পাখিরা এখনো হাসপাতালেই

গাছের ডাল ছেঁটে ফেলার পরও হাসপাতাল চত্বর ছাড়েনি পাখিগুলো। গত রোববার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

পাখিগুলো এখনো হাসপাতাল ছেড়ে যায়নি। এ খবর শুনে কেউ ভাবতে পারেন পাখিদের চিকিৎসা বোধ হয় এখনো শেষ হয়নি। আসলে তাদের বাচ্চাগুলো এখনো ঠিকমতো উড়তে শেখেনি। শিখলেই তারা চলে যাবে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আঙিনার গাছগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে শামুকখোল পাখিরা প্রজননকালে বাসা বাঁধে। বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চাগুলো উড়তে শিখলে বিচরণক্ষেত্রে চলে যায়। গত ২৮ ডিসেম্বর পাখির বিষ্ঠায় হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণ দেখিয়ে কিছু গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরিবেশবাদী ও পাখিপ্রেমীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পাশের রাজশাহীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ আঙিনার গাছগাছালিকে দীর্ঘদিন ধরে পাখিগুলো তাদের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। পাখিগুলো বর্ষার শেষে এখানকার গাছগুলোতে বাসা করে ডিম পাড়ে, ছানা ফোটায়। আবার শীতের শেষের দিকে ছানাগুলো উড়তে শিখলেই চলে যায়। হাসপাতালের গাছে মূলত শামুকখোল ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গাছে পানকৌড়িসহ আরও কয়েক জাতের পাখি দেখা যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জরুরি বিভাগের সামনের ও আঙিনার কয়েকটি গাছের ডাল কেটে দিয়েছে, যাতে পাখিগুলো বসতে না পারে।

রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ডাল ছাঁটা হলেও পাখিগুলো যায়নি। যে কড়ইগাছের মোটা ডাল কেটে দেওয়া হয়েছে সেই গাছে পাখির বাচ্চাগুলো নতুন করে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে। কাটা ডালের গোড়ায় একটি শামুকখোল পাখিকে বসে থাকতে দেখা যায়। ওপরের ডালে আরও কয়েকটি পাখি নতুন করে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। হাসপাতালের ক্যাজুয়াল্টি বিভাগের পেছনের অর্জুনগাছ ভরে রয়েছে পাখি। তারা হাসপাতালের ভেতরেই ওড়াউড়ি করছে। হাসপাতালের পূর্ব পাশের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে সামনেই একটি গোলচত্বর পড়ে। এর ভেতরে একটি মেহগনি গাছ রয়েছে। গাছটি লম্বা হয়ে অনেক উঁচুতে উঠে গেছে। এই গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়েছে কিন্তু মাথার ওপরে যে কয়টি ডাল রয়েছে, তাতে আগে থেকেই পাখির বাসা ছিল। বাচ্চাও ছিল। সেখান থেকে কোনো পাখি নড়েনি। হাসপাতালের সামনের আরও কয়েকটি কড়ইগাছে এখনো পাখিরা বাচ্চা নিয়ে রয়েছে। গাছগুলোর ওপর দিয়ে একদল পাখিকে চক্রাকারে অনেকক্ষণ ধরে তাদের উড়তে দেখা গেল।

গাছের ডাল কাটার ব্যাপারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি বিভাগের সামনে কারও মাথায় যাতে পাখির বিষ্ঠা না পড়ে, এ জন্য ডাল কাটা হয়েছিল। এতে মানুষ এত উদ্বেগ প্রকাশ করবে, তিনি ভাবতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘তবে অবশ্যই আমি সবার মতামতের মূল্য দেব। আমি তো আসলে রোগীদের নিয়ে চিন্তা করি। রোগীদের কথা ভেবেই এ কাজ করা হয়েছিল। দুইটার সমন্বয় করেই চলতে হবে।’