দুর্লভ গাছের সংগ্রহশালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির পেছনে এক দিনও ছোটেননি তানভীর।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে তানভীর আহমেদের নার্সারিতে নতুন প্রজাতির পদ্ম
ছবি: প্রথম আলো

পড়াশোনার পাট চুকিয়ে অনেক তরুণই চাকরির পেছনে ছোটেন। তবে আত্মনির্ভরশীল হতে নিজ থেকেই কিছু একটা করার তাগিদ থাকে কারও কারও। তেমনই এক স্বপ্নচারী তরুণ তানভীর আহমেদ (৩০)।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির পেছনে একদিনও ছোটেননি তানভীর। পড়াশোনার পাট শেষ না হতেই গড়ে তোলেন ব্যতিক্রমী এক নার্সারি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দুর্লভ গাছের সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন। তাঁর নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির পদ্ম ও শাপলা ফুলসহ পাঁচ শ প্রজাতির দুর্লভ গাছ রয়েছে।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের তানভীর কিশোর বয়সেই নার্সারি গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখতেন। আর মায়ের কাছ থেকেই তাঁর এই স্বপ্ন দেখা শুরু। চেষ্টা ও পরিশ্রমে নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এই নার্সারি। অল্প দিনেই সাফল্যও পেয়েছেন তিনি। মাত্র ২০০ টাকা পুঁজি দিয়ে ফুলের বাগান শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর নার্সারিতে ৩০ লক্ষাধিক টাকার দেশি-বিদেশি ফুল, ফল ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছের বিশাল সমাহার।

তানভীর জানান, ১৯৯৬ সালে মা মারা যান। ২০০৯ সালে বাবাও মারা যান। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে পড়ছেন এমন সময় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বৃক্ষমেলায় গিয়ে ব্যতিক্রমী এক ফুল গাছ দেখতে পান। ২০০ টাকা দিয়ে সেই গাছ কেনেন। এরপর সেই গাছ পরিচিত এক শুভানুধ্যায়ীর কাছে ৮০০ টাকায় বিক্রি করেন। সেই থেকে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি করার বিষয়টি তাঁর মাথায় আসে। ওই বছরেই সুলতানপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে স্বল্প পরিসরে নার্সারির কাজ শুরু করেন। এরপর থেকে দেশ-বিদেশির বন্ধুদের সহযোগিতায় দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পদ্ম ও শাপলা ফুলের বীজ ও কন্দ (উদ্ভিদের মূল) সংগ্রহ করতে থাকেন। ধীরে ধীরে নার্সারির পরিধি বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে নিজ গ্রামে এক ব্যক্তির ২৪ শতক উঁচু জমি ইজারা নিয়ে সেখানে গড়ে তোলেন নার্সারি। তিনি বলেন, নার্সারিতে এমন কিছু গাছ আছে, যেগুলো তাঁর হাত ধরেই এ দেশে প্রথম এসেছে। কিছু গাছের নাম ও তিনিই করেছেন। যেমন ‘জলগোলাপ’। বিদ্‌ঘুটে ইংরেজি নাম না দিয়ে নাম রেখেছেন জলগোলাপ। এ গাছটি পানির মধ্যেই হয়। ফুলও খুব সুন্দর সাদা গোলাপের মতো। এ ছাড়া তাঁর নার্সারিতে রয়েছে ‘ব্ল্যাক প্রিন্সেস’ নামের গাঢ় খয়েরি শাপলা। এটি তাঁর নিজের উদ্ভাবিত শাপলার একটা প্রজাতি।

তাঁর নার্সারিতে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, চীনা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনহ আরও কয়েকটি দেশের পাঁচ শতাধিক পদ্ম, জলজ ফুল ও ফল গাছের সংগ্রহ। বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পদ্মফুলের মধ্যে রয়েছে থাউজ্যান্ড পেটালস, ভার্সি কালার, চার্মিং লিপস, ইয়োলো পিওনি, রেড পিওনি, হোয়াইট পিওনি, রেড লিপস, ব্রাইডাল পিঙ্ক, ম্যাগনিফিসেন্ট, রেড বেউজিং, সুপার লোটাস। শাপলার প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ওয়ানভিসা, ব্যাংকক স্লো, মেক্সিকানা, এরিকা, ট্যাংপং ম্যালিক্যান, ব্ল্যাক প্রিন্সেস, ব্যাংকক লাইম, প্যারানি, গোল্ড অ্যাপল, পিঙ্ক অ্যাপল, সোয়ানা, লাভলি মুন, মার্জিয়া, হোয়াইট লাইম, নীলা ও ব্লু নাইল। এ ছাড়া সুগন্ধি ফুলের মধ্যে রয়েছে পার্সিয়ান জুঁই, সরস্বতী চাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, কুসুমচাঁপা, জহুরিচাঁপা, থাই জুঁই ও স্নো ভাইন প্রমুখ। দুর্লভ গাছের মধ্যে রয়েছে হলুদ শিমুল, কোকোলাস, শ্বেত সোনালু, লাল কাঞ্চন, খয়েরি কাঞ্চন, হলুদ কৃষ্ণচূড়া, সাদা কৃষ্ণচূড়া, কলভিলিয়াস, রাজ–অশোক, কনকসুধা, কাইজেলিয়া গোল্ডেন ট্রাম্পেট, গ্লিরিসিডিয়া, লাল ক্যাশিয়া, বাটারফ্লাই পিট্রি, টেবেবুইয়া, নিডল ট্রি, শমীগাছ, কালো জবা, সুগন্ধি জবা ও ইন্ডিয়ান বেল ট্রি। ব্যতিক্রমী দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লাল কলা, লাল কাঁঠাল, ভেরিগেটেড কলা, ফুজি লঙ্গন, ম্যামি সাপোটি, মিসরীয় ডুমুর, আবুই, রোলেনিয়া, অ্যাপ্রিকট, উভারিয়াসহ বিভিন্ন জাতের আম।