লতা-পারুল

হেমন্তের বার্তা নিয়ে আসে লতা-পারুল, রমনা পার্ক থেকে তোলা l ছবি: লেখক
হেমন্তের বার্তা নিয়ে আসে লতা-পারুল, রমনা পার্ক থেকে তোলা l ছবি: লেখক

শেষ বেলা সূর্য ডুবে গেলে পৃথিবীর পিঠ হিম হয়ে আসে। নিশীথের অন্ধকারে শিশিরের জলে ভিজে যায় মাঠের ঘাস। সকালের রোদে সে ঘাসের রূপ চোখে পড়ে। শিশির ও হিম দিয়ে শুরু হয় হেমন্ত। তরুরাজ্যে হেমন্তের সময় থেকেই পত্রপল্লব বিবর্ণ হতে শুরু করে। শীত গাছপালার এ রূপকে আরও বিবর্ণ করে তোলে। হেমন্তের তরুরাজ্যে ফুলের উপস্থিতি কম। কয়েক প্রজাতির ফুল মানুষের কাছে হেমন্তের বার্তা নিয়ে আসে, তার মধ্যে লতা-পারুল অন্যতম। তবে এ দৃশ্য শহরেই বেশি দেখা যায়। আদি নিবাস সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা। ফুলের কদরের জন্যই বঙ্গে আগমন। Bignoniaceae পরিবারের এ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম mansoa alliacea। ইংরেজি নাম Garlic vine।
হেমন্তের প্রথম দিকেই রমনার নার্সারি অঙ্গনের পুব দিকের গেটের কাছে গিয়ে দেখা পেয়েছি লতা-পারুলের। অনেকগুলো বড় বড় থোকায় বেগুনি রঙের ফুল। অনেকে এ লতাকে রসুন লতাও বলে থাকেন। পাতায় রসুনের ঘ্রাণ থাকায় এ নামকরণ। ফুল ফুটলেই মৌটুসি পাখি সুন্দর এ ফুলে বিচরণ করে মধুর জন্য। প্রজাপতিরাও ঘিরে থাকে সকালজুড়ে। রোদ বাড়লে পাপড়িরা কিছুটা ঢলে পড়ে। সে জন্য হালকা রোদ-ছায়া পরিবেশে ভালো জন্মে ও ফুলের উজ্জ্বলতা থাকে অনেক দিন। ফুল ফোটার আগে পাপড়ির আগার রং থাকে গাঢ় বেগুনি এবং গোড়া হালকা বেগুনি।
ঝোপালো চিরসবুজ এ লতা ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। এ লতা কোনো ধারকে বা বৃক্ষের গা বেয়ে বেয়ে বাড়ে এবং মাঝারি ঝোপে পরিণত হয়। পাতা যৌগিক, পত্রিকা আয়তাকার, মসৃণ, ৪-৫ সেমি লম্বা। শীর্ষের পত্রিকা প্রায়ই আকর্ষীতে পরিণত হয়। হালকা বেগুনি ফুল, অনেকগুলো বড় বড় থোকায় ফোটে। দল ফানেলের মতো, মুখ ৪ সেমি চওড়া। পাপড়ি ৪টি ছড়ানো ও গোল। কলমে চাষ। শিকড় থেকেও চারা গজায়। কেউ কেউ নীল-পারুলও বলেন।