অনিন্দ্য তামাটে কাঠকুড়ালি

তামাটে কাঠকুড়ালি, পাবলাখালী অরণ্যে
ছবি: সায়েম ইউ চৌধুরী

কাঠঠোকরা বা কাঠকুড়ালি বর্ণিল রঙের লম্বা ঠোঁটের আকর্ষণীয় পাখি। গাছের কাণ্ডে ও শাখায় জোড়া পায়ে হেঁটে বা ছোট লাফ দিয়ে বিচরণ করে। বাংলাদেশে ১৯ প্রজাতির কাঠঠোকরার দেখা মেলে। কয়েকটি প্রজাতি আমাদের গ্রামীণ বনে, শহরের পার্কে ও উদ্যানে চরে বেড়ায়। তবে অধিকাংশ প্রজাতির বাস গহিন বনে।

দেশের মধ্যাঞ্চলের শালবন, সিলেট, চট্টগ্রামের বন ও সুন্দরবনেই কেবল অন্য প্রজাতিগুলোর বসবাস। কিছু প্রজাতির বসবাস রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের গহিন বনে। এসব বনে পাখিশুমারি ও গবেষণা কম হওয়ার কারণে এর সঠিক সংখ্যা নিয়ে কোনো তথ্য নেই। দেশের কয়েকজন পাখি গবেষকের কারণে বিরল কিছু কাঠঠোকরার সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মধ্যে জানামতে তামাটে কাঠকুড়ালি কেবল কাপ্তাই, সাঙ্গু মাতামুহুরী ও পাবলাখালী অরণ্যে দেখা গেছে।

এক শীতে সাঙ্গু সংরক্ষিত বনে গিয়ে দেখা হয়েছিল বিরল এ কাঠঠোকার সঙ্গে। গহিন বনের পাশে অবস্থিত মালিঙ্গার পাড়ার এক মাঠের কোণে আমাদের তাঁবু পাতা ছিল। কনকনে ঠান্ডার শীতের সকালেই পাখির ডাক শোনা যেত। সে কী সব মধুর কণ্ঠ! অজানা এসব পাখির ডাকে আমরা কজন খুব সকালেই তাঁবু থেকে বনে বেরিয়ে পড়তাম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও পাখির ডাক শোনা যেত। সেই অরণ্য সফরে আমার নিয়মিত পাখি দেখার সঙ্গী ছিল তরুণ বন্য প্রাণী গবেষক রাজিব রাশেদুল কবির। একদিন রাজিব তামাটে কাঠকুড়ালি দেখে ছবি তোলে ও আমাকে দেখায়। আমি কেবল পাখিটির ডাক শুনেছি ও উড়ে যাওয়াই দেখেছি সেদিন। অন্য একদিন বনের আরেকটি পাড়ায় গিয়ে তাকে পরিপূর্ণভাবে কিঞ্চিৎ সময় দেখতে পেয়েছি। পাহাড়ের বনে উচ্চ স্বরে ডাক দিয়ে এ গাছ থেকে ও গাছ ঘুরে বেড়ায় তামাটে কাঠকুড়ালি। সাধারণত খাবার খোঁজে। খাবারের সন্ধান পেলে বিরতি দেয়, নইলে দ্রুতই উড়ে যায়।

পৃথিবীর পাখির তথ্য সংগ্রহকারী বিখ্যাত ওয়েবসাইট ই-বার্ড ডেটাবেইসের (নভেম্বর ২০২১) দেওয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে এ পাখিকে মাত্র ১২ বার দেখা গেছে এবং অন্য দেশের প্রাকৃতিক বনের মধ্যে ভুটানে ৫৮৭ বার, ভারতে ১ হাজার ৩৩৫, মিয়ানমারে ১৩৮, চীনে ৯৮২, ভিয়েতনামে ৬৮২, লাউসে ২৬, থাইল্যান্ডে ১ হাজার ৫২, কম্বোডিয়াতে ৭৬, নেপালে ৫৮, মালয়েশিয়াতে ৩২২ বার দেখা গেছে।

তামাটে কাঠকুড়ালি পালকের রং অনিন্দ্য, ডাক আকর্ষণীয়। সাধারণত পাখিরা ওড়ার সময় ডাক দেয় এবং অন্য সময় গান গায়। পাখিরা যখন গান গায়, তারাও মানুষের মতো সুর দেয়।