টয়লেট সম্মেলন শুরু: ঢাকায় প্রতিদিন ২৩০ টন মানববর্জ্য উন্মুক্ত জলাশয়ে গিয়ে পড়ছে

আন্তর্জাতিক টয়লেট সম্মেলন ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অতিথিরা। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠান হয়ছবি: ওয়াটার এইডের সৌজন্যে

সাড়ে ছয় কোটির বেশি মানুষ অর্থাৎ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক–তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ নিরাপদ পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থাপনার সুবিধাবঞ্চিত। প্রতিদিন শুধু ঢাকাতেই প্রায় ২৩০ টন মানববর্জ্য উন্মুক্ত জলাশয়ে গিয়ে পড়ছে। এর ফলে গুরুতর পরিবেশদূষণ ঘটছে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক টয়লেট সম্মেলন ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেছেন বক্তারা। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়। ইউনিসেফ, ওয়াটার এইড, এসএনভি এবং আইটিএন-বুয়েট এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, খোলা জায়গায় মলত্যাগ শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়; তবে এই ক্ষতিকর চর্চা বন্ধে বাংলাদেশ অন্যন্য দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত এবং প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করেছে, যার ফলে শিশুরা উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু গত বছর আমরা সবাই দেখেছি, ফেনীর ঐতিহাসিক বন্যার মতো জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে এসব অগ্রগতিকে নিমেষে ধংস হয়ে যেতে, দেখেছি জরুরি সব অবকাঠামোকে নিশ্চিহ্ন হতে, যার ফলে শিশুরা আবার খোলা জায়গায় মলত্যাগে বাধ্য হয়েছে।

রানা ফ্লাওয়ার্স আরও বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে। যথাযথ পয়োনিষ্কাশনের অভাবে তাদের সুস্থভাবে ও নিরাপদে বেড়ে ওঠা বিঘ্নিত হয়। নারী ও শিশুসহ সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য যথাযথ পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দরকার। সেই সঙ্গে ওয়াশ (পানি, পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি) খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা দরকার। দরকার ভূপৃষ্ঠের উপরিতলের পানির দূষণ ও এর ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি টেকসই সমাধান ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামোগুলোকে জোরদার করা।

টয়লেট সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় প্রদর্শনীর
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, বিশ্বব্যাপী চলমান পয়োনিষ্কাশন (স্যানিটেশন) আন্দোলনে টয়লেট সম্মেলনে ২০২৫–এর গুরুত্ব ব্যাপক। এর মাধ্যমে টয়লেট বা শৌচালয়কে উপেক্ষিত একটি চাহিদা থেকে মর্যাদা, সুস্বাস্থ্য এবং উদ্ভাবনের প্রতীক হিসাবে রূপান্তর করার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। এই সম্মেলন কেবল একটি আলোচনা নয়; এটি পুরোনো অভ্যাসকে চ্যালেঞ্জ করে; আহ্বান জানায় কার্যকরী, উপযুক্ত ও অত্যাধুনিক সমাধানগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য, আর আহ্বান জানায় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, টেকসই পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য যথাযথ পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থাকে অপরিহার্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য।

হাসিন জাহান বলেন, ‘প্রতিটি শিশুর স্কুলে টিকে থাকার জন্য একটি শৌচাগার প্রয়োজন। প্রতিটি নারীর মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য নিরাপদ পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার প্রয়োজন। আমাদের গ্রহকে রক্ষা করার জন্য কমিউনিটিতে সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা উচিত। উপযুক্ত শৌচাগার ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সবার ভাবতে হবে।’

অনুন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের আনুমানিক ৪২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, যা এ দেশের ২০১৮ সালের জিডিপির প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। অবশ্য ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম ২০২২–এ বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বর্তমানে যে গতিতে কাজ হচ্ছে তা অন্তত আট গুণ বাড়ানো প্রয়োজন।

গেটস ফাউন্ডেশন, কিম্বার্লি-ক্লার্ক, কিংডম অব নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা এবং ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এই সম্মেলনটি আয়োজনে সহযোগিতা করেছে। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘স্যানিটেশনের ভবিষ্যৎ’।