পটুয়াখালীতে ছোট হচ্ছে বীজের সর্ববৃহৎ খামার

খামারের চারপাশে কোনো প্রতিরক্ষা বাঁধ নেই। সম্প্রতি খামারের একটি সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মোট বিলীন হওয়া জমির পরিমাণ প্রায় ২৫৬ একর।

তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনের কবলে পরে পটুয়াখালীর দশমিনা বীজ উৎপাদন খামারের আয়তন ছোট হয়ে আসছে। এরই মধ্যে খামারটির ২৫৬ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, যা খামারের মোট জমির প্রায় ২৫ শতাংশ। নতুন করে ভাঙনের আশঙ্কায় আছে খামার গুদাম ও অফিস ভবন।

সম্প্রতি সরেজমিনে খামারটিতে গেলে দেখা যায়, পশ্চিম ও উত্তর দিকে খামারের ভাঙনের পরিমাণ বেশি। আবাদযোগ্য জমির পাশাপাশি সম্প্রতি বিলীন হয়ে গেছে খামারের ভেতরের ইটের সড়ক। ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে খামারটি ভাঙতে ভাঙতে আরও ছোট হয়ে যেতে পারে। দশমিনা উপজেলা ভূমি অফিসের ২০১৮-২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বীজ উৎপাদন খামারের বিলীন হয়ে যাওয়া মোট জমির পরিমাণ ২৫৬ দশমিক ১৫ একর। ২০১৩ সালে উদ্বোধনের সময় খামারের মোট আয়তন ছিল ১ হাজার ৪৪ দশমিক ৩৩ একর।

এদিকে ভাঙনের কারণে খামারটির উৎপাদনকাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খামারের কর্মচারীরা জানান, নদীভাঙন ও উচ্চ জোয়ারের পানিতে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া লোকবলেরও সংকট আছে। ৩ কর্মকর্তাসহ ১৮টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। ১৫ জন কর্মচারীর পদ শূন্য। প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ জনের বেশি লোক দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করছেন। নদীভাঙন রোধ করে খামারের চারপাশে বাঁধ নির্মাণ করা হলে উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ইকবাল আহমেদ, দশমিনা বীজ উৎপাদন খামারের উপপরিচালক

গত চার বছরে খামারের উৎপাদনের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমনের বীজ উৎপাদন হয় ২৬৯ দশমিক ৪২৫ মেট্রিক টন। আর বোরো ও রবি ফসলের বীজ উৎপাদন হয় ২৬৭ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন। পরের অর্থবছরে (২০১৭-১৮) উৎপাদনের পরিমাণ কমে আসে। তখন আমনবীজ উৎপাদন হয় ১৮৯ মেট্রিক টন এবং বোরো ও রবি ফসলের বীজ উৎপাদন হয় প্রায় ২০০ দশমিক ৫৫ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমনবীজ ২৫৫ দশমিক ৭০০ এবং বোরো ও রবি ফসলের বীজ ৩১১ দশমিক ৪০০ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়।

ধানবীজ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়া-কমার মধ্যে থাকলেও অধিক উচ্চতার জোয়ারের কারণে গম, আলু, সূর্যমুখী, মসুর, সয়াবিনের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান খামারের কর্মকর্তারা। তাঁরা আরও জানান, আমন উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় স্থানে থাকা তেঁতুলিয়া তীরের এই খামারে বিভিন্ন জাতের ধানবীজ উৎপাদনের পাশাপাশি তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নদীভাঙনের মুখে পরে ধানবীজের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

দশমিনা বীজ উৎপাদন খামারের উপপরিচালক শেখ ইকবাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রভাবে খামারের বিস্তীর্ণ এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে জোয়ার-ভাটার সময় পানি ওঠা-নামা করায় আমন ফসলের উৎপাদনও ব্যাহত হয়। খামারটিতে ডালজাতীয় ফসল উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও জোয়ারের জলাবদ্ধতার কারণে বীজ উৎপাদন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইকবাল আহমেদ জানান, বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীজ বর্ধন খামার নামের প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রতিকূলতা–সহিষ্ণু বীজ উৎপন্ন এবং দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার জন্য উপযোগী শস্যবীজ উৎপাদন করে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য খামারটি স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে খামারটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে।