চন্দনের সৌরভ ও সৌন্দর্য

চন্দনের ফুল
ছবি: লেখক

শ্বেতচন্দন বা প্রকৃত চন্দনগাছ আমাদের দেশে খুব একটা দেখা যায় না। সুগন্ধ ও ঔষধি গুণের জন্যই চন্দনের এত কদর ও সুখ্যাতি। আমরা চন্দন হিসেবে গাছের যে অংশটি ব্যবহার করি, তা প্রধানত কাঠের ভেতরের পরিপক্ব অংশ। এর মধ্যে উদ্বায়ী তেল আছে। এই তেল সুগন্ধি। কাণ্ড অপেক্ষা মূল বা শিকড়ে তেল থাকে বেশি। ঢাকায় বলধা গার্ডেনের সাইকিতে একটি ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে কয়েকটি গাছ দেখা যায়।

দেশের কোথাও কোথাও রক্তনগাছকে ভুল করে চন্দন মনে করা হয়। অথচ গাছ দুটি একেবারেই আলাদা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুষ্প্রাপ্যতা ও সুরক্ষার ঝুঁকির কারণে চন্দনগাছটি আমাদের আড়ালে থেকে যায়। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এ গাছের সঠিক অবয়ব অনেকটাই অচেনা।

এই সুযোগে সঠিক চন্দনগাছ নিয়ে একধরনের রহস্য তৈরি হয়েছে। চন্দনগাছ বলে কিছু ভুল গাছ মানুষকে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভুল গাছ লাগানোর পর যখন জানতে পারছেন এটা প্রকৃত চন্দন নয়, তখন সবাই হতাশ হচ্ছেন।

চন্দনের পাতা
ছবি: লেখক

চন্দন (Santalum album) চিরসবুজ গাছ। সাধারণত ৪ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। চন্দনের আদি আবাস ভারতে হলেও শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও অস্ট্রেলিয়ায় মোটামুটি সহজলভ্য। ভারতের মহিশূর চন্দনের জন্য বিখ্যাত। তবে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতেও ভালো জন্মে।

এ ছাড়া উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ওডিশায়ও চন্দন দেখা যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি গাছ দেখা যায়। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ষোলশহরে অবস্থিত বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ১০ বছর চেষ্টার পর ১০০টি গাছ নিয়ে চন্দনের একটি বাগান গড়ে তুলেছে। ইতিমধ্যে তিন শতাধিক চারাও বিতরণ করা হয়েছে সেই বাগান থেকে।

কেউ কেউ মনে করেন, চন্দনের আদিনিবাস তিমুর। বর্তমান উদ্ভিদ সমীক্ষা অনুযায়ী গাছটি ‘বিপন্ন’। চন্দনের ইংরেজি নাম ‘স্যান্ডাল উড’। উদ্ভিদবিজ্ঞানী লিনিয়াস প্রথম ১৭৫৩ সালে গাছটির প্রজাতি শনাক্তসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেন।

চন্দনগাছ বড় হয় ধীরগতিতে। পরিপক্ব হতে প্রায় ৫০ বছর সময় লাগে। এর শিকড় আংশিক পরজীবী। আশ্রীয় গাছ বা হোস্ট প্ল্যান্ট ছাড়া এটি বড় হতে বেশি সময় নেয়। শ্বেতচন্দনের আশ্রীয় গাছ হিসেবে কালো কড়ই, নিম, সেগুন ইত্যাদি উপযুক্ত বলে মনে করা হয়।

একটি বিশেষ মাধ্যমে চন্দনগাছের শিকড় আশ্রীয় গাছের শিকড়ে সংযোগ ঘটায় এবং খাদ্য সংগ্রহ করে। এ গাছ শিকড়ের সাহায্যে মাটি থেকে চুন ও পটাশ সংগ্রহ করে। পাশাপাশি নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের জন্য আশ্রীয় গাছের শিকড়ের ওপর নির্ভর করে। এ কারণে কোনো পাত্রে বীজ থেকে চারা তৈরির সময় বীজ বপনের আগেই পাত্রে আশ্রীয় গাছের চারা উত্তোলন প্রয়োজন।

চন্দন থেকে চুয়া তৈরি হয় এবং এটি পানের সঙ্গে খাওয়া যায়। এসব ছাড়াও চন্দনবাটা জ্বর, ঘামাচি ও মাথাধরায় বেশ কার্যকর। আবার ক্ষতস্থান সারাতেও চন্দন বেশ কাজে লাগে। বমি, পেটব্যথা ও গনোরিয়ায়ও গাছের বিভিন্ন অংশ কাজে লাগে। সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য কেউ কেউ চন্দনের কাঠ কিংবা আসবাব ঘরে সাজিয়ে রাখেন।

  • মোকারম হোসেন, প্রকৃতি পরিবেশবিষয়ক লেখক