মানিকছড়িতে হচ্ছে নজরকাড়া পর্যটনকেন্দ্র

দেশের প্রত্যন্ত একটি জেলা খাগড়াছড়ি। জেলা সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে মানিকছড়ি উপজেলা। মানিকছড়িতে প্রথমবারের মতো ১৪০ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘ডিসি পার্ক’ নামে আধুনিক এক পর্যটনকেন্দ্র।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার ডলু ব্রিজ এলাকায় ১৪০ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ডিসি পার্ক। ডিসি পার্কের জন্য নির্ধারিত স্থান। সম্প্রতি তোলা ছবি।
প্রথম আলো

খাগড়াছড়ি সদর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে মানিকছড়ি উপজেলা। আর মানিকছড়ির পাশেই লক্ষ্মীছড়ি, গুইমারা ও রামগড় উপজেলা। এই উপজেলাগুলোতে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। জেলা প্রশাসক এলাকার মানুষকে দিয়েছেন খুশির খবর। আর সেটি হচ্ছে মানিকছড়িতেই হচ্ছে একটি পার্ক। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিসি পার্ক’।

দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য থাকবে দৃষ্টিনন্দন কটেজ। লেকের ওপর তৈরি হবে ঝুলন্ত সেতু, লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকবে আধুনিক জলযান, বন্য প্রাণী সংরক্ষণে থাকবে মিনি চিড়িয়াখানা আর ছোটদের জন্য কিডস জোন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বললেন, মানিকছড়িতে প্রথমবারের মতো ১৪০ একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘ডিসি পার্ক’ নামে আধুনিক এক পর্যটনকেন্দ্র। এখানে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের রাতযাপনের জন্য থাকবে দৃষ্টিনন্দন কটেজ। লেকের ওপর তৈরি হবে ঝুলন্ত সেতু, লেকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকবে আধুনিক জলযান, বন্য প্রাণী সংরক্ষণে থাকবে মিনি চিড়িয়াখানা, ছোটদের জন্য কিডস জোন। পার্কটি চালু হলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  পার্কটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, মানিকছড়ি সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে বাটনাতলী ইউনিয়নের ডলু ব্রিজ এলাকায় নির্মিত হচ্ছে ডিসি পার্ক। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ঘেরা বিশাল এলাকায় পার্ক তৈরির প্রস্তুতি চলছে। পার্কের জন্য সংরক্ষিত ১৪০ একর জায়গায় সৃজিত আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, রাবারসহ নানা প্রজাতির গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশাল এই এলাকায় রয়েছে দুই হাজার রাবার বাগান ও অন্তত ৭ হাজার ফলদ বৃক্ষ। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সম্প্রতি তিন বছরের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়েছে।


জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, এক দশকের বেশি সময় ধরে ১৪০ একর সরকারি এই জায়গাটি দখলে নিয়ে ‘সারাহ ফার্ম’ গড়ে তুলেছিলেন চট্টগ্রামের মো. ইকবাল। আইনি লড়াই শেষে সম্প্রতি এই জমি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। বর্তমানে জমিটি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সেখানে ডিসি পার্ক তৈরি করছে জেলা প্রশাসন।  

মানিকছড়ি এবং পাশের যে কয়টি উপজেলা আছে, সেগুলোতে কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য যেতে হয় জেলা শহর খাগড়াছড়ি কিংবা চট্টগ্রামে নগরে। মানিকছড়িতে ডিসি পার্ক প্রতিষ্ঠা পেলে এলাকা পাল্টে যাবে।
মো. জয়নাল আবেদিন, চেয়ারম্যান, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ

এ বিষয়ে মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, মানিকছড়ি এবং পাশের যে কয়টি উপজেলা আছে, সেখানে কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য যেতে হয় জেলা শহর খাগড়াছড়ি কিংবা চট্টগ্রামে নগরে। এতে অর্থ ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।  মানিকছড়িতে ডিসি পার্ক প্রতিষ্ঠা পেলে এলাকা পাল্টে যাবে। শিশু-কিশোরেরা চিত্তবিনোদনের সুযোগ পাবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম বাড়লে স্থানীয় রকমারি পণ্যের চাহিদা বাড়বে।


স্থানীয় লোকজন বলেন, মানিকছড়ি থেকে ডিসি পার্কে চলাচলের আট কিলোমিটার সড়কটি দ্রুত সংস্কার জরুরি। সড়কটির তিন কিলোমিটার পাকা হলেও বাকি অংশ ইটের। পার্কটি চালুর আগে সড়কটি সংস্কার না করলে পর্যটকদের দুর্ভোগ বাড়বে।  

এ বিষয়ে বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মোহন বলেন, ‘ডিসি পার্ক নির্মাণের খবরে এলাকার মানুষ খুশি। আমরা দ্রুত পার্কটির বাস্তবায়ন চাই। কারণ পার্ক গড়ে উঠলে এলাকার অনেক উন্নয়ন হবে।’