সবুজ পা পিউ

উড়ে চলেছে সবুজ পা পিউ বা কইতরে চ্যাগা l ছবি: মো. মারুফ রানা
উড়ে চলেছে সবুজ পা পিউ বা কইতরে চ্যাগা l ছবি: মো. মারুফ রানা

হোগলাবন আর নলখাগড়া ঝাড়ের ওপর দিয়ে তিরবেগে উড়ে এল পাখিটি, একেবারে সরলরেখা ধরে, কর্দমাক্ত জায়গাটার ওপরে এসে আচমকা দুপাখা উঁচিয়ে কড়া ব্রেক করল শূন্যে, তারপরে বলতে গেলে পাকা আমের মতো টুপুস করে পড়ল নিচের কর্দমাক্ত চরে। লম্বা ঠোঁটটি সামনে বাড়িয়ে পুঁতে দিল নরম কাদায়। এবার বলদে টানা লাঙলের হাল ধরে যেন কাদা চষতে চষতে এগিয়ে চলল। পাখিটি খাবার খুঁজছে।
পরিযায়ী পাখি এরা আমাদের দেশে। চারণক্ষেত্র নদীর পাড়–দ্বীপ–মোহনা–হাওর–বাঁওড়–চর থেকে শুরু করে ছোট ছোট বিল-জলাশয়। একাকীই ঘোরে ও চরে। ক্বচিৎ ছোট দলে দেখা যায়। তবে অন্য সমগোত্রীয় পাখিদের সঙ্গে মিলে বড় ঝাঁক তৈরি করতে পারে।
চঞ্চল-চতুর-বুদ্ধিমান এই পাখির নাম সবুজ পা পিউ। কইতরে চ্যাগা, সাদা চ্যাগা, গোতরা নামেও ব্যাপকভাবে পরিচিত। এরা চ্যাগা পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। লম্বা লম্বা পা দুখানার রং কালচে-সবুজ। লম্বা ঠোঁটটির রংও একই রকম। দ্রুতবেগে ওড়ে সরলরেখায়, ওড়ার সময় পা দুখানা টানটান হয়ে বেরিয়ে থাকে লেজের তলা দিয়ে। হাঁটতে-দৌড়াতে পারে অসম্ভব দ্রুত পায়ে, পিলপিল করে। বিপদের গন্ধ পেলে হাঁটু মুড়ে বসে যাবে মাটিতে।
আমাদের দেশে যখন আসে ওরা, তখন কপাল-ঘাড়-গলা-বুক-পেট এবং লেজের তলাসহ পিঠের নিম্নাংশ থাকে তুলোট–সাদা, পিঠ বাদামি-ধূসর। চোখের পাশটা বাদামি। লেজের উপরিভাগে আড়াআড়ি কালচে বাদামি ছোপ। আর যখন বাসা বাঁধে ও ডিম-ছানা তোলে, তখন সব কটির রং হয়ে ওঠে চকচকে। বাংলাদেশে তো আর বাসা করে না ওরা। তাই ওদের যৌবনের রংটা আমরা দেখতে পারি না। এরা ডিম পাড়ে চারটি। রং বালু-পাথর বা মাটি রঙা। ডিম ফোটে ২৪-২৫ দিনে।
মাটি থেকে উড়লেই দু-তিনটা ডাক দেবেই এরা। কণ্ঠটা সুরেলা-মিষ্টি ও ধাতব-মোলায়েম। ভয় পেলে বা উত্তেজিত হলে এরা ঘাড়-মাথা ওপর-নিচে দোলায়, লেজটিও দোলায় খঞ্জন পাখিদের মতো।
বাংলাদেশের জলাশয় বা বিলঝিলে এদের প্রচুর দেখা যায়। তবে পেশাদার জাল-ফাঁদ শিকারিদের হাতে শত শত পাখি ধরা পড়ে দেশের হাওর-বিলগুলোতে, বিক্রিও হয় ভালো দামে।
মূল খাদ্য কুচো চিংড়ি-ব্যাঙাচি-কাদার তলার সাদাটে সুতোপোকা-কেঁচো-পোকামাকড়-লার্ভা ইত্যাদি। পলাতক পোকামাকড়কে এরা পাখা ও লেজের আঘাতে পেড়ে ফেলতে ওস্তাদ।
ইংরেজি নাম Common Green Shank। বৈজ্ঞানিক নাম Triga nebularia। দৈর্ঘ্য ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার, ওজন ১৭০ গ্রাম।