ভোলায় ৫ হাজার হেক্টরের ফসল পানির নিচে
টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে ভোলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি থামার এক সপ্তাহেও এসব জমির পানি নামছে না। এতে অনেক এলাকায় ফসল পচে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানায়, ভোলায় ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবরের বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৮৭ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০০ হেক্টর সবজি, ২৮৭ হেক্টর পান এবং ২ হাজার হেক্টর ধানি জমি রয়েছে।
গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার সদর, দৌলতখান ও লালমোহন উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, খেতের সবজি, পান, ধান পানিতে ডুবে আছে। অনেক স্থানে খালের মধ্যে জাল ও বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কোথাও খালের মধ্যে অপরিকল্পিতভাবে কালভার্ট ও সেতু তৈরি করা হয়েছে। অনেক এলাকায় খাল-বিলে বালু ফেলে ভরাট করে ভবন তোলা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানায়, ভোলায় ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবরের বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৮৭ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮০০ হেক্টর সবজি, ২৮৭ হেক্টর পান এবং ২ হাজার হেক্টর ধানি জমি রয়েছে।
সদরের রাজপুর, ইলিশা ও চরসামাইয়ার কয়েকজন কৃষক বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে এমনিতেই এ বছর অনেকে আমন ধান লাগাতে পারেননি। যাঁরা লাগিয়েছেন, তাঁদের ধানও ডুবে আছে। খাল থেকে পানি নামছে না। তাই বিলের পানি নামছে না। পানির নিচে পড়ে আছে ধান, সবজি ও পান। টানা আট দিন ডুবে থাকার কারণে ফসল পচে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ভোলা সদরে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতা মানবসৃষ্ট। মানুষ যেখানে-সেখানে বাড়ি করেছেন, পুকুর, বিল-খাল ভরাট করেছেন, খাল দখল করে মাছের চাষ করেছেন। ক্ষমতার প্রভাবে করা এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ কেউ করছেন না। এতে কৃষক ও ফলন—দুটোরই ক্ষতি হচ্ছে।
লালমোহনের রমাগঞ্জ ইউনিয়নের বিশাল এলাকা নিয়ে সাত দরুন বিলের অবস্থান। বিলটি বেতুয়া খালসংলগ্ন। এ বিলের বৃষ্টির পানি বেতুয়া খাল দিয়ে নেমে যায়। গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, খালটির মাঝে মাঝে অবৈধ বিহন্দি, বেড় ও খুরছিজাল বসানো। খালের মধ্যে ভাগ ভাগ করে জাল বসিয়ে অনেকে মাছ চাষ করছেন। শাখা খালের অনেক স্থানে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
ভোলা সদরে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতা মানবসৃষ্ট। মানুষ যেখানে-সেখানে বাড়ি করেছেন, পুকুর, বিল-খাল ভরাট করেছেন, খাল দখল করে মাছের চাষ করেছেন। ক্ষমতার প্রভাবে করা এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ কেউ করছেন না। এতে কৃষক ও ফলন—দুটোরই ক্ষতি হচ্ছে।
বিল এলাকার প্রায় ২০ জন কৃষক জানান, এ উপজেলায় বিভিন্ন খালের মাথায় ৮-১০টি জলকপাট বিকল হয়ে আছে। এ কারণে খালের জোয়ার-ভাঁটা প্রায় বন্ধের পথে। ভাটার সময় পানি নামতে না নামতে আবার খাল ভরে যায়। ফলে বিলের জলাবদ্ধতা শেষ হচ্ছে না। সাত দরুনসহ আশপাশের একাধিক বিলের কয়েক শ একর জমির আমন ধান পচে যাচ্ছে।
রমাগঞ্জ ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, এ ইউনিয়নে ৩টি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। তিনটি খালই খনন করতে হবে। খালের মধ্যে বাঁধ দেওয়া, অপরিকল্পিত কালভার্ট, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে প্রবাহ বন্ধ হয়ে আছে। আর খালের প্রবাহ বন্ধ হওয়ার কারণে খেত ডুবে আছে। ফসল পচে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম শাহাবুদ্দিন বলেন, এ উপজেলার সবগুলো স্লুইসগেট সংস্কার করা দরকার।
এ উপজেলায় বিভিন্ন খালের মাথায় ৮-১০টি জলকপাট বিকল হয়ে আছে। এ কারণে খালের জোয়ার-ভাঁটা প্রায় বন্ধের পথে। ভাটার সময় পানি নামতে না নামতে আবার খাল ভরে যায়। ফলে বিলের জলাবদ্ধতা শেষ হচ্ছে না। সাত দরুনসহ আশপাশের একাধিক বিলের কয়েক শ একর জমির আমন ধান পচে যাচ্ছে।
দৌলতখানের চরপাতা ইউনিয়নের নলগোড়া গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ঘুইঙ্গারহাটবাজার এলাকায় কয়েক মাস আগে খাল দখলকারীদের উচ্ছেদ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও প্রশাসন। ভবন ভেঙে খালের মধ্যে ফেলা হয়। কিন্তু সেসব আজ পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়নি। এ কারণে চরপাতা ও উত্তর জয়নগরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সব খাল ও বিল ডুবে আছে।
চরপাতার লেজপাতা গ্রামের চাষি ফরমুজল হক জানান, তাঁর এলাকার ৮০ শতাংশ পানের বরজ ডুবে পচে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা হরলাল মধু বলেন, খালের প্রবাহ বন্ধ থাকার কারণে বিল থেকে পানি নামতে পারছে না। ফসল পচে গেলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।