পুকুর কী? পুকুর কেন মনোযোগ দাবি করে?
পুকুর কী, তা প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তি শনাক্ত বা চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু হ্রদ বা জলাভূমি থেকে পুকুরের পার্থক্য ঠিক কী, এটা বলা কিছুটা শক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় পুকুরের একটি ব্যবহারিক সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং পুকুরের প্রতিবেশগত গুরুত্ব তুলে ধরেছে। বিজ্ঞান ও নীতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে ওই গবেষণার বৃহত্তর তাৎপর্য রয়েছে।
সার্বজনীন সংজ্ঞা না থাকার কারণে অনেক বিভ্রান্তি হয়। মানুষ পুকুরের সঙ্গে হ্রদের পার্থক্য করতে পারে না। সরকারি সংস্থাগুলো পানিভিত্তিক নানা কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ও নজরদারি করতে পারে না। এমনকি বৈশ্বিক কার্বন বাজেট নিয়ে আলোচনাতেও ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এসব কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশনারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেরিডিথ হলগারসন। এ নিয়ে তাঁদের একটি প্রবন্ধ গত মাসে বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্টিফিক প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকেরা পুকুরকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেন, তা মূল্যায়ন করেছেন। পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করেছেন, ব্যবহারিকভাবে পুকুরের সঙ্গে হ্রদ ও জলাভূমির পার্থক্য কোথায়?
তাঁরা বলছেন, পুকুর হচ্ছে ছোট ও অগভীর জলরাশি। পুকুরের সর্বোচ্চ আয়তন ৫ হেক্টর। এর সর্বোচ্চ গভীরতা ৫ মিটার। এর ৩০ শতাংশজুড়ে থাকে উদ্ভিদ, গুল্ম বা শেওলা।
বিশ্বের ৯০ শতাংশ ছোট ছোট জলরাশি আয়তনে ছোট, এদের আয়তন ১০ হেক্টরের কম। বিশ্বে লাখ লাখ, বলা যায় কোটি কোটি পুকুর আছে। এসব পুকুর নিয়ে কোনো পরীক্ষা–নিরীক্ষা বা গবেষণা হয়নি এবং পুকুরগুলো সরকারের সংরক্ষণ কর্মসূচির বাইরে থেকে যাচ্ছে। এর একটি কারণ, পুকুরের আধিক্য। অন্য কারণ হচ্ছে, সরকারি সংস্থাগুলো পুকুর, হ্রদ বা জলাভূমির পার্থক্য ধরতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাববিষয়ক আলোচনায় পুকুরের হিসাব–নিকাশ থাকছে না।
পুকুরের সংজ্ঞা ঠিক করার জন্য মেরিডিথ হলগারসন ও তাঁর সহকর্মীরা প্রাসঙ্গিক ৫০০ বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থা পুকুর নিয়ে কী করছে, তা নিয়ে জরিপ করেছেন। গবেষকেরা দেখেছেন, হ্রদ বা জলাভূমি আর পুকুর এক নয়। পুকুরের প্রতিবেশগত কাঠামো ও পুকুরের ভূমিকা জলাভূমি বা হ্রদের থেকে আলাদা।
মেরিডিথ হলগারসন ও তাঁর দলের সদস্যরা পুকুরের ভূমিকা বোঝার জন্য এবং হ্রদ ও জলাভূমির থেকে পুকুরের পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য প্রতিবেশগত কিছু মাপকাঠি ব্যবহার করেছেন। মোট প্রাথমিক উৎপাদন, ক্লোরোফিলের স্তর, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ, উপরিভাগের তাপমাত্রা ওঠানামা, বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে গ্যাস আদান–প্রদান—এসব মাপকাঠি ব্যবহার করে গবেষকেরা দেখেছেন, পুকুর ভিন্নভাবে কাজ করে।
পুকুরের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র আলাদা। সুতরাং জলাভূমি বা হ্রদগুলোকে যেসব মানদণ্ডে পর্যবেক্ষণ করা হয়, পুকুরের ক্ষেত্রে সেগুলো ব্যবহার করা ঠিক হবে না। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, পুষ্টির উপাদান পুকুরের বেশি, মিথেন গ্যাসের নিঃসরণও পুকুর থেকে বেশি হয়। পুকুর পর্যবেক্ষণ করার জন্য পানির মান পরিমাপের নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবনের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
পুকুরের সঙ্গে অনেক মানবিক বিষয় জড়িয়ে আছে। অনেক মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে পুকুরের সঙ্গে। অনেকের আছে মধুর স্মৃতি। পুকুর নিয়ে গবেষণা করা বা পুকুর পর্যবেক্ষণ করার অর্থ মানবিক বিষয় নিয়ে কাজ করা।