বায়ুদূষণে দেশ হিসেবে শীর্ষে বাংলাদেশ, নগর হিসেবে দ্বিতীয় ঢাকা

বায়ুদূষণফাইল ছবি

বায়ুদূষণে ২০২৩ সালে দেশ হিসেবে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশে। আর নগর হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ নগর ছিল ঢাকা। নগর হিসেবে একেবারে শীর্ষ অবস্থানটি ছিল ভারতের রাজধানী দিল্লির।

আজ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৩’–এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক আইকিউএয়ারের সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরেই এই বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম।

এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৬ গুণ বেশি।

দেশের নিরিখে বাংলাদেশের পরই আছে পাকিস্তান। দেশটির বায়ুতে ২০২৩ সালে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৭৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে দেশের বায়ুমান নিয়ে গবেষণার কাজ করছেন। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, পিএম ২.৫ মূলত ধূলিকণা। এটি স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক। কণাগুলো ফুসফুস ও রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে থাকে।

অধ্যাপক সালাম বলেন, ‘‘দেশ হিসেবে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ যে শীর্ষ স্থান পেল, এটা আমাদের জন্য বিপদের সংবাদ। আমরা আমাদের সৃষ্টি করা নানা দূষণের মাধ্যমে বায়ুর এ অবস্থা করে ফেলেছি। দেশের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ে যাঁরা দায়িত্বে, তাঁদের এখন অনেক বেশি সজাগ হওয়ার দরকার। নয়তো ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এক দুর্বিষহ অবস্থা অপেক্ষা করছে।’

২০২২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের দূষিত বাতাসের দেশের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে ছিল এবং ভারতের অবস্থান ছিল অষ্টম। আর ২০২২ সালে বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৬৫ দশমিক ৮। অর্থাৎ এক বছরে এর পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়েছে।

নগর হিসেবে দূষণের দিক থেকে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এ নগরের বায়ুতে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ছিল ৮০ দশমিক ২ মাইক্রোগ্রাম। আর এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নয়াদিল্লির বাতাসে পিএম ২.৫–এর উপস্থিতি ৯২ দশমিক ৭ মাইক্রেোগ্রাম।

পরিবেশবিশেষজ্ঞ ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফিরোজ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইকিউএয়ারের এই প্রতিবেদন একটি অশনিসংকেত। আমাদের নগর আর পুরো দেশের জন্যই জরুরি ভিত্তিতে বায়ুদূষণরোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব উৎস থেকে দূষণ হচ্ছে, সেখানে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর সময় এসেছে। এখানে কোনো আপসের সুযোগ নেই।’

২০২৩ সালে শুধু অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রেনাডা, আইসল্যান্ড, মরিশাস ও নিউজিল্যান্ড বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড বজায় রাখতে পেরেছে।

১৩৪টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।