এক জায়গায় ১১৩ ইটভাটা বিবর্ণ রাঙ্গুনিয়া

পাহাড় ও কর্ণফুলী নদীবেষ্টিত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সবুজ প্রকৃতি বিবর্ণ হচ্ছে ইটভাটার ধোঁয়ায়। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে, শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত গুমাইবিলে ও পরিবেশ সংরক্ষণে গড়ে তোলা পক্ষীশালার সবুজ বেষ্টনী ঘিরে একের পর এক গড়ে উঠেছে ইটভাটা।
রাঙ্গুনিয়ার তিনটি ইউনিয়নের সীমানা মিলেছে রানীরহাটে। সেখানেই রয়েছে ১১৩টি ইটভাটা। প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ‘সবুজ’ কেড়ে নিয়েছে এসব ইটভাটা। এর বাইরে পক্ষীশালার পাশে গড়ে তোলা হয়েছে আরও ১১টি ইটভাটা। অথচ ২০১৩ সালের পর উপজেলার কোনো ইটভাটারই ছাড়পত্র নবায়ন করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর।
ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া ধোঁয়ায় ন্যাড়া হতে চলেছে গাঢ় সবুজ পাহাড়। পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা রাঙ্গুনিয়ার বেশির ভাগ ইটভাটার মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় ইটভাটার ৬৯টি। জেলা প্রশাসনের হিসাবে ১০৯টি। তবে সংখ্যা যাই হোক, কোনোটির ছাড়পত্র নেই। সেখানকার সব ইটভাটা অবৈধ।’
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, দক্ষিণ রাজানগর, রাজানগর ও ইসলামপুর—এই তিন ইউনিয়নের সীমানা–সংলগ্ন রানীরহাটে ১১৩টি, পক্ষীশালায় ১১টি, গুমাইবিলে একটি, কোদালায় তিনটি ও সরফভাটায় দুটি ইটভাটা রয়েছে। উপজেলার হোসনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন জানান, রানীরহাটে ১১০ থেকে ১১৫টি ইটভাটা রয়েছে।
হোসনাবাদ এলাকায় প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয় পক্ষীশালা। কোদালা বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৬০০ একর বনভূমিতে এই পক্ষীশালা গড়ে তোলা হয়। অথচ সেই পক্ষীশালার পাশেই গড়ে উঠেছে ১১টি ইটভাটা। চিমনির ধোঁয়ায় পক্ষীশালায় এখন পাখির দেখা মেলাই ভার।
পক্ষীশালার সীমানার পাশে গড়ে ওঠা দুটি ইটভাটার মালিক ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করে আমাদের খেতে হয়। তবে ইটভাটা পরিবেশ নষ্ট করছে। কিন্তু আমাদের কোনো বিকল্প ব্যবসার সুযোগ নেই। ২০১৩ সালের পর পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের ছাড়পত্র নবায়ন করছে না।’
রাঙ্গুনিয়ার ইটভাটার মালিকদের সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সদস্য শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে ইট বানানোর পরামর্শ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু আধুনিক কারিগরি পদ্ধতি প্রয়োগ করার জনবল আমাদের দেশে নেই। সরকারের সব শর্ত মেনে ইটভাটা করা যাবে না। আমরা শর্তগুলো সহজ করার পরামর্শ দিয়েছি। ধীরে ধীরে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার শুরু হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের যে আওয়াজ উঠেছে, তা বন্ধ হবে।’
রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলেও গড়ে উঠেছে ইটভাটা। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ফসলি জমির মাটি তুলে ইট বানানো হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি তুলে নিলে পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে গুমাইবিলের অনেক জমি পুকুর-ডোবায় পরিণত হবে।
গুমাইবিলের ইটভাটার মালিক নজির হোসেন বলেন, ‘আমার ইটভাটা ধানি জমির ক্ষতি করছে না।’ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওপরের ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটা চালু রেখেছি।’
জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে রাঙ্গুনিয়ার অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করতে প্রশাসনকে বলতে পারে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ছাড়া এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো এখতিয়ার নেই।’
অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কেন জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ ছালেহ আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়ায় যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে ওঠায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। আমরা শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করব।’