‘অচেনা’ গাছের বাগান করতে কাটা হচ্ছে চেনা ২০০ গাছ

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গড়া হবে ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’। এ জন্য কাটা হচ্ছে প্রায় ২০০ গাছ।

গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে গুঁড়ি। গতকাল রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চিড়িয়াখানা ও উদ্যানে
প্রথম আলো

বিরল, বিপন্ন, বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ গাছে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হবে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। গড়া হবে ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’। এ জন্য কাটা হচ্ছে অতিচেনা প্রায় ২০০ গাছ।

প্রায় ৩৩ একর আয়তনের উদ্যানটি একসময় গাছে ঠাসা ছিল। এর আগে উদ্যানের ভেতরে নভোথিয়েটার করার জন্য শতাধিক গাছ কাটা হয়। সেবার নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করা হয়। এবার বন বিভাগের কাছে গাছ কাটার আবেদন করা হলেও তা এখনো প্রক্রিয়াধীন।

গতকাল শুক্রবার সকালে চিড়িয়াখানায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তত্ত্বাবধায়কসহ একদল কর্মচারী সঙ্গ নিলেন। তাঁরা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন কোন গাছটি কী প্রয়োজনে কাটা হচ্ছে। বললেন, আগের সব গাছই অপরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে। ভেতরে রোদ পড়ার মতো অবস্থা নেই। আবার একই প্রজাতির অনেক গাছ রয়েছে। এগুলোর এত দরকার নেই। কোনোটা হেলে পড়েছে। ডাল ভেঙে রয়েছে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণেই পুরোনো গাছ কেটে নতুন করে লাগানো হবে। চিড়িয়াখানার ভেতরে ঘুরতে ঘুরতেই দলের একজনের ওয়্যারলেস সেটে একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘সব কাটা গাছ আগে সরিয়ে ফেলতে হবে। তারপর যেন নতুন গাছে হাত দেয়।’

ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একটি গাছের গোড়া টাইলস দিয়ে বাঁধানো। কিন্তু সেখানে গাছ নেই। গুঁড়ি পড়ে আছে। বাঁধানো গোড়া থেকে তখনো গাছ কাটার বৈদ্যুতিক যন্ত্রটি সরানো হয়নি।

ঘড়িয়ালের পুকুরের দক্ষিণ পাশে গিয়ে দেখা যায়, কাটা গাছের গুঁড়ি করাত দিয়ে কেটে ছোট করে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। দক্ষিণ দিকে কৃত্রিম পাহাড়ি ঝরনার পাশে অনেকগুলো মেহগনি গাছ কেটে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গোড়া এখনো মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়নি। একটি বড় গাছের গোড়া খুঁড়ে রাখা হয়েছে। একটি গাছ কেটে শুধু বের করে নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ফেলে রাখা হয়েছে।

কর্মচারীরা বললেন, এখানে এত মেহগনি গাছের দরকার নেই। পরিকল্পিতভাবে বিরল প্রজাতির সব গাছ এ জায়গায় লাগানো হবে। এ বিষয়ে তাঁরা সিটি করপোরেশনের উদ্যানতত্ত্ববিদ শেখ হেলেনার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে শেখ হেলেনা বললেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’ করবেন। এখানে পরিকল্পিতভাবে বিরল, বিপন্ন, বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ গাছ লাগানো হবে; যেগুলো সংরক্ষণ করা দরকার। চিড়িয়াখানার ভেতরে বিভিন্ন রাস্তা এবং স্থাপনা ও বৈদ্যুতিক লাইনের সঙ্গে মিলিয়ে এমনভাবে গাছগুলো রোপণ করা হবে; যাতে ২০ বছর বা ৫০ বছর পরও গাছের কারণে কোনো সমস্যা না হয়। তিনি বলেন, আমগাছ, জামগাছ, নিমগাছ, মেহগনিগাছ—এসব অতিচেনা। এগুলো দেখতে কেউ টিকিট কেটে ঢুকবেন না। এমন গাছ লাগানো হবে, যেগুলো মানুষ সচরাচর দেখতে পান না। মেয়র দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে কাজটি করছেন।

চিড়িয়াখানার কয়েকজন কর্মচারী বলেন, ব্রিটিশ আমলের ঘোড়দৌড়ের মাঠকে একসময় বানানো হয়েছিল শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। সেই মাঠ এখন যেমন মানুষের কাছে স্মৃতি হয়ে গেছে। দুই বছর আগে চিড়িয়াখানার ভেতরে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের জায়গা করার জন্য কেটে ফেলা হয় শতাধিক গাছ। একসময় এই চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, ভালুক, হায়েনা, উট, বিদেশি ষাঁড়সহ বিচিত্র সব প্রাণী ছিল। তাদের স্মৃতি নিয়ে পড়ে রয়েছে শুধু খাঁচা। এখন বিরল প্রজাতির গাছ বিনোদনের বিষয় হবে।

জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, প্রায় ১০০ প্রজাতির বিরল গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য অপরিকল্পিতভাবে লাগানো ছোট কিছু গাছ কাটা হচ্ছে। গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন।