শেরপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য ভাসমান বীজতলা

সাম্প্রতিককালে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির বৃদ্ধি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলায় আমন বীজতলা, শাকসবজির আবাদ, পাট ও আউশ আবাদ নষ্ট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১২ একর জমিতে আমন ধানের বীজতলা ও ৩টি স্থানে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

খালে তৈরি আমন ধানের ভাসমান বীজতলা পরিচর্যা করছেন কৃষক জাকারিয়া। শেরপুর সদর উপজেলার বাদাতেঘরিয়া গ্রামের বিরিখালে।প্রথম আলো

শেরপুরে বন্যা–পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আমন ধানের ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগে উপজেলার তিনটি স্থানে এসব বীজতলা তৈরি করা হয়। এ বীজতলার চারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে। পানির ওপর তৈরি এসব বীজতলা দেখলে মনে হয় যেন পানিতে সবুজ গালিচা বিছানো হয়েছে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির বৃদ্ধি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলায় ২৬৪ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ২১০ হেক্টর জমির শাকসবজির আবাদ, ১৫ হেক্টর জমির পাট ও ৪৫ হেক্টর জমির আউশ আবাদ সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৮ হাজার ২৯৫। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১২ একর জমিতে কমিউনিটিভিত্তিক নাবি জাতের রোপা আমন ধানের বীজতলা ও ৩টি স্থানে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

পাকুরিয়া ইউনিয়নের বাদাতেঘরিয়া, তিরছা ও ধলা ইউনিয়নের ধলা গ্রামে ২৪টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানায়।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাদাতেঘরিয়া গ্রামের কৃষক মো. জাকারিয়া বিরিখালের পানিতে নাবি জাতের আমন ধানের আটটি ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছেন। বাঁশ ও কলার ভেলার ওপর কচুরিপানা দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে এসব বীজতলার বিছানা (বেড) তৈরি করা হয়েছে। উৎপন্ন বীজতলাগুলোর উচ্চতা ছয় থেকে সাত ইঞ্চি হয়েছে।

এ সময় কৃষক জাকারিয়া ভাসমান বীজতলা তৈরির পদ্ধতির কথা জানান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রথমে লম্বা করে কাটা পাঁচ-ছয়টি বাঁশ ও কলা গাছ দিয়ে ভেলা বানিয়েছেন। তারপর ভেলার ওপর কচুরিপানা দিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ রেখে দেন। এ সময় কচুরিপানায় ইউরিয়া ও পটাশমিশ্রিত সার দেওয়া হয়। কয়েক দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কচুরিপানা পচে যায়। এভাবে তৈরি হয় বিছানা বা বেড। তারপর সেই বেডের ওপর কাদামাটি ও গোবর সার দিয়ে বীজধান ছিটিয়ে দেওয়া হয়। বেড তৈরির এক মাসের মধ্যেই চারা উৎপন্ন হয়।

জাকারিয়া বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে বিনা মূল্যে সার-বীজ দেওয়া হয়েছে। তাঁর এ কাজে কৃষক আবদুল মমিন ও কিষানি ইসমত আরা সহযোগিতা করেছেন। সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছেন পাকুরিয়া ইউনিয়নের মমিনাকান্দা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহানা আক্তার।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহানা আক্তার বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে চারা বিতরণ করা হবে। তিনি জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা হলে বন্যায় কৃষকের কোনো ক্ষতি হবে না।