ঢাকায় এত বৃষ্টি, তবু বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষে

বায়ুদূষণফাইল ছবি: প্রথম আলো

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ কমানোর প্রধান দাওয়াই বৃষ্টি। কারণ, প্রাকৃতিক ঘটনা ছাড়া দূষণ রোধে আর কোনো ব্যবস্থাই আসলে নেই। সরকারি নানা উদ্যোগ তো ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। বৃষ্টি হলে নগরীর দূষণ কমে কয়েক দিন, তারপর আবার বাড়ে। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম দেখা গেল।

গতকাল বুধবার রাজধানীতে বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ মাসে রাজধানীতে এটা সর্বোচ্চ বৃষ্টি। তারপরও আজ বৃহস্পতিবার সকালে বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে আছে ঢাকা। বিশ্বের ১২৬ নগরীর মধ্যে এ অবস্থান। আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুমান ১৮৩। এ মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয়। আজ বায়ুদূষণে দ্বিতীয় স্থানে আছে নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১৭০।

বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে।

পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়িতে আজ বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি। আইকিউএয়ারের মানসূচকে সেখানকার গড় বায়ুমান ২১৪। এরপর আছে মিরপুর–৬–এর শিয়ালবাড়ি সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টার, স্কোর ২০৪।

আজ আইকিউএয়ারের দেওয়া সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে পরামর্শ, বাইরে বের হলে নগরবাসীকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।

গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী।
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে আছে কলকারখানা ও যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো। দূষণ রোধে হাঁকডাক ও নানা ধরনের প্রকল্পও কম হয়নি সরকারি স্তরে, কিন্তু দূষণ কমছে না।

দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্চ মাসেও দূষণ পরিস্থিতি ছিল মারাত্মক।

ঢাকার আজকের দূষণ পরিস্থিতি নিয়ে ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার আজ প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি সাধারণত বাতাসের ধূলিকণা ও গ্যাসীয় দূষণ কিছুটা ধুয়ে ফেলে। কিন্তু যখন দূষণের উৎস যেমন যানবাহনের কালো ধোঁয়া, নির্মাণকাজ, ইটভাটা, এবং শিল্প কারখানার নির্গমন—চলতেই থাকে, তখন বৃষ্টিও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে না।

কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আজ আবার বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে - এটা কেবল প্রাকৃতিক কারণ নয়, এটা মানবসৃষ্ট অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি। আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নিই, তাহলে অচিরেই পরিবেশ ও স্বাস্থ্য দুইই মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। আজ ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ২০ দশমিক ৪ গুণ বেশি।