ওখানে হিজল গাছ ছিল এক পুকুরের জলে
বহুদিন মুখ দেখে গেছে তার; তারপর কি যে তার মনে হল কবে
কখন সে ঝরে গেল, কখন ফুরাল, আহা¾চলে গেল কবে যে নীরবে
—জীবনানন্দ দাশ
গ্রীষ্মকাল এলেই গাঢ় রঙের ফুলে ছেয়ে যায় কয়েক প্রজাতির বৃক্ষের ডালপালা। হলুদ, বেগুনি, গোলাপি কিংবা লাল রং। ঝরে পড়া ফুলে ছেয়ে যায় কোনো সবুজ মাঠ বা গাছতলা।
কিন্তু কোন স্থির জলের পুকুরে কাছে থাকা হিজলগাছে ফুল ফুটলে, ঝরা ফুল এক অনন্য আলপনা তৈরি করে পানিতে। জলে ভাসা সে হিজল ফুলের আবেদন নিঃসন্দেহে ভালো লাগার এবং দারুণ উপভোগ্য। এ রূপ দেখার জন্য খুব সকালে যেতে হবে সে জলাশয়ের কাছে। সারা রাত ধরে ঝরে পড়া ফুলগুলো জমা হয় পানির ওপর এবং ছড়িয়ে পড়ে। পুকুর, ছোট মজা জলাশয় যেখানে বাতাসের গতি কম, সেখানেই এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাতাসের গতি বেশি থাকলে ফুলগুলো কিনারে চলে আসে। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের লেকের কাছে কিছু হিজলগাছ আছে। ফুল ফোটার মৌসুমে জলে ভাসা হিজলের রূপ দেখতে চাইলে সেখানে যেতে হবে আপনার।
সবুজ পাতাসমেত হিজলের রূপ এবং গাছভরা ফুলসমেত হিজল দুই–ই সমানভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত। হিজল আমাদের মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া এমন এক বৃক্ষ, যাকে ভুলে থাকা কঠিন। প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ হিজলের কথা বলেছেন বহুবার। আমাদের হাওর এলাকার অন্যতম গাছ হিজল। হিজল দেশের সব
জেলায় আছে। বসতি সংকোচনের ফলে কোন কোন জেলায় হিজলের সংখ্যা কমে গেছে। দেশে দুই রঙের হিজল ফুল চোখে পড়ে। একটি লাল-মেরুন এবং অন্যটি হালকা–কমলা। রঙের এ ভিন্নতা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। ঢাকা শহরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি হিজল আছে, যেটির ফুলের রং হালকা কমলা। প্রতিবছর ফুল ফোটে। দেশের অন্যত্রও কিছু কিছু আছে।
হিজল (Barringtonia acutangula) চিরসবুজ বৃক্ষ। প্রায় ১৫ মিটার লম্বা হতে পারে গাছ। গাছ ধীরগতিতে বেড়ে ওঠে। শোভাবর্ধন, ছায়া প্রদানকারী, বন্য প্রাণীর আবাস এবং জলাশয়ের মাছের আশ্রয়ের জন্য হিজল উপকারী। শিকড়ের নির্যাস রক্তের শর্করার পরিমাণ কমায় ও রেচক। বীজ রেচক ও বলকারক। পাতার রস ডায়রিয়ায় উপকারী। ছেলেবেলায় দেখেছি অনেক পাখি রাতে হিজলগাছে আশ্রয় নিত। তা ছাড়া হিজলগাছের কাণ্ডের ফোকরে শালিক, প্যাঁচা, দোয়েল নিয়মিত বাসা বানায়। দাঁড়াশ সাপও বাস করে হিজলের কোটরে। গ্রামের পুকুরপাড়ে ও শহরে লেকের দুই পাশে হিজলের বীথি হতে পারে। গ্রীষ্মে ফুল ফুটলে সে দৃশ্য মানুষের মনকে আনন্দ দেবে। অন্য বন্য প্রাণীদের জন্যও উপকার হবে।