ইউরেশীয় সোনাবউ

আমগাছের ডালে বসা ইউরেশীয় সোনাবউ। ছবিটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তোলা l লেখক
আমগাছের ডালে বসা ইউরেশীয় সোনাবউ। ছবিটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তোলা l লেখক

দেখেছি হলুদ পাখি বহুক্ষণ থাকে চুপ করে,
নির্জন আমের ডালে দুলে যায়—দুলে যায়—বাতাসের সাথে বহুক্ষণ; —জীবনানন্দ দাশ
হলুদ বর্ণের এ পাখি গ্রামের মানুষের কাছে হলদে পাখি, ইষ্টিকুটুম, সোনাবউ ও বেনেবউ নামে পরিচিত। আমাদের দেশের কিছু পাখির দেহের রং হলুদ। তাই হলুদ রঙের পাখি দেখলেই আপনি তাকে হলদে পাখি বলতে পারবেন না। সারা পৃথিবীতে ২৭ প্রজাতির বেনেবউ ও সোনাবউ আছে। আমাদের দেশে আছে পাঁচ প্রজাতির। এরা হলো কালাঘাড় বেনেবউ, সরুঠোঁট বেনেবউ, কালামাথা বেনেবউ, তামা রং বেনেবউ এবং ইউরেশীয় সোনাবউ। এদের মধ্যে তামা রং বেনেবউ পাখির দেহে কোনো হলুদ রং নেই।

উদ্দেশ্য—সীমান্ত নদী পাগলা দেখতে যাওয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক প্রান্তে এ নদী। আমবাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় ঘন আমগাছের সবুজ পাতার মধ্যে দেখা পাই হলুদ বর্ণের এক পাখির। সবুজ পাতার ভেতর তার সোনালি-হলুদ রং এবং সেই সঙ্গে গোলাপি ঠোঁট চোখে জুড়িয়ে দিয়েছিল আমার। গাছের ডালে ডালে সামান্য বিরতি দিয়ে উড়ে উড়ে পোকা খাচ্ছিল। চুপ করে আমগাছের ডালে কিছুক্ষণ বসে থাকে। মানুষ দেখলে একটু আড়ালে যেতে চায়, যেন নতুন বউ। ডালের আগায় চড়তে পছন্দ করে।
পাখি গবেষক ও বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলাদেশের বহু প্রজাতির পাখির বাংলা নাম দিয়েছেন এবং যেসব প্রজাতি নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে, সেসব পাখিরও নাম দিচ্ছেন। এ নামটি তাঁরই দেওয়া।
ইউরেশীয় সোনাবউকে (Eurasian Golden Oriole) বৃক্ষবহুল, অর্ধ-চিরসবুজ বন, ফলের বাগান এবং গাছসমেত শহরে কালেভদ্রে দেখা যায়। একা বা জোড়ায় থাকে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে রসাল ফল, ফুলের মধু ও পোকা। শীত মৌসুমে নীরব থাকে, কিন্তু গ্রীষ্মে কর্কশ গলায় ডাকাডাকি করে। এটি বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের বনে পাওয়া যায়। ঢাকার রমনা ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গত কয়েক বছর দেখেছি।
এটি লাল চোখ ও নীল পায়ের উজ্জ্বল হলুদ রঙের পাখি। উচ্চতা ২৫ সেন্টিমিটার, ওজন ৬৫ গ্রাম। ছেলে পাখির ডানার মধ্যে এবং গোড়ার পালক হলুদ, ডানার প্রান্ত-পালক ঢাকনিসহ কালো। হলুদ ও কালো লেজ ছাড়া পুরো দেহ উজ্জ্বল সোনালি হলুদ। চোখ গাঢ় লাল, পা ও পায়ের পাতা স্লেট নীল। মেয়ে পাখির পিঠের দিকে হলদে-সবুজ ও দেহের নিচের দিকে ডোরা, চোখ বাদামি-গাঢ় লাল। তরুণ পাখির অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল পিঠ ও দেহতলে মোটা ডোরা আছে। মার্চ-আগস্ট মাসে ৬-১২ মিটার উঁচুতে লম্বা ডালের প্রান্তে ঘাস ও আঁশ দিয়ে বাটির মতো গভীর বাসা বানিয়ে এরা দু-চারটি সাদা ডিম পাড়ে।