এলিফ্যান্ট রোডে বেশি দূষণ, তাজমহল রোডে কম

ধুলায় ঢাকা যাত্রাবাড়ী। বায়ুদূষণ এই এলাকাটিতেও রয়েছে।
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

২০২০ সালে ঢাকার এলিফেন্ট রোডে বায়ুদূষণ বেড়েছে ৮৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই এলাকার বায়ুর মান ছিল ২৫০ মাইক্রোগ্রাম। আর গত বছর সেই মান পৌঁছেছিল ৪৫৮ মাইক্রোগ্রামে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এই এলাকায় সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। তারপর সেই ময়লা অন্য স্থানে নিয়ে যান। সে কারণে এখানকার বায়ুদূষণ বেড়েছে।

অন্যদিকে তুলনামূলক কম দূষিত এলাকা হলো মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড। এখানে বায়ুর মান ২১৯ মাইক্রোগ্রাম। এই এলাকা আবাসিক হওয়ায়, কোলাহল কম হওয়ায় বায়ুদূষণও খানিকটা কম।

এমন তথ্য উঠে এসেছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ণ কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ ধাপে ঢাকার ৭০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে গবেষক দলটি। আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

গবেষক দলের প্রধান ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বেশির ভাগ ধুলা রাস্তার ওপর থেকে সৃষ্টি। এই ধুলার উৎস হলো যানবাহন, রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি ও বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। এলিফেন্ট রোড ছাড়া নিউ মার্কেট, তেঁজগাও ও আবদুল্লাহপুরে বায়ুদূষণ বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, তেজগাঁওয়ে ভূমির রূপ পরিবর্তন হচ্ছে এবং প্রচুর নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া আবদুল্লাহপুরে মেট্রোরেলের কাজ চলায় দূষণ বেড়েছে।

রাজধানীর বায়ু দূষণ নিয়ে গবেষণার ফল নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে
ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড ছাড়াও আগারগাঁওয়ের শিশু হাসপাতাল এলাকা ও পল্লবীর ডি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়ক এলাকায় বায়ুদূষণ তুলনামূলক কম বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে জানানো হয়, শিশু হাসপাতাল এলাকা কিছুটা নিরিবিলি হওয়ায় এবং পল্লবীর ২৩ নম্বর সড়ক এলাকাটি আবাসিক ও কোনো নির্মাণকাজ না থাকায় সেখানে বায়ুদূষণ কম।

এক প্রশ্নের জবাবে গবেষণা দলের প্রধান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে নিউজিল্যান্ডের তৈরি ‘অ্যারোকল’ নামের বায়ু পরিমাপক একটি যন্ত্র। একেকটি স্থানে বছরের বিভিন্ন সময় চারবার করে পরীক্ষা করে বায়ুদূষণের গড় মান উপস্থাপন করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ও পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে বায়ুদূষণ কমেছে। সচিবালয় এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা এবং শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়ায় সেখানে বায়ুদূষণ কমেছে। এ ছাড়া গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি পার্কিংয়ে শৃঙ্খলা আসায় এবং নির্মাণকাজ কমে যাওয়ায় বায়ুদূষণ কমেছে।

বায়ুদূষণের এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের মতো ২০২০ সালেও পুরান ঢাকার আশপাশের লালবাগ, হাজারীবাগ, কোতোয়ালি, কামরাঙ্গীরচর ও সূত্রাপুরে বেশি বায়ুদূষণ হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় ধানমন্ডি, গুলশান, বাড্ডা ও বনানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গত বছরের তুলনায় বায়ুদূষণ কিছুটা কমেছে।

গত বছর মিরপুরে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ ছিল। কিন্তু এবার খানিকটা কমার কারণ হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালে সংসদ ভবন থেকে শুরু করে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়াখুড়ি ছিল। সেই তুলনায় ২০২০ সালে খানিকটা কম। এ কারণে মিরপুরের বায়ুদূষণ একটু কমেছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলে উন্নয়ন হতে পারে না। তাই উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্প নেওয়ার আগে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। মেট্রোরেল প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এটি ভালো প্রকল্প হলেও পরিকল্পনায় ঘাটতির কারণে এই প্রকল্প থেকে রাজধানীতে বায়ুদূষণ বেড়েছে।

ধুলায় ঢেকে গেছে পথ। সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবীব বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরির্বতন মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ চূড়ান্ত করেছে। কিন্তু সেই আইনটি এখনো পাস হয়নি। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কোন মহলের কারণে এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে?

সভাপতির বক্তব্যে স্টার্মফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুহাম্মদ আলী বলেন, পরিবেশদূষণ রোধে সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বক্তব্য দেন।