আষাঢ়ে বেশি বৃষ্টি সিলেটে, কম হতে পারে খুলনায়

ফাইল ছবি।

আজ পয়লা আষাঢ়। শুরু হয়ে গেছে বর্ষাকাল। বর্ষার শুরুতেই আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকায় একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আভাস দিচ্ছে বর্ষার শুরুতে, অর্থাৎ জুনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে সিলেট বিভাগে। আর সবচেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে খুলনা বিভাগে।

জুনের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাগজে-কলমে বর্ষা ঋতু (আষাঢ়-শ্রাবণ)। এর মধ্যে জুনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে সিলেটে, সর্বোচ্চ ৬৯৫ মিলিমিটার পর্যন্ত। এরপরই বৃষ্টিপাত বেশি হতে পারে চট্টগ্রামে, ৬৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত। ৫০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে বরিশালে। এ বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ৫৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত।

এ ছাড়া ময়মনসিংহে ৪৭৫, রংপুরে ৪৩০, ঢাকায় ৩৯০ ও রাজশাহীতে ৩৩৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে খুলনায়, অনধিক ৩২৫ মিলিমিটার।

আবহাওয়া অফিস জুন মাসের দেওয়া পূর্বাভাসে বলছে, স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা হতে পারে।

পাশাপাশি বর্ষার শুরুতে দুটি লঘুচাপও তৈরি হতে পারে। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গাঙ্গেয় (উপকূল ঘেঁষে) পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।

ফাইল ছবি।

আবহাওয়াবিদেরা অবশ্য বর্ষার হিসাব করেন মৌসুমি বায়ুর বিবেচনায়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যেদিন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তখন থেকেই বর্ষাকাল ধরেন আবহাওয়াবিদেরা। সেই হিসেবে বর্ষা শুরু হয়েছে গেছে আরও কিছুদিন আগেই। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই দেশে বৃষ্টিপাত শুরু হয়।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষার শুরুটা হয়েছে মূলত টেকনাফে, ৬ তারিখ থেকে। আর সারা দেশে বর্ষা শুরু হয়েছে ১১ তারিখে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু টেকনাফ হয়ে দেশে প্রবেশ করে এবং পরে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এই বায়ু বাংলাদেশ পার হয়ে ভারতের মাঝামাঝি একটা স্থানে গিয়ে আটকে থাকে এবং তিন থেকে চার মাস অবস্থান করে সরে যায়। তত দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়।

বর্ষায় দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে ‘অতি ভারী’ বর্ষণ হতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। যদিও এর মধ্যেই ‘ভারী’ ও ‘অতি ভারী বর্ষণ’ও হয়ে গেছে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে।

দেশের বেশ কয়েক জায়গায় ৭ ও ৯ জুন অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ৯ তারিখে তেঁতুলিয়ায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ ছাড়া ৭ তারিখে চট্টগ্রামে ৯৪ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ১১৮, সন্দীপে ১০১, টেকনাফে ১২৯ ও পটুয়াখালীতে ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

কিছু জায়গায় ভারী বর্ষণও হয়েছে ১০ থেকে ১২ জুন। এর মধ্যে ১০ জুন ভারী বর্ষণ হয় নেত্রকোনায়, ৫৬ মিলিমিটার। এ ছাড়া ১১ জুন কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ৭৩ ও নেত্রকোনায় ৭৬ মিলিমিটার। আবার ১২ জুন সিরাজগঞ্জের একটি এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫১ মিলিমিটার, টেকনাফে ও ভোলায় ৭২ মিলিমিটার করে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, কোনো এলাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৪ থেকে ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে তাকে ‘হালকা বৃষ্টি’ বলে। ১০ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিকে ‘মাঝারি ধরনের বৃষ্টি’, ২২ থেকে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিকে ‘মাঝারি ধরনের ভারী’, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিকে ‘ভারী বৃষ্টি’ ও ৮৯ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হলে ‘অতি ভারী বৃষ্টিপাত’ ধরা হয়।

আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি মাপার জন্য একটি নির্দিষ্ট আকারের পাত্র ব্যবহার করা হয়, যাকে বলা হয় ‘রেইন গজ’। রেইন গজের উচ্চতার দাগকাটা থাকে মিলিমিটারের হিসাবে। খোলা স্থানে রাখা সেই পাত্রে বৃষ্টির পানি জমা হয়। পাত্রে ধারণকৃত পানির গভীরতা কত মিলিমিটার, সেই হিসেবেই মাপা হয় কতটুকু বৃষ্টিপাত হলো।

কী হবে জুলাই-আগস্টে
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়বে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগস্টেও সারা দেশে ‘স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের’ সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।