লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে, উপকূলে বৃষ্টির পূর্বাভাস

ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ
ছবি ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে নেওয়া

আন্দামান সাগরের কাছে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়েছে। এটি আগামীকাল শনিবারের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আগামী সোমবারের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপকূলে আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রবল বৃষ্টি শুরু হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করবে কি না, এখনই নিশ্চিত নন দেশের আবহাওয়াবিদেরা।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য ওই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হতে পারে ‘সিত্রাং’। এর প্রভাবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপকূলে আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রবল বৃষ্টি শুরু হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সুন্দরবনসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে দেশটির উপকূলীয় এলাকাগুলোয় ব্যাপক প্রস্তুতি কার্যক্রম নিয়েছে।

তবে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, অক্টোবরের ২৫ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ দেখে তাঁরা বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা দিয়ে থাকেন। তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানুক না–হানুক, এর প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, লঘুচাপটি এখনো আন্দামান সাগরের কাছে অবস্থান করছে। তবে এটি আগামীকাল শনিবার পরিণত হতে পারে নিম্নচাপে । এরপর এটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তবে এটি কোথায় এবং কত শক্তি নিয়ে আঘাত করতে পারে, তা এখনো নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগেভাগে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ু বিদায় নিয়েছে। ফলে এমনিতেই আকাশে মেঘ নেই। যাও ছিটেফোঁটা মেঘ ছিল, তা লঘুচাপ এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে। ফলে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশ মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার। ফলে দিনের বেশির ভাগ সময় ছিল খটখটে রোদ। দিনের তাপমাত্রাও ছিল বেশি। দেশের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে—৩৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সবচেয়ে কম ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়—১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে এই শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। এর দুই বছর পর ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলাও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এরপর ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত করে। এক বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে কোমেন, ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোরা, ২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড় তিতলি, ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফণী, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করে।

অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ উপকূলে প্রায় প্রতিবছর একটি করে ঘূর্ণিঝড় আঘাত করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল ২০২১ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা নাসাসহ বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো একে সুপার সাইক্লোন হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে ঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সুন্দরবনে আঘাত হানায় তা দুর্বল অবস্থায় বাংলাদেশ উপকূলে পৌঁছায়। ফলে সিডর বা আইলার মতো বাংলাদেশে এটি তেমন ক্ষতি করতে পারেনি।