বৃষ্টির পরও ঢাকার বাতাস এত দূষিত, নগরীর ৭ স্থানে দূষণ বেশি
ঘূর্ণিঝড়র মোন্থার প্রভাবে গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়, যদিও পরিমাণ বেশি নয়। আর বৃষ্টি হলে সাধারণত ঢাকার বাতাসের হাল ফেরে। কিন্তু গতকালের বৃষ্টির পর রাজধানীর বায়ুর মান ভালো হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্বের ১২৫টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান পঞ্চম। গতকাল এ সময় রাজধানীর অবস্থান ছিল চতুর্থ। আজ সকাল সোয়া আটটার দিকে আইকিউএয়ারের ঢাকার গড় বায়ুমান ১৬০। এই মান অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজ রাজধানীর মোট সাত স্থানে বায়ু অনেক বেশি দূষিত।
বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সেই সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে আছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ৪৯৫। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের দিল্লির স্কোর ৪৪৭। চীনের বেজিং আছে তৃতীয় স্থানে, স্কোর ২০৬। চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তানের আরেক শহর করাচির স্কোর ১৭০।
নগরীর সাত এলাকায় দূষণ বেশি
নগরীর সাত এলাকায় দূষণ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এসব এলাকার মধ্যে শীর্ষে আছে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, স্কোর ১৭০। এই মানকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। অন্য ছয় এলাকা হলো দক্ষিণ পল্লবী (১৭০) বে’জ এজ ওয়াটার (১৬৩), ইস্টার্ন হাউজিং (১৬৩), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (১৫৭), কল্যাণপুর (১৫৬) ও গোরান (১৫১)।
নগরবাসীর জন্য পরামর্শ
আজ ঢাকা ও অন্য শহরগুলোর যে বায়ুমান, এর পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে, জানালা বন্ধ রাখতে হবে, ঘরের বাইরে ব্যায়াম যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। আর যেসব এলাকায় বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর, সেসব এলাকায় অবশ্যই বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে।
বায়ুদূষণে যত ক্ষতি
বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বাহ্যিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের আয়ু গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর কমছে। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের (একিউএলআই) ২০২৫ সালের হালনাগাদ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি)। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
বায়ুদূষণের কারণে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনটিইউ) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাংক গত বছরের মার্চে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালিসিস (সিইএ)’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এ ছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।