ঢাকায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি, পানি জমে ভোগান্তি

রাস্তায় পানি জমে নগরবাসীর ভোগান্তি। গ্রিনরোড, ঢাকা, ১২ অক্টোবর।ছবি: সাজিদ হোসেন

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে নিম্নচাপ। মৌসুমি বায়ুও কিছুটা সক্রিয়। এর প্রভাবে দেশের কয়েকটি স্থানে ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আজ সোমবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে । ঢাকার বাইরে ফেনীতে ২২ মিলিমিটার ও নোয়াখালীর মাইজদীতে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, গভীর সাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের কোথাও কোথাও স্থানীয়ভাবে সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে দমকা হাওয়াও ছিল। এ কারণে কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ঢাকায় স্থানভেদে কোথাও ভারী, কোথাও মৃদু বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের মোড়, লালমাটিয়া, আসাদগেট, গ্রিনরোড, সোনারগাঁও মোড়, রামপুরা ও খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকা, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায় দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

তবে অনেক এলাকায় পানি অল্প সময়ের মধ্যে নেমেও গেছে। পানি দীর্ঘসময় জমে না থাকলেও রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

পানি জমা রাস্তায় চলছে রিকশা। গ্রিনরোড, ঢাকা, ১২ অক্টোবর।
ছবি: সাজিদ হোসেন

বেলা একটার দিকে কথা হয় খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আবদুল মোমেনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান সড়কে পানি বেশি সময় জমে থাকেনি। তবে অলিগলিতে এখনো পানি জমে আছে। তিনি জানান, বাসাবো এলাকার কয়েকটি সড়কে তিনি পানি জমে থাকতে দেখেছেন। সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কে বেলা একটার দিকে আর পানি জমে থাকতে দেখা যায়নি। তবে গ্রিনরোডে ঢোকার মুখেই পানি জমে ছিল।

কারওয়ান বাজারে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কয়েকটি সড়কে পানি জমে ছিল। এখানকার একজন ব্যবসায়ী সেলিমুল বললেন, কারওয়ান বাজারে কয়েকটি সড়কে পানি খুব ধীরে ধীরে নামে। তবে প্রধান সড়কের পানি নেমে গেছে। এই ব্যবসায়ী বলেন, আগে সোনারগাঁওয়ের সামনের সড়কে পানি দীর্ঘসময় জমে থাকত। এখন আর সেটা হয় না।

লালমাটিয়ার বাসিন্দা হারুনুর রশিদ জানালেন, আসাদগেট ও ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কের রাপা প্লাজার সামনে পানি জমে গিয়েছিল। এতে যানজট তৈরি হয়। তবে পানি অল্পসময় পরেই নেমে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, নিম্নচাপের কারণে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত আরও দুদিন হতে পারে। তবে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

আজ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,নিম্নচাপটি গত ২৪ ঘণ্টায় পায়রা থেকে ১১১ কিলোমিটার ও মোংলা থেকে ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে সরে গেছে।

পানি জমা রাস্তায় চলছে রিকশা। গ্রিনরোড, ঢাকা, ১২ অক্টোবর।
ছবি: সাজিদ হোসেন

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, নিম্নচাপটি বড়জোর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর যে বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে তাতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল আছে।

চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।