ধূমপানমুক্ত পরিবেশ অর্জনে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে

তামাক নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক মানদণ্ডে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আইনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা রাখার সুযোগ এর অন্যতম প্রধান কারণ। আজ রোববার বেলা ১১টায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত ‘গ্লোবাল টোব্যাকো এপিডেমিক প্রতিবেদন ২০২৩ এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি’ বিষয়ে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। এর আয়োজন করে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টিটোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে।

ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের প্রতিবেদনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন জনপরিসর ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) থাকলে অধূমপায়ীদের পাশাপাশি সেবাকর্মীরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। থাইল্যান্ড, নেপাল, আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ সূচকে ভালো করলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে ডিএসএ বাতিলের প্রস্তাবসংবলিত খসড়া সংশোধনীটি পাস হলে বাংলাদেশও এসব দেশের কাতারে পৌঁছাবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বন্ধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তবে খসড়া সংশোধনী অনুযায়ী বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন এবং তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ বন্ধ হলে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আরও ভালো করবে। ইতিমধ্যে বিশ্বের ৫০টি দেশ বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে এবং ৬২টি দেশ তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ অর্জনে আমরা আফগানিস্তান ও নেপালের চেয়ে পিছিয়ে আছি। আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আইনের খসড়া সংশোধনীটি যাতে দ্রুত পাস হয়, সে বিষয়ে আমাদের কাজ করে যেতে হবে, হতাশ হওয়া চলবে না।’

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘আইনের খসড়ায় যেসব প্রস্তাবনা আমরা রেখেছি, সেগুলো পাস করতে পারলে ডব্লিওএইচওর পরবর্তী প্রতিবেদনে আমাদেরও অগ্রগতি হবে। তবে তামাক কোম্পানিগুলো এই অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’

ডব্লিওএইচও বাংলাদেশ অফিসের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, খসড়া সংশোধনীতে যেসব ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে, সেগুলোসহ আইনটি পাস হলে বাংলাদেশও সর্বোচ্চ মানদণ্ড অর্জনকারী দেশগুলোর কাতারে পৌঁছার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।

নিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক শাহনাজ মুন্নী বলেন, ‘হোটেল-রেস্তোরাঁয় আমরা প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছি। ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা থাকায় এটি ঘটছে। এই বিধান বাতিল করতে হবে।’

প্রজ্ঞার কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন কর্মসূচির প্রধান হাসান শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানে আত্মার কনভেনর মর্তুজা হায়দার, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়েরসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।