নদী হারাচ্ছে মানে আমাদের ঠিকানা হারিয়ে যাচ্ছে: কমিশন চেয়ারম্যান

শেরপুরে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। ছবি: প্রথম আলো
শেরপুরে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেছেন, ‘নদী রক্ষার জন্য অবৈধ দখলকারদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল, দূষণ আর নাব্যতা–সংকটের কারণে নদী আজ হারিয়ে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে। তার মানে আমাদের ঠিকানা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।’

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শেরপুর জেলার নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পবিষয়ক শেরপুর জেলা নদী রক্ষা কমিটির বিশেষ সভায় মুজিবুর রহমান হাওলাদার এসব কথা বলেন। এ সভার প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে রক্ষা করতে হবে। কেউ যদি এটিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, অর্থাৎ, নদী দখল করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে।

শেরপুর জেলা প্রশাসনের প্রশিক্ষণকেন্দ্র তুলসীমালায় অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এই সভার আয়োজন করে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পানি বেশি আসছে। এ কারণে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। এতে দেশের সম্পদ ও জানমাল বিনষ্ট হচ্ছে। নদী রক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সচেতন। তিনি এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ নিয়ে থাকেন। তাই নদীকে দখল করে কোনোভাবেই এটিকে হত্যা করা যাবে না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের জায়গা দখল করে জামালপুরে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কোনোভাবেই এটি কাম্য নয়। নদীকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। নদী রক্ষা হলেই আমাদের দেশ বাঁচবে। নদী রক্ষার জন্য যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তাঁরা আইনের প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হলে সেই কর্মকর্তাদেরও দায়ভার নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনকে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই আসুন, নদী রক্ষায় আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি।’

সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মো. আলাউদ্দিন বলেন, বালুমহলগুলো থেকে সুষ্ঠুভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি রাখতে হবে। নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নদীতীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের শিকার হচ্ছে। তাই কেউ যাতে অনিয়ম করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ব্রহ্মপুত্র নদ যখন খনন করা হবে, তখন খননকাজ যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, সেটি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সভায় জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন মৃগী ও দশআনী নদীর খননকাজ না হওয়ায় গভীরতা কমে গেছে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে উপজেলার চরাঞ্চল ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে এবং এলাকাবাসী চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যথাশিগগির এ দুটি নদীর খননকাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই নদী রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করবে। সরকারের নির্দেশনানুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে যেমন ‘জিরো টলারেন্স’ প্রদর্শন করা হচ্ছে, তেমনি নদী রক্ষার জন্য দখলকারীদের বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ প্রদর্শন করা হবে বলে জানান তিনি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বিশেষজ্ঞ সাজিদুর রহমান সরকার, সৈয়দ মতলুব উর রহমান, উপপরিচালক ফরিদ উদ্দিন পাটোয়ারী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাইদ, সড়ক ও জনপথ, শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহম্মেদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুর রহমান, পৌর প্যানেল মেয়র আতিউর রহমান প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ বি এম এহছানুল মামুন।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এ টি এম জিয়াউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নমিতা দে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহম্মেদসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।