প্রাণসায়ের খালের বাঁধে ‘প্রাণ’ নিয়ে টানাটানি

সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। ফসল নষ্ট হওয়ায় তাদের সারা বছর টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হবে এখন।

পানি জমেছে বাড়ির উঠান ও ঘরে। সে পানি মাড়িয়ে যেতে হয় আরেক জায়গায়। পানি এড়িয়ে চলতে মই দিয়ে সাঁকোও বানানো হয়েছে। গতকাল সাতক্ষীরার লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙী এলাকায়
প্রথম আলো

যত দূর চোখ যায় পানি আর পানি। মাছের ঘের, পুকুর, ফসলি জমি—সবই পানিতে একাকার। তলিয়ে আছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। সাতক্ষীরা শহরসংলগ্ন ৪টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। অনেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে মাছ ও হাঁস–মুরগির খামার করেছিলেন। কেউ আবার ধারের টাকায় জমিতে রোপণ করেছিলেন ফসলের বীজ। কিন্তু ফসলি জমি থেকে শুরু করে ঘর পর্যন্ত পানি জমে থাকায় এই মানুষদের এখন টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খালের ওপর বাঁধ দিয়ে পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় গ্রামের পর গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কলারোয়া থেকে উজানের পানি ঝাউডাঙা ও লাবসার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রাণসায়ের খালে গিয়ে পড়ে। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে খাল খননের নামে সাতক্ষীরা শহরের পাকাপুল এলাকায় ক্রস বাঁধ দেওয়ায় পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এতে সদর উপজেলার লাবসা, বল্লি, ঝাউডাঙা ও আগড়দাঁড়ি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু থেকে শুরু করে এখন তাদের নিজেদের ‘প্রাণ’ নিয়ে টানাটানির মতো অবস্থা।

গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে গেলে লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙী গ্রামের কবিতা পারভিন বলছিলেন পানিবন্দী অবস্থা নিয়ে তাঁর দুর্ভোগের কথা। ‘দুটো গরু ছিল। তাদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারছিলাম না। গরু দুটিকে পানির মধ্যি রাখতি হতো। পানির কারণে নিজেদের জমির ফসলও নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় গরুর খাবার জোগাড় করা কঠিন। তাই কম দামে হলেও বেচে দিয়েছি।’—বলছিলেন কবিতা পারভিন।

ভেলা বানিয়ে চলাচল করছেন নারী ও শিশু। গতকাল খেজুরডাঙী এলাকায়
প্রথম আলো

লাবসা ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার আর পার্শ্ববর্তী বল্লি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। গতকাল এ দুটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে কমবেশি সব গ্রামেই পানি উঠেছে। ভেলায় করে চলাচল করছেন মানুষ। অনেকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য তৈরি করেছেন সাঁকো।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লাবসা ও বল্লি ছাড়াও ঝাউডাঙা ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি, তজুলপুর, বিহারীনগরসহ ১১টি গ্রাম ও আগড়দাঁড়ি ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে একইভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

ঋণ নিয়ে বল্লি গ্রামের মিজানুর রহমান ১৮ বিঘা জমিতে মৎস্য খামার করেছিলেন। ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। গত সাত দিনের পানির চাপে সব ভেসে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি। বলছিলেন, ‘এত টাকার কথা ভাবলে মনে হয়, গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, গতকাল তাঁরা প্রাণসায়ের খাল নতুন করে খনন শুরু করেছেন। ক্রস বাঁধ না দিলে খনন করা সম্ভব নয়। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে খনন শেষ করে ক্রস বাঁধ তুলে নেওয়া হবে।