মানুষের পরিবারে ভালুকছানা

ভালুকছানাটিকে কাঁঠাল খাওয়াচ্ছেন উদয়গিরি চাকমা। ১৩ আগস্ট রাঙামাটির বরকল উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বনে কুড়িয়ে পাওয়া ভালুকের ছানাটির নাম রাখা হয়েছে মানিক। কৃষক উদয়গিরি চাকমা ও স্ত্রী দয়া লতা চাকমা দম্পতির পরিবারে বেড়ে উঠছে এটি। খাবারের জন্য ডাক পেলেই ছুটে আসে। দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে মানবশিশুর মতোই। বাড়ির পাশে কাঁঠালগাছের মগডালে তার জন্য বাসা বেঁধে দেওয়া হলেও সেখানে থাকতে চায় না। তার পছন্দ উদয়গিরির বিছানা। অভাবের সংসারে ভালুকছানাটির খাবারের জোগান দেওয়া দুঃসাধ্য এই দম্পতির জন্য। নিজেরা না খেলেও ভালুকের ছানাটিকে খাওয়াচ্ছেন। মানিক না খেয়ে থাকবে, এটা ভাবতেও পারেন না তাঁরা। ভালুকের ছানাটি তাঁদের সন্তানের মতো হয়ে উঠেছে কখন, টেরও পাননি।

রাঙামাটির বরকল উপজেলার আইমাছড়া ইউনিয়নের আন্ধারমানিক গ্রামে উদয়গিরি চাকমার বাড়ি। নিঃসন্তান উদয়ের পরিবারে ভালুকছানাটি যেন নতুন খুশির উপলক্ষ হয়ে এসেছে। তবে যেভাবে বেড়ে উঠছে মানিক, তাতে দুশ্চিন্তায় আছেন উদয় ও তাঁর স্ত্রী দয়া লতা। মাঝেমধ্যেই ভালুকছানাটি উদয়ের পাশে এসে শুয়ে পড়ে। গ্রামবাসীদের অনেকেই এই দৃশ্যে অভ্যস্ত নন। তাঁরা ভয় পান। বিপদের আশঙ্কাও করেন অনেকে। কিন্তু উদয়গিরি ও দয়া লতার জীবন এখন মানিককে ঘিরেই।

গত মে মাসের দিকে গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আন্ধারমানিক সংরক্ষিত বনে বেড়াতে গিয়ে ভালুকের দুটি বাচ্চা দেখতে পান উদয়গিরি চাকমা। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তাদের মায়ের দেখা পাননি। ছানা দুটি ছিল অসুস্থ। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি মারা যায়। অপর ছানাটির অবস্থাও খারাপ ছিল। এ কারণে উদয়গিরি সেটিকে বাড়ি নিয়ে আসেন।

সম্প্রতি আন্ধারমানিক গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উদয়গিরির মাচাং ঘরের পাশে গাছের এ ডাল থেকে সে ডালে খেলে বেড়াচ্ছে ভালুকছানা মানিক। বড় একটা পাকা কাঁঠালের অর্ধেকটা এনে উঠানে রেখে দয়া লতা মানিককে ডাকতেই সেটি নেমে আসে গাছ থেকে। অর্ধেকটা কাঁঠাল মুহূর্তেই শেষ করে দয়া লতার সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরকল উপজেলার সংরক্ষিত বনে কালো ভালুক বা এশিয়াটিক ব্ল্যাক বিয়ারের দেখা মেলে। এটি বাংলাদেশে এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই প্রজাতির ভালুকের রোম কুচকুচে কালো। গলায় সাদা লোমের ভি আকৃতি চিহ্ন রয়েছে। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ১২০ থেকে ১৯৫ সেন্টিমিটার। কাঁধের উচ্চতা ৭০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার। লেজ খুব ছোট ১১ সেন্টিমিটার। পুরুষ ভালুকের ওজন ৯১ থেকে ১৫০ কেজি ও স্ত্রী ভালুকের ওজন ৬৫ থেকে ৯০ কেজি হয়।

উদয়গিরি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভালুকের ছানাটি আমরা সন্তানের মতো লালনপালন করছি। দুই বেলা দুধ ও ফল খাওয়াতে হয়। প্রায় সময় বিছানায় থাকতে চায়। আমাকে আপন করে নিয়েছে। দূরে কোথাও গেলে আমার পিছু নেয়। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, আর বেশি দিন হয়তো বাড়িতে রাখা যাবে না। নিজে খাবার খুঁজে খাওয়ার মতো বয়স হলে এটিকে বনে ছেড়ে দেব।’