বাদামি কাঠবিড়ালি

গাছ বেয়ে নামছে বাদামি কাঠবিড়ালি। সুন্দরবনের কটকা থেকে তোলা
ছবি: লেখক

কচিখালী থেকে বিরল ও বিপন্ন সুন্দরী হাঁসের (মাস্কড ফিনফুট) ছবি তুলতে তুলতে কটকা বিট অফিসের সামনে আসতেই দুপুর হয়ে গেল। আসার পথে লঞ্চেই দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। লঞ্চ কটকায় নোঙর করতেই গাউস মাঝির নৌকায় উঠে পড়লাম। জামতলী ঘাটে নেমে সোজা বাঘের বাড়ির পথে হাঁটা ধরলাম। চারদিকে চোখ রেখে ধীর পায়ে হাঁটছি। বেলা ৩টা ২০ মিনিটে প্রথমেই চোখে পড়ল দুরন্ত এক চিতাল হরিণীর (স্পটেড ডিয়ার) দৌড়। আর যায় কোথায়? সবাই ওর দৌড়ের ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এরপর বাচ্চা-কাচ্চা, সিঙ্গেল (শিংযুক্ত) পুরুষসহ একপাল চিতালের দেখা পেলাম।

ওদের ছবি তুলতে না তুলতেই দেখা হয়ে গেল একটি তাগড়া বুনো শুয়রের (ওয়াইল্ড বোর) সঙ্গে। ওর ছবি তুলে সামনের দিকে রওনা হলাম। ঠিক ৩টা ৫২ মিনিটে নাম না জানা একটি মোটা গাছের গুঁড়ি বেয়ে নামতে দেখলাম বাদামি রঙের ছোট্ট প্রাণীটিকে। ওকে কোথায় দেখিনি—রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সাতছড়ি-লাউয়াছড়া-কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, এমনকি রাঙামাটির সাজেক—সবখানেই। তবে সেদিন বিকেলে সুন্দরবনের জামতলীতে ওকে বেশ মায়াবী লাগছিল। তাই ওর বেশ কটা ছবি তুলে নিলাম। এরপর জামতলী খাল ভ্রমণের জন্য ঘাটের পথে হাঁটা দিলাম।

বাদামি বর্ণের মায়াবী ছোট্ট প্রাণীটি হলো এ দেশের সচরাচর দৃশ্যমান স্তন্যপায়ী প্রাণী চোরকাটা বা কোটা। অন্য কথায় বাদামি কাঠবিড়ালি। ইংরেজি নাম ইরাবতী স্কুইরেল বা হোয়ারি-বেলিড হিমালয়ান স্কুইরেল। মিয়ানমারের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ইরাবতী নদীর নামে এর ইংরেজি নাম। সিউরিডি গোত্রের প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম Callosciurus pygerythrus। বাংলাদেশ ছাড়াও এটি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও দক্ষিণ চীনের আবাসিক প্রাণী।

চোরকাটার দেহ লম্বা ও আকার মাঝারি। প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীর দেহের দৈর্ঘ্য ২১ সেন্টিমিটার (সেমি) ও লেজ ১৮ সেমি। দেহের ওপরের অংশের লোমের রং গাঢ় বা লালচে-বাদামি থেকে ধূসরাভ-বাদামি। দেহের নিচটা ফ্যাকাশে ধূসর বা সাদাটে ধূসর। কোমরের কাছে সাদাটে পট্টি থাকতে পারে। লেজের আগা বাদামি।

সুন্দরবনসহ দেশের প্রায় সব ধরনের বনাঞ্চল, বাগান, পার্ক ও ঘন গাছপালা সন্নিবেশিত গ্রামাঞ্চল এলাকায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। দিবাচর প্রাণীগুলো মূলত বৃক্ষবাসী, তবে মাঝেমধ্যে মাটিতেও নামে। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় দেখা যায়। ফল, পাতা, শাকসবজি, বাদাম, গাছের ছাল, ফুল, ফুলের রস ইত্যাদি খায়। খেজুরের রস খেতে খুব পছন্দ করে। এ ছাড়া গাছের গায়ে জন্মানো লাইকেন বা ছত্রাক, কীটপতঙ্গ ও অনেক সময় ছোটখাটো মেরুদণ্ডী প্রাণীও খেতে পারে।

এরা সচরাচর বছরে একবার বাচ্চা দেয়, মার্চ থেকে জুলাইয়ে। শুকনা ঘাস, পাতা ও ছোট ছোট কাঠি জড়ো করে গাছের মগডালে অগোছালো গোলগাল বাসা গড়ে। বাসার ভেতরে অন্দরমহল থাকে এবং ঢোকার রাস্তা থাকে এক পাশে। বছরে একবার তিন–চারটি বাচ্চা প্রসব করে।