরু করে বাস্তু নিরাপত্তা কখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
দুই জেলায় বিভক্ত উড়িরচরে ‘ভূমিহীন’ হিসেবে পরিচিত এসব মানুষের বসবাস নোয়াখালী অংশে। সন্দ্বীপ থেকে গিয়ে বসবাস শুরু করা ‘স্থানীয়’ বা ‘উড়িরচইরা’ মানুষের বসবাস চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উভয় অংশে।
ভূমি–বাণিজ্যের শিকার
উড়িরচরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে তাঁদের একই জায়গা বারবার কিনতে হয়েছে। ২০০৫ সালের দিকে উড়িরচরের উত্তর-পশ্চিমাংশে দ্রুত চর জেগে ওঠে। ২০০৮ সালের দিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতির দুই জলদস্যু নাছির কেরানী ও নিজাম ডাকাত সেসব জায়গা সেখানকার বাস্তুচ্যুত মানুষের কাছে বিক্রি শুরু করে। ২০১০ সালে উড়িরচরের শীর্ষ দস্যু জাসেদ ওরফে জাসু বন উজাড় করে ভূমিহীনদের কাছে জমি বিক্রির মহোৎসবের আয়োজন করে। জাসু প্রতি দাগ (দুই একর) জায়গা দু-তিন হাজার টাকায় বিক্রি করত। ফলে উড়িরচরের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় ভোলা, হাতিয়া ও রামগতির নিকটবর্তী বিভিন্ন দ্বীপের ভিটেমাটি হারানো মানুষদের বসবাস দেখা যায়, যারা স্থানীয়ভাবে ‘ভূমিহীন’ নামে পরিচিত।
দুই জেলায় বিভক্ত উড়িরচরে ‘ভূমিহীন’ হিসেবে পরিচিত এসব মানুষের বসবাস নোয়াখালী অংশে। সন্দ্বীপ থেকে গিয়ে বসবাস শুরু করা ‘স্থানীয়’ বা ‘উড়িরচইরা’ মানুষের বসবাস চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উভয় অংশে।
ভূমিহীনদের এলাকায় গড়ে ওঠা বার আউলিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, জাসুর কাছ থেকে প্রথমে তিন হাজার টাকায় জায়গা কিনলেও পরে দফায় দফায় মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে। স্থানীয় লোকজন আরও জানান, বার আউলিয়া বাজার এলাকায় নতুন জেগে ওঠা ভূমির সঙ্গে জাসু কয়েক শ একর ‘বয়া সম্পত্তিও’ (আগে কোনো ব্যক্তির মালিকানার দালিলিক প্রমাণ আছে এমন) বিক্রি করে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাইরের কেউ তাঁদের দখলে থাকা জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে দখলের চেষ্টা করলে সংঘাত অনিবার্য। তাঁদের দাবি, মাঝেমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বন্দোবস্ত নেওয়ার দাবি করে তাঁদের দখলে থাকা জায়গায় হানা দেয়।
দক্ষিণ-পশ্চিমের চেয়ারম্যান বাজার, মধ্যভাগের বার আউলিয়া বাজার ও উত্তরের ইউসুফ মেম্বার মার্কেট এলাকার বাসিন্দারা প্রথম আলোকে বলেন, সরকার তাঁদের নামেমাত্র জায়গা বন্দোবস্ত দিচ্ছে। বসতভিটা ও চাষের জায়গা মিলিয়ে ২ একর জমি তাঁদের দখলে থাকলেও কবলা (নিবন্ধন) দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ২০ শতাংশ। ইউসুফ মেম্বার মার্কেট এলাকার ইউসুফ মেম্বারও একই কথা জানিয়েছেন।
কেন দুই একরের মধ্যে মাত্র ৮ থেকে ২০ শতাংশ জায়গা কবলা দেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামিম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জায়গা, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কবলা দেওয়া হচ্ছে। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের জায়গা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে।
ভূমিহীনদের বসতি ও দখলে থাকা অবশিষ্ট জায়গা বাইরের কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ইউএনও সুস্পষ্ট জবাব না দিয়ে বলেন, সরকার চাইলে এসব জায়গা বিধি মেনে যে কাউকে বন্দোবস্ত দিতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাইরের কেউ তাঁদের দখলে থাকা জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে দখলের চেষ্টা করলে সংঘাত অনিবার্য। তাঁদের দাবি, মাঝেমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বন্দোবস্ত নেওয়ার দাবি করে তাঁদের দখলে থাকা জায়গায় হানা দেয়।
যেভাবে একতরফা সীমানা নির্ধারণ
চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার সীমানাস্তম্ভে দ্বিখণ্ডিত দ্বীপে রাতারাতি অনেকেই এক জেলা থেকে অন্য জেলার বাসিন্দা হয়ে পড়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক প্রভাব এবং শীর্ষ দস্যুদের যোগসাজশে দ্বীপ ইউনিয়নটিকে দুটি ভিন্ন জেলার ভাগাভাগির লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ অংশে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে দল থেকে যিনিই সংসদ সদস্য হয়েছেন, তিনি তাঁর বিপরীতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ অংশের হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে বিরোধে যেতে চাননি। কারণ, নোয়াখালী অংশে বিএনপি আমলে ছিলেন মওদুদ আহমদ আর আওয়ামী লীগ আমলে ওবায়দুল কাদের।
একতরফা সীমানা নির্ধারণের পেছনে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা ছিল বলে মনে করছেন চরের বাসিন্দারা। এ কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন চর উন্নয়ন ও ভূমি বন্দোবস্ত প্রোগ্রাম ‘সিডিএসপি’কে। অন্যদিকে জলদস্যুতা ও চর নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করেছেন তাঁর ভাই আবদুল কাদের মির্জাসহ কয়েকজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী।
তবে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯২ সালে কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন সংসদ সদস্য মওদুদ আহমদের হাত ধরে। ২০০২ সালে আইনমন্ত্রী থাকাকালে উড়িরচরকে দুই জেলায় ভাগ করার কাজ ত্বরান্বিত করেন তিনি। তখন সব উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়লেও ওবায়দুল কাদের উড়িরচরের মাঝবরাবর সীমানাস্তম্ভ স্থাপন করতে উঠেপড়ে লাগেন। এ ক্ষেত্রে সীমানা-সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায়কে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এ-সংক্রান্ত রিটের আবেদনকারী সাইফুল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের চাওয়াকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালিত হয়নি তখন।
উড়িরচরে গৃহহীন মানুষের এই যে সমস্যা, তা বাংলাদেশের প্রায় সব চরাঞ্চলের সমস্যা থেকে আলাদা নয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো এমন যে এসব সমস্যা জিইয়ে থাকে দশকের পর দশক ধরে। এর অন্যতম কারণ, এ সমস্যায় নিমজ্জিত মানুষেরা ক্ষমতাকাঠামোর একেবারে নিম্নস্তরের এবং তাঁদের কণ্ঠ প্রায় শোনাই যায় না।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবদুল বায়েস
জনতা বাজারের বাসিন্দা মো. সাহাবুদ্দিন (৬৪) বলেন, সন্দ্বীপের অংশ নিয়ে গেল নোয়াখালীতে। কিন্তু সন্দ্বীপের সাবেক সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের কথার বাইরে তিনি যাবেন না। সীমানা নিয়ে মামলা করা হয়েছিল। হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর নোয়াখালীর পক্ষে আপিল করা হয়। কিন্তু শুনানির জন্য অপেক্ষা না করে গায়ের জোরে ওবায়দুল কাদেরের লোকজন সীমানাখুঁটি বসিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে কথা বললে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবদুল বায়েস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ভূমির রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করছেন। এ নিয়ে একাধিক বইও আছে তাঁর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উড়িরচরে গৃহহীন মানুষের এই যে সমস্যা, তা বাংলাদেশের প্রায় সব চরাঞ্চলের সমস্যা থেকে আলাদা নয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো এমন যে এসব সমস্যা জিইয়ে থাকে দশকের পর দশক ধরে। এর অন্যতম কারণ, এ সমস্যায় নিমজ্জিত মানুষেরা ক্ষমতাকাঠামোর একেবারে নিম্নস্তরের এবং তাঁদের কণ্ঠ প্রায় শোনাই যায় না।
আইনের লঙ্ঘন
১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে রাষ্ট্রের এখতিয়ার নির্ধারণ করা আছে। ১৯৮৭ সালের খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি খাসজমি ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। সেই নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করে ১৯৯৭ সালে খাসজমিকে কৃষি ও অকৃষি—এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। কৃষি খাসজমি সাধারণত ভূমিহীনেরা বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকারী।
ভূমিহীনদের জন্য তৈরি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় সবার আগে রয়েছে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এরপরই উড়িরচরের বাসিন্দাদের মতো নদীভাঙা পরিবার। আইনে বলা আছে, খাসজমি বরাদ্দ পেতে হলে ভূমিহীন ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার বা চেয়ারম্যান কর্তৃক সত্যায়িত ২ কপি ছবি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া নাগরিকত্ব সনদ দাখিল করতে হবে।
কিন্তু প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, উড়িরচরে ভূমিহীনের সংজ্ঞার বাইরে বিপুল সম্পত্তি থাকা লোকজন, যাঁরা সেখানকার বাসিন্দাই নন, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে বরাদ্দ।
সীমানাস্তম্ভের ওপারে জায়গা পেতে হলে সন্দ্বীপের ভোটারদের ভোটার এলাকা পরিবর্তনের নির্দেশ জারি করেন সিডিএসপির কর্মকর্তারা। অথচ ভূমিহীন হিসেবে বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনে ভোটার পরিবর্তনের বিধান নেই। তবে এখানেও রয়েছে রহস্য। কারণ, এই নির্দেশ কেবল সন্দ্বীপের ভোটারদের জন্য প্রযোজ্য। তাঁরা চাইলে তাঁদের নতুন এলাকায় ভোটার করা হচ্ছে। কিন্তু ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ভোটাররা চাইলেও পরিবর্তন করতে পারছেন না ভোটার এলাকা।
তবে যাঁদের জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা সবাই একই পরিমাণ জমি পাচ্ছেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘুষের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে জমির পরিমাণ। কেউ দিয়েছেন ১০ হাজার, কেউ ২০ হাজার। কামাল মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মো. ইসলাম (৪৫) জানান, তিনি ৭৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন; তবু জমি পাননি। কাকে ঘুষ দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তিকে তিনি ঘুষ দেন। কিন্তু তাঁকে ভালোভাবে তিনি চেনেন না।
ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনের এ-সংক্রান্ত আইনে কিছু দলিলাদি প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। তবে নদীভাঙনের শিকার বেশির ভাগ মানুষের এসব দলিলপত্র নেই। চরের এসব ঘরে যেখানে বিদ্যুৎই নেই, সেখানে অন্য ইউটিলিটি বিল থাকারও সুযোগ নেই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলাদা কোনো বিধান নেই। নদীভাঙনের শিকার মানুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা দরকার।
ভোটার এলাকা পরিবর্তন বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও জানান, সাবেক একজন জেলা প্রশাসক এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ তাঁরা কেন মানছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজস্ব সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ রকম সিদ্ধান্তের কোনো নথি আছে কি না, এমন প্রশ্নে এ বিষয়ে তাঁর পক্ষে আর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় জানিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদের কার্যালয়ে গেলে তিনি ঢাকায় থাকায় সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনে অনেকবার যোগাযোগের পর একবার কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি এ বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
১৯৮৪ সালের ভূমি সংস্কার আইন রহিত করে ২০২৩ সালের ভূমি সংস্কার আইনে খাসজমির সংজ্ঞা সুস্পষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি নদী বা সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠা চর এবং অতিরিক্ত অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রাপ্ত জমিও খাসজমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উড়িরচরে জেগে ওঠা চর এমনই খাসজমি, যেখানে ভূমিহীন হিসেবে এসব মানুষের অগ্রাধিকারের কথাও আইনে বলা আছে। তারপরও নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হাজারো মানুষের ভূমির অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
ভূমি-বাণিজ্যের হোতা কারা
উড়িরচরে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী উভয় অংশের বাসিন্দারা ভূমি বন্দোবস্তের এই জটিলতাকে অমূলক ও অন্যায্য মনে করছেন। তাঁদের দাবি, কোম্পানীগঞ্জের চর এলাহী ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাসেম সিডিএসপির কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন।
কাসেম মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে ভূমিহীনদের পরিবর্তে কোম্পানীগঞ্জের লোকদের জমির বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন, যাঁরা এখানের বাসিন্দা বা ভূমিহীন কোনোটাই নন।
উড়িরচরের স্থানীয় প্রায় প্রতিটি বাজারে মানুষের সঙ্গে কথা বলে দালাল চক্রের মধ্যে কাসেম মেম্বার, তাজুল ইসলামসহ কয়েকজনের নাম জানা যায়। তাঁদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহীর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক। রাজ্জাক আবার ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন। কোম্পানীগঞ্জ ওবায়দুল কাদেরের জন্মস্থান ও নির্বাচনী এলাকা। কোম্পানীগঞ্জের পৌরসভার নাম বসুরহাট। এর সর্বশেষ মেয়র ছিলেন ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা।
কামাল মার্কেটের বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, অনেক কষ্টে এই জায়গা বসবাসের উপযোগী করেছেন। ২৮ বছর ধরে চলছে তাঁদের নিরন্তর লড়াই। চারপাশে লবণাক্ততার কারণে গোসল বা খাওয়ার পানির ব্যবস্থা ছিল না। প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের একটা পুকুর থেকে খাওয়ার পানি আনতে হতো। এক কলস পানি আনলে তার অর্ধেক থাকত কাদামিশ্রিত। সেটা ফিটকিরি দিয়ে কোনোমতে খেতেন। কিন্তু ছয়-সাত বছর আগে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের একজন এসে নুরুল ইসলামের এই জায়গার মালিকানা দাবি করেন।
উল্লেখ্য, ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। এর পর থেকেই উড়িরচরে কোম্পানীগঞ্জের লোকদের জমির দাবি নিয়ে আসতে দেখছেন স্থানীয় মানুষ। একতরফাভাবে জেলার সীমানাও টেনেছেন ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠরা। ফলে সন্দ্বীপের অনেক মানুষ এখন নোয়াখালীর আওতায় পড়ে গেছেন। এ বিষয়ে এলাকার মানুষ ক্ষোভ জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চর এলাহী ইউনিয়নের চর রমজান, চর উমেদ, চর ল্যাংটাসহ বিভিন্ন মৌজার প্রায় ২০০ একর ‘বয়া সম্পত্তি’ ইউপি সদস্য আবুল কাসেম দখল করে আছেন। সেসব সম্পত্তির ভুয়া মালিক দাঁড় করিয়ে কবলা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ রকম বয়া সম্পত্তির মালিক ও একাধিক ভুক্তভোগীর বক্তব্য প্রথম আলোর কাছে রয়েছে।
শুনানিতে উপস্থিত থাকা এবং প্রভাব খাটিয়ে মানুষকে হয়রানি করার বিষয়ে ইউএনওর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি উড়িরচর নব দিগন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুনানি চলাকালে ইউপি সদস্য কাসেম উপস্থিত লোকজনের হাতে হেনস্তা হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি আর কোনো মন্তব্য করেননি। মুঠোফোনে আবুল কাসেমের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভূমির রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক আবদুল বায়েস মনে করেন, সামাজিক বিভিন্ন নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার গরিব মানুষের অবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা করে। কিন্তু এসব মানুষের কাছে সম্পদ হস্তান্তর করতে রাষ্ট্র রাজি নয়। যত দিন এমন চলবে, তত দিন এসব মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে না। উড়িরচরের মতো চরাঞ্চলের মানুষের ভূমির জটিলতা দূর করতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য অবশ্যই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। চর অর্থনীতি নামে সব চরাঞ্চলের জন্য আলাদা কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।