দুর্লভ পরিযায়ী লাল গলা

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আরাকুলে একটি পুরুষ লাল গলা পাখি
ছবি: লেখক

প্রথম দেখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমলকীবাগানের পাশের ঝোপে। কিন্তু সঙ্গে ক্যামেরা না থাকায় ছবি তুলতে পারিনি। দ্বিতীয়বারের দেখায় ছবি তুলতে পারলেও মনমতো হলো না। তাই শীতের এক সকালে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আরাকুলে চলে গেলাম। কিন্তু অটোরিকশা থেকে নামতেই মন খারাপ হলো। চারদিক কুয়াশার চাদরে এমনভাবে ঢেকে আছে যে দুহাত দূরেরও কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না! তারপরও কুয়াশার চাদর ভেদ করে জায়গাটির দিকে হাঁটতে লাগলাম। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পর ঝলমলে রোদ এল। আর সেও এসে হাজির হলো তখনই। টার্কি খামারের পাশের ভাগাড়ে দাঁড়িয়ে চমৎকারভাবে লেজ নাচাতে লাগল। আর যায় কোথায়? মনের আনন্দে ক্লিক করে গেলাম।

এতক্ষণ যার কথা বললাম সে মানিক বা চুনি রঙের গলার দুর্লভ পরিযায়ী পাখি লাল গলা বা গুম্পিগোরা। পশ্চিমবঙ্গে গুপিগলা বা গানগুলা নামে পরিচিত। ইংরেজি নাম সাইবেরিয়ান রুবিথ্রট। গোত্র Muscicapidae; বৈজ্ঞানিক নাম Calliope calliope।

মূল আবাস এলাকা সাইবেরিয়া হয়ে মঙ্গোলিয়া, জাপান ও কোরিয়ার উত্তরাঞ্চল এবং চীনের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। শীতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, তাইওয়ান ও ফিলিপাইনে পরিযায়ন করে।

লাল গলার দৈর্ঘ্য ১৪-১৬ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬-২৯ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের ওপরটা জলপাই-বাদামি। বুক-পেটের দুই পাশ হালকা হলদেটে-বাদামি। পেট-পায়ু সাদা। লম্বাটে সাদা ভ্রু। চোখের মণির রং বাদামি। চোখের সামনের অংশ কালো। চোখ ও চঞ্চুর নিচে সাদা পট্টি রয়েছে। চঞ্চু কালচে। পা ও আঙুল মাংসল গোলাপি বা হালকা বাদামি। স্ত্রী ও পুরুষের পালকের রঙে সামান্যই পার্থক্য থাকে। পুরুষের গলায় থাকে উজ্জ্বল লাল ছোপ; স্ত্রীর ক্ষেত্রে যা সাদা।

শীতে দেশজুড়ে বনজঙ্গলের মাঝের ছায়াঢাকা ঘন ঝোপঝাড়, ঘাসবন ও জলাভূমির আশপাশের ঝোপঝাড়, নলখাগড়া ইত্যাদিতে দেখা মেলে এই পাখি। এরা অত্যন্ত লাজুক; সচরাচর একাকী বা জোড়ায় মাটিতে ঝোপঝাড়ের আড়ালে লেজ উঁচিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। পোকামাকড় ও শুককীট প্রিয় খাবার। শামুক এবং ছোট ফলও খেতে পারে। ‘চাক’, ‘লিউ-ইইইই’, ‘উহ-ইউহ’ বা ‘চিক্-চিক্—চিচ্চিরিউইই” শব্দে ডাকে।