ছেঁড়াদ্বীপের ডোডোনিয়া

ছেঁড়াদ্বীপের বেলাভূমিতে ডোডোনিয়া উদ্ভিদ
ছবি: লেখক

নীল-সবুজ জলঘেরা ছেঁড়াদ্বীপে নামার পর কেয়াগুল্মের ঝোপই প্রথম চোখে পড়ে। প্রবাল, নুড়ি-পাথর, বালু ও সামুদ্রিক শামুক-ঝিনুকের খোলসের মিশ্রণের এ ছোট্ট ভূমিতে আছে নানা প্রজাতির বৃক্ষ, গুল্ম, লতা, বীরুৎ ও ঘাস। প্রতিদিন জোয়ারে দূর-দূরান্ত থেকে ভেসে আসে উদ্ভিদের বীজ। ডোডোনিয়ার বীজ ভেসে এসে জায়গা করে নিয়েছে এ দ্বীপে। কয়েক বছর আগে এ দ্বীপে উদ্ভিদ গবেষণার কাজে গিয়ে প্রথম পরিচয় হয় ডোডোনিয়ার সঙ্গে। ছেঁড়াদ্বীপের কেয়া দ্বারা বেষ্টিত ঝোপের একাংশে আছে ডোডোনিয়ার ঝোপ। প্রখর রোদে ডোডোনিয়ার সেই সবুজ রূপের মায়াটা কোনোভাবেই ভোলার নয়!

ডোডোনিয়া মূলত গ্রীষ্ম ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাগরদ্বীপ ও উপকূলের উদ্ভিদ। পুরো পৃথিবীতে ডোডোনিয়ার প্রায় ৭০টি প্রজাতি রয়েছে, যাদের বেশির ভাগ অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে কেবল একটি প্রজাতি দেখেছি।

চতুর্দশ শতকের একজন বিখ্যাত ওলন্দাজ উদ্ভিদবিজ্ঞানী রিমবার্ট ডোডোয়েনসের নাম ও সম্মানে এ উদ্ভিদের নামকরণ করা হয়েছিল। ছেঁড়াদ্বীপ থেকে কয়েকজন উদ্ভিদ অনুরাগী আমাকে ছবি পাঠিয়েছিলেন শনাক্ত করার জন্য। সম্প্রতি ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির একজন কর্মী ইমাম আবেদ সুন্দরবনের ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপ’ (পুটনি দ্বীপ নামেও পরিচিত) থেকে ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়েছেন উদ্ভিদটি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত দ্বীপটি।

দ্বীপের বাসিন্দা হওয়ার কারণে এ উদ্ভিদ আমাদের অনেক মানুষের কাছেই অজানা। চিরসবুজ ও দুর্লভ এ উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Dodonaea viscosa। পরিবার স্যাপেনডিয়েসি। প্রচলিত কোনো বাংলা নাম অথবা স্থানীয় নাম নেই। তবে কিছু ইংরেজি নাম (হুপসিড বুশ, ন্যারো-লেফ হুপবুশ, ভার্নিশ লেফ) আছে।

ফলসহ ডোডোনিয়া
ছবি: লেখক

এটি ছাঁটগুল্ম, প্রায় ৩-৭ মিটার উঁচু হয়। শাখা-প্রশাখা সরু। পাতা সবুজ। ফুল ক্ষুদ্র, রং সবুজাভ হলুদ ও উভলিঙ্গ। বৃতি ৩-৪টি ও

মুক্ত। পাপড়ি নেই। পুষ্পমঞ্জরি প্রান্তীয় পেনিক্যাল, তাতে ফুল ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট থাকে। ফল বৃক্কাকার বা তাম্বুলাকার, ২-৩টি পাখাযুক্ত। বীজ হলুদাভ বা হালকা বাদামি বর্ণের। ফুল ও ফল ধারণ শরৎ থেকে বসন্ত। প্রধানত সাগরের কিনারের বনে, সমুদ্রতটে এবং নুড়িময় দ্বীপে জন্মে। ছায়াময় স্থানে এটি হবে না। এটি প্রখর রোদসহিষ্ণু উদ্ভিদ।

পাতার রস দাঁতের ব্যথা ও জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পাতা ও শিকড় ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতে ফলের বিষাক্ত বীজ মাছের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাণ্ড অত্যধিক

শক্ত ও স্থায়িত্ব ভালো হওয়ার কারণে হাতল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। নিউজিল্যান্ডের

মাউরি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তাদের কুঠারসহ নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের হাতল তৈরিতে এটির কাঠ ব্যবহার করে। তবে জ্বালানি হিসেবেই এটির ব্যবহার রয়েছে। সাগরদ্বীপকে ভূমিক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য এটি রোপণ করা যেতে পারে।