
প্রশস্ত মেঘনার কিনারা ঘেঁষে একটি ভূখণ্ড। আদিতে চর ছিল হয়তো। এখন গ্রামীণ জনপদ। মানুষের পদছাপের মাঝেও গাছপালার বুনন বেশ ঠাসা। গ্রামটির চারদিকে ঘুরে বেড়ালে শোনা যাবে পাখপাখালির গান; দেখা যাবে পুকুরের জলে ছোট ছোট কাছিম, মাছরাঙা, সবুজ বক, চারদিকে ঘন সুপারির বন এবং পুরোনো জমিদারবাড়ির দেয়ালে বেড়ে ওঠা মস ও ফার্ন উদ্ভিদ।
সুপারির বনতল থেকে ওপরের দিকে তাকালে নীলাকাশের মাঝে সবুজ পাতাগুচ্ছ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুপারিগাছের অপার সৌন্দর্য চোখে পড়ার মতো। সুপারিবনের ভেতর সরু পথে হেঁটে চলেছি। কত শত আগাছার ভিড়ে চমৎকার এক গাঢ় হলুদ রঙের ফুলের দিকে নজর পড়ল। বিস্ময় জাগে, বনে এমন ফুল ফোটে! এমন বনফুলের দেখা পাওয়ার জন্য আমি অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। প্রতিটি কাণ্ডের শীর্ষে সরু পাতাসমেত কয়েকটি করে ফানেলাকার উজ্জ্বল হলুদ ফুল। সুপারিবনের মাঝে ভূমিতে শায়িত আগাছায় এমন ফুল আগে কোথাও দেখিনি।
ওই জনপদের লোকমুখ থেকে কোনো স্থানীয় নাম পাওয়া গেল না। ছবি তুলে এবং একটি নমুনা সংগ্রহ করলাম। আমাদের অনেক বনফুলের কোনো বাংলা নাম নেই। এ ফুলগুলোর বাংলা নামকরণ হওয়া দরকার। অনেক ঘাঁটাঘাঁটির পর একটি বাংলা নাম পাওয়া গেল। ঝান্টি একবর্ষজীবী বিরুৎ-জাতীয় আগাছা। উদ্ভিদ ৩০-৮০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাপড়ি হলুদ, লোমশ, ফানেলাকার ফুল। ফল ক্যাপসুল। একটি ফলে চারটি বীজ থাকে। ফুল ফোটে তীব্র শীতের সময় থেকে বসন্তের আগ পর্যন্ত।
ঝান্টির আদি আবাস ভারতীয় উপমহাদেশ। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ও পটুয়াখালীর পর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে এটা পাওয়া গেল। হালকা রোদের আলো ও ছায়াময় কোনো পতিত জমি, বনতল, পাহাড়ের ঢাল ও রাস্তার আশপাশে এ উদ্ভিদের জন্য আদর্শ স্থান। বীজ সংগ্রহ করে বাড়ির বাগানে কিংবা টবে শোভাবর্ধনকরী ফুল হিসেবে লাগানো যেতে পারে। ফুলে মৌমাছি, প্রজাপতি, পিঁপড়া বিচরণ করে মধুর জন্য। ঝান্টির বৈজ্ঞানিক নাম strobilanthes scaber। পরিবার acanthaceae। বনজঙ্গলে এমন বনফুল প্রতিদিনই ফোটে। আমাদের হয়তো বনজঙ্গলে প্রতিদিন যাওয়া হয় না। বনফুল দেখার জন্য বনেই যেতে হবে।