ভদ্রা গিলছে ঘরবাড়ি জমি, আতঙ্কে মানুষ

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় ভদ্রা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে ঘরবাড়ি, ফসলের জমি। উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের বিভিন্ন অংশে চলছে ভদ্রা নদীর ভাঙন। মাটি ও বস্তা ফেলে শেষ রক্ষার চেষ্টা চলছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে দুটি উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভাঙনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বটিয়াঘাটা উপজেলার বার আড়িয়া গ্রাম। সেখানে এক কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত পাঁচ-ছয় মাসে ৩৫টি ঘর, অন্তত ছয় একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও ২৫-৩০টি ঘর যেকোনো মুহূর্তে বিলীন হতে পারে।
পাউবো খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৩-৬৮ সালে পাউবো ২৯ নম্বর পোল্ডারের আওতায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাঁধের বিভিন্ন অংশে পিচ ও ইটের রাস্তা নির্মাণ করে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ভদ্রা নদীর ভাঙন শুরু হয়। ২০০৬-০৭ সালের দিকে এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময়ের মধ্যে পাউবোর বেড়িবাঁধ পাঁচবার নদীতে বিলীন হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, বার আড়িয়া বাজার-সংলগ্ন বেশ কিছু ঘর নদীতে চলে গেছে। অন্তত ৩০টি ঘরের অধিকাংশ ভেঙে পড়েছে। যেকোনো সময় এসব ঘরের বাকি অংশটুকুও ভেঙে পড়তে পারে। কিছুদিন আগে পিচের রাস্তার একটা বড় অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীর সর্বনাশা ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এই ভাঙা রাস্তার ওপরই অস্থায়ী ঘরে বাস করছে বেশ কিছু পরিবার।
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ সুধান্য বৈরাগী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার চোখের সামনে গ্রামডা ছিন্নভিন্ন হুয়ে গেল। এ পর্যন্ত সাড়ে তিন শ থেকে চার শ ঘর গাঙে (নদী) গেছে। মণ্ডল বাড়ি, জমাদ্দার বাড়ি, টিকাদার বাড়ি, পরামাণিক বাড়ি, ঠাকুর বাড়ি সব গাঙের পেটে। গ্রামের ১০০ থেকে ১৫০ বিঘা জমিও গ্রাস করেছে নদী। ভদ্রা যে রকম রাক্ষুসী হয়ে উঠেছে, তাতে আরও কত কী যাবে, তার ঠিক নাই।’
একই গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রদীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের দোতলা বাড়ি, বড় বড় পুকুর, গোয়ালঘর, মন্দির, ২০ বিঘার মতো জমি—সবই নদীতে গেছে। নদী ভাঙে আর গ্রামবাসীর ব্যক্তিগত জমির ওপর দিয়ে পাউবো নতুন বাঁধ দেয়। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ করেনি। এভাবে আমরা ভদ্রাকে আর পাউবোকে নিজেদের জমি দিয়েই যাচ্ছি।’
সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ হেমায়েত আলী বলেন, বহুদিন ধরে এখানে ভাঙন চললেও সরকারিভাবে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাঁধের ওপর মাটি ও বস্তা ফেলে কিছুটা রাস্তা রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বাঁধ ভেঙে গেলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়বে।
২৯ নম্বর পোল্ডারের (অতিরিক্ত) দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী কৃষ্ণপদ দাস বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ওই এলাকার ভাঙন রোধ করা দরকার। জলবায়ু তহবিলের আওতায় স্থায়ী প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য ৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। এ ছাড়া স্থানীয় সাংসদের ডিও লেটার সংযুক্ত করে মন্ত্রণালয়েও কাগজপত্র পাঠিয়েছি।’ জমি অধিগ্রহণ না করে পাউবো জনগণের ব্যক্তিগত জমির ওপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে, এ কথা স্বীকার করলেও তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।