নষ্ট হচ্ছে পথ, মারা পড়ছে হাতি

  • চলতি বছর হত্যার শিকার ১১টি হাতির মধ্যে সাতটিকে মারা হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে।

  • বাকি চারটিকে গুলি করে মারা হয়েছে। এর মধ্যে তিন বছরের একটি হাতিও ছিল।

কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালা জঙ্গলে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত অবস্থায় পড়ে আছে বন্য হাতিটি। পরে তাকে আর বাঁচানো যায়নি। গত সোমবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

১৭ বছরে দেশে মানুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ৯০টি হাতি। এর মধ্যে শুধু চলতি বছর ১১টি হাতি মেরে ফেলা হয়েছে। এই হিসাব প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন ও বন বিভাগের।

সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে হাতির বিচরণের পথ দ্রুত কমে আসছে। গত ছয় বছরে বন্ধ হয়ে গেছে হাতি চলাচলের তিনটি করিডর। এসব কারণে নিয়মিত চলাচলের পথ ব্যবহার করতে পারছে না হাতি। বাধ্য হয়ে প্রাণীটি মানুষের বসতি এলাকা দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছে। আর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে এসব হাতির ওপরে হামলা চালিয়ে হত্যা করছে।

১৭ বছরে মানুষের হাতে মারা পড়েছে ৯০টি হাতি। এর মধ্যে চলতি বছর ১১টি।

আইইউসিএন ও বন বিভাগের হিসাবে, গত শতাব্দীর শেষের দিকেও দেশে হাতি ছিল ৫০০টি। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, হাতির সংখ্যা ২৬৩টি। দেশের মোট হাতির ৫৫ শতাংশই থাকে কক্সবাজার এলাকায়।

আইইউসিএনের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর হত্যার শিকার ১১টি হাতির মধ্যে সাতটিকে মারা হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে। বাকি চারটিকে গুলি করে মারা হয়েছে। এর মধ্যে তিন বছরের একটি হাতিও ছিল। এ বছর হাতি হত্যার সব কটি ঘটনাই ঘটেছে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি এলাকায়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত জামালপুর ও শেরপুর এলাকায় মানুষের হাতে হাতি মারা পড়ার ঘটনা বেশি ঘটত। তবে তিন বছর ধরে মূলত কক্সবাজার এলাকায় হাতি হত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে।

হাতির বিচরণের পথ দ্রুত কমে আসছে। এতে বসতি এলাকায় আসা হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত বাড়ছে। বনের আশপাশের বাসিন্দাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হাতি যদি ফসলের ক্ষতি করে, তাহলে তাঁরা তা পুষিয়ে দেবেন। গত বছর হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জন্য ৫৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে
মিহির কুমার দো , বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক

হাতির অন্যতম বিচরণ এলাকা টেকনাফ ও উখিয়ায় ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শিবির গড়ে তোলা হয়। এর আগে রামুতে হাতির দুটি করিডর এলাকায় দুটি সরকারি স্থাপনা গড়ে ওঠে। এর মধ্যে গত বছর থেকে কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় ফাসিয়াখালী, চুনতি ও মেধাকচ্ছপিয়া বনভূমিতে হাতির চলাচলের পথ কমে গেছে।

হাতির বিচরণ নিয়ে ২০১৯ সালে আইইউসিএনের করা গবেষণায় কিছু ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়। এতে বলা হয়, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে হাতির চলাচলের বনভূমি ও পথগুলো নিয়মিতভাবে দখল হচ্ছে। এতে হাতির খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে গাছপালা কেটে ফসলের চাষ হচ্ছে। বনের বাইরেও ধানের চাষ বাড়ছে। আর আমন ধান পাকলে তা খেতে হাতি বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। এ সময় কিছু মানুষ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে ও গুলি করে হাতি মেরে ফেলছে।

বাংলাদেশে হাতির সুরক্ষার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা দরকার। তাদের বসতি ও বিচরণ এলাকা রক্ষা করতে হবে। যাতে হাতি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে
রাকিবুল আমিন, আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো প্রথম আলোকে বলেন, হাতির বিচরণের পথ দ্রুত কমে আসছে। এতে বসতি এলাকায় আসা হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত বাড়ছে। বনের আশপাশের বাসিন্দাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হাতি যদি ফসলের ক্ষতি করে, তাহলে তাঁরা তা পুষিয়ে দেবেন। গত বছর হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জন্য ৫৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে হাতির সুরক্ষার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা দরকার। তাদের বসতি ও বিচরণ এলাকা রক্ষা করতে হবে। যাতে হাতি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।