পদ্মার শাখা, পাখি আর ডলফিন
বাংলাদেশ নদীরই দান। এ দেশের নদীর নাম উচ্চারণ করলেই শুরুতে থাকে পদ্মা। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা—এভাবেই নদীর নাম নিতে অভ্যস্ত এ দেশের মানুষ। কবিতায়, গানে একই ক্রম লক্ষ করা যায়। পদ্মাই দেশের প্রধান নদী।
ভারতের ফারাক্কা ব্যারাজের পর সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে চাঁদপুর পর্যন্ত পদ্মার দৈর্ঘ্য ২৮০ কিলোমিটার। ফারাক্কার পর থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ১৮৫ কিলোমিটার। নদীবিজ্ঞানীরা এই অংশটুকুকে এখনো গঙ্গা নামেই চিহ্নিত করেন। দৌলতদিয়ায় গঙ্গার (পদ্মার) সঙ্গে মিলিত হয় যমুনা। নদীবিজ্ঞানীরা যমুনাকে বলেন ব্রহ্মপুত্র। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত নাম পদ্মা। দৌলতদিয়া থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত পদ্মার দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার।
সীমান্ত থেকে যাত্রা শুরু করে চাঁদপুরে মেঘনায় মিলিত হওয়ার আগপর্যন্ত অনেক নদ–নদী পদ্মায় মিলিত হয়েছে, পদ্মা থেকেও জন্ম হয়েছে কারও কারও। তৈরি হয়েছে নদ–নদীর বিশাল বিস্তৃত জাল। বহু প্রজাতির মাছ, পাখি ও জলজ প্রাণীর আবাসস্থল গড়ে উঠেছে পদ্মাকে ঘীরে।
নদীর জাল
উত্তরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম যে নদীটির উৎপত্তি পদ্মা থেকে, তার নাম পাগলা। পাগলা এখন মৃতপ্রায় নদী। পাগলা নদীতে শুকনা মৌসুমে ধানের চাষ হয়। এই জেলাতেই মহানন্দা পদ্মায় মিশেছে।
পদ্মা থেকে প্রধান যেসব নদী–প্রণালির উৎপত্তি, তার মধ্যে আছে গড়াই–মধুমতী, ভৈরব–কপোতাক্ষ, হরি–ভদ্রা এবং বড়াল–হুরসাগর। এসব নদী থেকে আরও অনেক নদ–নদী জন্ম নিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে সাগরে পড়েছে। পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এসব নদী–প্রণালিতেও পানির প্রবাহ কমেছে। আরিচার পরে এসে পদ্মা থেকে জন্ম নেওয়া প্রধান নদ হচ্ছে আড়িয়াল খাঁ।
এ ছাড়া অনেক বড় বড় খাল পদ্মায় মিশেছে। এর মধ্যে টুটিয়ুম–ধামশ্বর খাল, খলিসা–কুমুরিয়া খাল, মানদত্তা খাল উল্লেখযোগ্য। এসব শাখানদ–নদী ও খালের সঙ্গে পদ্মার দুই তীরের অসংখ্য বিলের সংযোগ ছিল, এখনো কিছু আছে। নদী–খাল ভরাট হওয়ায় অনেক বিলে এখন আর পদ্মার পানি পৌঁছায় না।
ডলফিন ও পাখি
বহু প্রজাতির পাখির আবাস ও খাদ্যের সংস্থান করেছে পদ্মা। এর মধ্যে আছে পানকৌড়ি, শাপপাখি, ডুবুরি, সাদা বক, মানিকজোড়, গাংচিল, ছোট গাংচিল, হটটিটি, কাদাখোঁচা, চা পাখি, জোয়ালা, মেছো ইগল, চিল, বাজ, ছোট বাজ। আরও কিছু পাখি আছে, যেগুলো পানির কিনারা দিয়ে চলাফেরা করে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) বলছে, পদ্মা নদী ও এর অববাহিকায় যেসব প্রাণী বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে, তার মধ্যে ডলফিন অন্যতম। এই ঝুঁকিতে আছে গাঙ্গেয় ঘড়িয়াল, জলখোর (বা গাঙ-চষা), মেটে হাঁস ও ব্রাহ্মী কচ্ছপ।
রাজশাহী শহর থেকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে চর খিদিরপুর। চর খিদিরপুরে পদ্মার পাড় খাড়া। এখানে নদী বেশ গভীর, তাই ডলফিনের দেখা মেলে।