মা–হারা উল্লুকছানা

মানুষের যত্ন-আদরে থাকা উল্লুকছানা। গত শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া বন্য প্রাণী উদ্ধারকেন্দ্রে
ছবি: প্রথম আলো

কাছে মা নেই। এ এক অসীম শূন্যতা। সেই শূন্যতা কিছুটা ভরিয়ে দিতে যত্নআত্তি চলছে পুরোদমে। ডান হাতে ব্যথা, বাঁ হাতে খেতে হচ্ছে। তার আদুরে আদুরে ভাব। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়ে।

গল্পটি একটি মেয়ে উল্লুকছানার। দুষ্টচক্রের হাতে পাচার হতে হতে বেঁচে গেছে। বয়স চার থেকে পাঁচ মাস হবে। বর্তমানে লালিত-পালিত হচ্ছে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া বন্য প্রাণী উদ্ধার কেন্দ্রে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেল, গত ২৬ সেপ্টেম্বর উল্লুকছানাটি উদ্ধার করে কুমিল্লা বন বিভাগ। বান্দরবান-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে এটি খুলনাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে করে পাচার করা হচ্ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই অভিযান চালানো হয়েছিল।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কুমিল্লায় উল্লুকছানাটি রাখার মতো পরিবেশ নেই। তাই খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে এটি সেখান থেকে জানকিছড়ায় আনা হয়।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উল্লুকছানাটির ডান হাতে আঘাত ছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই। এ হাতটি ভালো করে ওঠাতে পারে না। তাই বাঁ হাতে কলা খাচ্ছে। এটি খুব আদুরে। গায়ে হাত দিলে মানবশিশুর মতো চোখ বন্ধ করছে, ঘুমিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে কিছুটা ভীত ছিল। এখন সেই ভাব নেই। এটিকে যেখানে রাখা হয়েছে, তার পাশেই উল্লুক ডাকে। পরিবেশটা তার উপযোগী। একটু বড় হলে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) বাংলাদেশের লাল তালিকা অনুযায়ী, উল্লুক বাংলাদেশে অতি বিরল স্তন্যপায়ী একটি প্রাণী। উল্লুক সাধারণত ফল খায় আর উঁচু গাছে বাস করে। গাছে গাছেই এদের সারা জীবন কেটে যায়। মাটিতে নামার ঘটনা খুবই কম। বনমানুষ, নরবানর, হুতু বান্দর বা কালা বান্দর নামেও এর পরিচিতি আছে। এরাই এ দেশের একমাত্র লেজবিহীন বানর। ইংরেজি নাম ওয়েস্টার্ন হুল্লুক গিবন বা হোয়াইট-ব্রাউড গিবন। বৈজ্ঞানিক নাম Hoolock hoolock। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও মিয়ানমারে উল্লুক দেখা যায়।

উল্লুক উচ্চতায় ৪০-৬৩ সেন্টিমিটার। তবে সোজা হয়ে দাঁড়ালে এক মিটার পর্যন্ত হতে পারে। হাত অস্বাভাবিক লম্বা—পায়ের প্রায় দ্বিগুণ, দাঁড়ানো অবস্থায় মাটি ছুঁই ছুঁই করে। ওজন ছয় থেকে আট কেজি।

বয়স ও লিঙ্গভেদে দেহের রঙের তারতম্য হয়। ভ্রু ছাড়া পুরুষগুলোর পুরো দেহ কালো লোমে আবৃত থাকে। স্ত্রীগুলো হলদে-ধূসর রঙের। ভ্রু সাদা ও চোখের চারদিকে থাকে সাদা বলয়। হাত-হাত ও পায়ের আঙুল কালো। বাচ্চাগুলোর লোম ধূসর-সাদা, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা কালো হয়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী উল্লুক হলদে-ধূসর বর্ণ ধারণ করে।