সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য পাহাড় শ্রেণির ভূমি বরাদ্দের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের জিলনজা মৌজার ৫ একর পাহাড় শ্রেণির ভূমি সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। মৌজাটির (বিএস ১৭০৭০ নম্বর দাগে অবস্থিত) ৪৯ দশমিক ৯৭ একর পাহাড় শ্রেণির জমির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে তা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলার পরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ রোববার বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে জিলনজা মৌজায় পুনরায় পাহাড় কাটা ও পাহাড়ের ক্ষতি বন্ধ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ওই রিটটি করে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে কক্সবাজার জেলার ১০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর এলাকাকে সরকার ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। সেখানে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার অন্যান্য মৌজার মধ্যে জিলনজা মৌজাও রয়েছে। জিলনজা মৌজার বিএস ১৭০৭০ নম্বরে দাগে ৪৯ দশমিক ৯৭ একর পাহাড় শ্রেণির জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের অনুকূলে রেকর্ডে রয়েছে। ২০১০ সালের ৫ মে এক স্মারকের মাধ্যমে দেখা যায়, ওই মৌজার (বিএস ১৭০৭০ নম্বর দাগ) ৫ একর পাহাড় শ্রেণির ভূমি সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য ভূমি বরাদ্দ জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ না হওয়া সত্ত্বেও পাহাড় শ্রেণির ভূমিতে আবাসনের প্রস্তাব বাতিল না করে তা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। প্রচলিত আইন অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড় কাটা বা মোচন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বেলা জানায়, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে অবস্থিত সব পাহাড় কাটা বন্ধে এক মামলায় ২০১২ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আদালত সব পাহাড়ের তালিকা (দাগ ও খতিয়ানসহ) এবং পাহাড়গুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও তা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগে বিদ্যমান পাহাড়গুলো ক্ষতি, ধ্বংস ও কাটা হতে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে; পাহাড় কাটায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রতিটি পাহাড়ে প্রদর্শন করতে বলা হয়। ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে, এমন পাহাড়গুলোতে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে ও দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত রাখাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। আইনি বিধিনিষেধ ও আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও জিলনজা মৌজার ওই দাগে নতুন করে পাহাড় কাটা শুরু করলে ১৩ জুলাই বেলা ওই রিটটি করে।

পরে বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, জিলনজা মৌজার ওই দাগে অবস্থিত ৪৯ দশমিক ৯৭ একর পাহাড় রক্ষায় ব্যর্থতা কেন আইনবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই দাগে অবস্থিত অবশিষ্ট পাহাড় রক্ষার এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পরিবেশসচিব, ভূমিসচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারসহ আট বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।