জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর রূপরেখা নেই

  • ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিন গুণ বাড়ানোর অঙ্গীকার।

  • রাষ্ট্রগুলোকে কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে।

কপ-২৮

দুবাইয়ে কপ-২৮ সম্মেলনে অবশেষে ১৯৮টির বেশি দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। কিন্তু দুবাই ঘোষণায় এমন সব শর্ত থাকল যাতে কোনো দেশ-ই খুশি বা অখুশি না। সম্মেলনের ঘোষণার নামটিও বেশ নাটকীয়। এর কারিগরি নাম ‘গ্লোবাল স্টকটেক’ বা জিএসটি। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোন দেশ কী পদক্ষেপ নিল, আগামী বছর থেকে তার হিসাব হবে। এসব অঙ্গীকারের রাজনৈতিক নাম দেওয়া হয়েছে ‘শেষের শুরু’। অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে রাষ্ট্রগুলো কার্যক্রম শুরু করল।

দুবাই ঘোষণায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কয়লা-তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বন্ধে অঙ্গীকার করা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া নেই। বিশ্বের ৩৯টি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের জোট এওএসআইএস জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়ে বলেছে, তাদের আপত্তি উপেক্ষা করে ওই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

১৯৮টি দেশ দুবাই ঘোষণায় ঐকমত্য হয়েছে। জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতির তহবিল থেকে অর্থ পেতে বাংলাদেশে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে তাগিদ।

ঘোষণা নিয়ে ১৩৫টি দেশের বিজ্ঞানী, অধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদেরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এসব অঙ্গীকারের কোনো বাধ্যবাধকতা ও সময়সীমা দেওয়া নেই। আসলে পুরো অঙ্গীকার কথার ফুলঝুরি। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থকে আমলে না নিয়ে সম্মেলন শেষ হয়েছে।

স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জোট এলডিসির সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে না বাড়ে, সেই লক্ষ্যে আমরা সফল হয়েছি। প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পর্যায়ক্রমে কমাতে সবাই একমত হয়েছে। এখন সম্মেলনে গঠিত জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা–সংক্রান্ত তহবিল লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড থেকে অর্থ পেতে হলে আমাদের প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো দুবাই ঘোষণায় ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তিন গুণ বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস হিসেবে কম কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানির দিকে যেতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে এ ধরনের ব্যয়বহুল পদক্ষেপে যেতে রাজি হওয়া বেশ উল্লেখযোগ্য অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী ঘোষণা এসেছে। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রগুলোকে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি কয়লায় ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে। তেল ও গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎ, হাইড্রোজেনসহ অন্যান্য কম কার্বন নিঃসরণকারী উৎসে জোর দিতে হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এসব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে হবে। নয়তো এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যাবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সম্মেলনে অংশ নেওয়া জলবায়ু আইনজীবী মো. হাফিজুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে সম্মেলনে ঘোষণা এসেছে। তবে ওই ঘোষণার আলোকে আমরা কীভাবে তহবিল থেকে অর্থ পাব, দেশের জলবায়ু বিপন্ন মানুষের জন্য কীভাবে ব্যবহার করব, সেটির পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’

জিএসটিতে বলা হয়েছে, এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে ধরে রাখতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২০১৯ সালের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কমাতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রগুলো প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়ন করলেও বিশ্বের তাপমাত্রা এই শতাব্দীতে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

আশার কথা, সম্মেলনের শেষ দিনেও জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি তহবিলে আরও ১০ কোটি ডলার জমার অঙ্গীকার এসেছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত তহবিলে শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো ৮০ কোটি ডলার দেওয়ার অঙ্গীকার করল। এর আগে গঠিত সবুজ জলবায়ু তহবিলে (জিসিএফ) ৩১টি দেশ ১ হাজার ২৮০ কোটি ডলার অর্থ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

এবার সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অংশ নেননি। সম্মেলনে সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞানী-গবেষক, অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক অংশ নেন।