নতুন লতাকাঞ্চন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যানে ফুটেছে নতুন লতাকাঞ্চনছবি: লেখক

দেশের প্রায় সব কটি জাতীয় ও আঞ্চলিক উদ্ভিদ উদ্যান দেখার সুযোগ হয়েছে। আঞ্চলিক উদ্ভিদ উদ্যানের মধ্যে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ উদ্যান তুলনামূলকভাবে বেশ সমৃদ্ধ। এক দশকের বেশি সময় ধরে বিচিত্র উদ্ভিদের সমাবেশ ঘটেছে এই উদ্যানে। ফলে বৃক্ষপ্রেমীদের প্রিয় একটি উদ্যানে পরিণত হয়েছে এটি। নানা কারণে এই উদ্যানে অনেকবার গিয়েছি। কিছুদিন আগে সেখানে একটি নতুন কাঞ্চনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ বোটানি বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান।

গাছটি আগে কোথাও দেখিনি। আমার দেখা এটি একটি নতুন কাঞ্চন ফুল। বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে গাছটির ফুল ও পাতা একেবারেই আলাদা।

২০১৮ সালের দিকে অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান থাইল্যান্ড থেকে গাছটি এনে এখানে রোপণ করেন। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে গাছটি বেশ ঝোপাল হয়ে উঠেছে। এটি মূলত লতাকাঞ্চন। আমাদের প্রকৃতিতেও একটি লতাকাঞ্চন আছে। জন্মে মধুপুরের বনে। বড় বড় গাছ বেয়ে দিব্যি ঝাড়ের মতো থাকতে দেখেছি। আমাদের লতাকাঞ্চন ফুলের রং সাদাটে হলেও এই লতাকাঞ্চন দেখতে আগুনরাঙা।

গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Bauhinia sirindhorniae। এই অঞ্চলের গাছ না হওয়ায় কোনো বাংলা নাম নেই। তবে আঙ্গিক গড়ন ও বর্ণগত সাদৃশ্য বিবেচনায় বাংলা নাম ‘অগ্নিকাঞ্চন’ হতে পারে। কারণ, এই ফুলের পাপড়ির রং ও বিন্যাস অনেকটা আগুনের শিখার মতো। আলংকারিক ফুল হিসেবেও চাষযোগ্য।

নতুন লতাকাঞ্চনের কচি পাতা ও ফুল
ছবি: লেখক

এই লতাকাঞ্চন থাইল্যান্ডের স্থানীয় উদ্ভিদপ্রজাতি। প্রজাতিটির নামকরণ হয়েছে থাই রাজকুমারী মহাচক্রী সিরিনধর্ণের নামানুসারে। সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত চিরহরিৎ বনে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় গাছটি। এই লতাকাঞ্চন কাষ্ঠল লতার গাছ। ডালপালা প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। পাতা পর্যায়ক্রমে, একান্তর, ডিম্বাকৃতি, আগা দ্বিধাবিভক্ত, সূক্ষ্ম শীর্ষ এবং কচি পাতা দেখতে কমলা রঙের। এ ফুলের ব্যাস প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার, পুষ্পবিন্যাস খাড়া এবং পাঁচটি কমলা-হলুদ বা কমলা-লাল পাপড়ি থাকে। এর মধ্যে তিনটি পাপড়ির রং গাঢ় লাল এবং দেখতে কিছুটা আলাদা।

এই গাছের ফল আয়তাকার, শিমের মতো, বাদামি লাল ঢাকনায় ঢাকা। ফলটি ১০ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার চওড়া। ফলের ভেতর ৪ থেকে ৭টি চ্যাপ্টা গোলাকার বীজ থাকে। বীজের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি ঘটে। কাটিং থেকেও চারা করা যায়। বীজ থেকে চারা করার জন্য আগের দিন উষ্ণ পানিতে রাখা হয়। তারপর জৈব দোআঁশ মাটির সঙ্গে মোটা বালু মিশিয়ে তাতে বীজ বসাতে হয়। অঙ্কুরোদ্‌গমের জন্য সময় ১৫ থেকে ৩০ দিন। তৃতীয় বছর থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে।

এই লতাকাঞ্চন অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত। এটি দ্রুত বর্ধনশীল, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে পূর্ণ রোদ ও সুনিষ্কাশিত উর্বর মাটিতে ভালোভাবে জন্মে। শক্তপোক্ত বাহন ব্যবহার করে গাছে উঠতে সাহায্য করে। অপেক্ষাকৃত বৈরী আবহাওয়ায় প্রশস্ত পাত্রে চাষ করা যেতে পারে। পানি সেচ নিয়মিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। বসন্ত-গ্রীষ্মকাল সার প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত সময়।

লতাকাঞ্চনের শুকনা শিকড় ত্বকের জন্য ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ঐতিহ্য আছে। পেশিব্যথায় শাখার আধান ব্যবহার করা হয়।

  • মোকারম হোসেন: প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক