প্রতি চারজনের একজন শৌচাগার–সুবিধা থেকে বঞ্চিত

খুলনার দাকোপে বিপর্যস্ত বাঁধের পাশের একটি শৌচাগার
ছবি: ওয়াটারএইডের সৌজন্যে

স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাব বিশ্বের অধিকাংশ বিপন্ন মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনধারণের প্রক্রিয়াকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যুক্ত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে স্যানিটেশন। কিন্তু বিশ্বে চারজন মানুষের একজন শৌচাগার–সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘লিভিং ইন আ ফ্র্যাজাইল ওয়ার্ল্ড: দ্য ইমপেক্ট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অন দ্য স্যানিটেশন ক্রাইসিস’ শীর্ষক ওয়াটারএইডের প্রতিবেদনটি আজ বৃহস্পতিবার বৈশ্বিকভাবে প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠের পাঁচ মিটারের কম উচ্চতায় রয়েছে, যা এ অঞ্চলগুলোকে অতিমাত্রায় বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সাইক্লোন সুপেয় পানির প্রাপ্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যানিটেশন ও জলবায়ুর ঝুঁকির সূচকে ১৮১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটির জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশের মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে দেশটির জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ সীমিত পরিসরে ও অনুন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় রয়েছে।
পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ৪৫ শতাংশ নিরাপদ ব্যবস্থাপনায় স্যানিটেশনের ওপর নির্ভর করতে পারে। যার অর্থ দাঁড়ায়, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট–সেবা প্রাপ্তির কারণে এ ৪৫ শতাংশ মানুষের বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ করা যায়। আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, দুই বিলিয়ন মানুষের প্রাইভেট টয়লেট প্রাপ্তির সুবিধা নেই এবং ৬০০ মিলিয়নের অধিক মানুষের বিকল্প নেই বলে তাদের উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতে হয়।

স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অভাবে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের কারণে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হয় এবং নদী কিংবা লেকের পানি দূষণের অন্যতম কারণও মানুষের মল। মানুষ রান্না, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা কিংবা প্রতিদিন পান করার জন্য এ পানির উৎসগুলোর ওপরই নির্ভর করে। আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে, শিশুরা মাটিতে খেলার মাধ্যমে এসব সংক্রামক জীবাণুতে আক্রান্ত্র হচ্ছে। ফলে মানুষের মলের কারণে সৃষ্ট দূষণের ফলে পুরো কমিউনিটি ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এ নিয়ে ওয়াটারএইডের যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী টিম ওয়েইনরাইট বলেন, ‘ওয়াটারএইডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, স্যানিটেশন–সংকটকে আরও তীব্র করে তুলবে জলবায়ু পরিবর্তন। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ায় টয়লেট ও স্যানিটেশন খাতের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা লাখো মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।’

এ নিয়ে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘স্যানিটেশন ও হাইজিন সচেতনতার অভাবে অনেক মানুষ কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। সাইক্লোন ও বন্যার পানি নাজুক ল্যাট্রিনগুলোর ক্ষতিসাধন করে, যা বাসিন্দাদের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায়, স্যানিটেশন খাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ দরকার। পাশাপাশি সবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং ওয়াশ ও জলবায়ু অভিযোজনসংক্রান্ত কার্যক্রম চালু করা দরকার।